বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগের সুবিধাভোগী
Published: 15th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সম্প্রতি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের জায়গা করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, এসব কমিটিতে সদস্য নবায়নের দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী লোকও রয়েছেন। রয়েছেন আওয়ামী লীগের সময়ে নানাভাবে সুবিধা পাওয়া নেতারা। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর সম্পত্তি দখল বিষয়েও তথ্য রয়েছে।
বিএনপির কয়েক নেতাকর্মীর ভাষ্য, বিতর্কিত নেতাদের কারণে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী নিয়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বাধার মুখে পড়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
বিএনপি সূত্র জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি ও শ্যামনগর পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছিলেন যথাক্রমে সোলাইমান কবির ও গোলাম আলম আলমগীর। পৌর কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছিলেন যথাক্রমে শেখ লিয়াকত আলী বাবু ও শামসুদ্দোহা টুটুল।
নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য তাসকিন আহমেদ চিশতীকে প্রধান করে ২৩ এপ্রিল সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক (উপজেলা) কমিটি গঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য ৪ মে সার্চ কমিটি গঠিত হয়।
উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সার্চ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন আবুল কাশেম। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্যের পক্ষে লাঠি হাতে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়ারাজ হোসেন বলেন, আবুল কাশেম সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হুদা রিপনের এজেন্ট ছিলেন।
এ বিষয়ে আবুল কাশেমের দাবি, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের মোড়লের নির্দেশে কিছু সময়ের জন্য কেন্দ্র পাহারায় বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এমন বক্তব্য বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে জাবের মোড়ল মারা গেছেন।
একই ইউনিয়নের সার্চ কমিটির সদস্য নুর ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর তিনি কৃষ্ণা রানী মণ্ডল নামে এক নারীর ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রদীপ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির জমি দখল করে তিনি পাকা ভবন তৈরি করেছেন। এমন বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে নুর ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বুধবার তিনি সমকালের কাছে দাবি করেন, ইতোমধ্যে অনেক বিষয় মীমাংসা হয়ে গেছে। প্রদীপ মণ্ডলের জমির বিষয়ও কিছুদিনের মধ্যে মীমাংসা করে নেবেন।
শ্যামনগর পৌরসভার বাদঘাটা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুর ইসলাম। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ-উজ জামানকে পাহারা দিয়ে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যান আমিনুর রহমান। এমনকি চেয়ারম্যানকে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসিয়ে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একই সঙ্গে তিনি (আমিনুর) আস্থা না হারাতে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকের প্রতিও আহ্বান জানান।
বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা নুর ইসলামের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমিনুরের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি জগলুল হায়দার ও তাঁর ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহুরুল হায়দারের ছায়াসঙ্গী। তাঁকেও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় দুঃসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর আমিনুর রহমানের দাবি, ‘আমি চেয়ারম্যানকে নিয়ে যাইনি। সেখানে একটা সালিশ চলছিল বলে সাবেক সেনাসদস্য রেজাউল ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ তিনি ফেসবুকে নিজে থেকে কোনো ছবি দেননি উল্লেখ করে বলেন, অন্য কেউ সেই ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছিল।
সবচেয়ে বড় অভিযোগটি শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের প্রথম ফরমটিই পূরণ করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিরোধিতার অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়মান কবির। তিনি বলেন, সরকার পতনের প্রাক্কালে ৩১ জুলাই উপজেলা পরিষদের হলরুমে ‘সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’র সভা হয়। এতে উপস্থিত হয়ে আব্দুল ওয়াহেদ ঘোষণা দেন, শ্যামনগরে আন্দোলনের প্রভাব পড়তে দেওয়া হবে না। সদস্য নবায়ন ও সার্চ কমিটিতে তাঁকে (ওয়াহেদ) জায়গা দেওয়ায় নেতাকর্মী হতাশ। এমন ধারা চলতে থাকলে বিএনপির রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আব্দুল ওয়াহেদ অবশ্য সমকালের কাছে দাবি করেন, ৩১ জুলাইয়ের সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন না। বরং অনেক আগে একটি সভায় উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ওই সভায় অংশগ্রহণের ছবি ও রেজুলেশনে থাকা সইয়ের উল্লেখ করলে আব্দুল ওয়াহেদ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এসব অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দলের শ্যামনগর উপজেলার সাংগঠনিক টিমের প্রধান তাসকিন আহমেদ চিশতীর মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল দিলেও ধরেননি। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর ও বেশি অভিযোগ ছিল, ইতোমধ্যে তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র চ কম ট ত ন র ইসল ম ব এনপ র স শ য মনগর ন ত কর ম আম ন র র র উপজ ল সদস য ন কম ট র আওয় ম গঠন ক আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ সড়কে যানবাহন চলাচলই কঠিন
নির্মাণের মাত্র দুই মাসের মাথায় সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট সংযোগ সড়কের একাংশ। সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। শুধু এটি নয়, উপজেলার নতুন-পুরোনো প্রায় ৩০টি সড়ক এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এসব সড়কের দ্রুত সংস্কার না হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কয়েকটি সড়ক যানবাহন ও জনচলাচলের অনুপযোগী হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের জন্য দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা তাওহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার নামারবাজার মহাসড়কের আন্ডারপাস সড়টি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। জমে থাকা পানির কারণে সড়কে চলাচলে কষ্ট পাচ্ছেন মানুষ।’
উপজেলার যেসব সড়ক খারাপ সেগুলো হলো–মীরের হাট দক্ষিণের সড়ক, মহালংকা সড়ক, ছোট দারোগারহাট রোড় পশ্চিমে ভান্ডারী সড়ক, মীরারহাট হামিদুল্লাহ সড়ক, জাফর নগর স্কুল সড়ক, ছলিমপুর আদুল্লাঘাটা সড়ক, ভাটিয়ারী তুলাতলী-ইমামনগর সংযোগ সড়ক, মির্জানগর ছোঁয়াখালি ঘাটগর সড়ক, কদমরসুল শিপইয়ার্ড সড়ক, সোনাইছড়ি কেশবপুর সফিউল্লাহ নিজামী বাড়ি সড়ক, রাবিয়া বানু শাখা সড়ক। সৈয়দপুর ও বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের কমর আলী কমরদহ সড়ক ভুঁইয়া হাট টু বেঁড়িবাধ, বাদল গাজী সড়ক, সিরাজ সড়ক পূর্ব বাগখালী, বুড়া ইস্কুল সড়ক, পূর্ব বাগখালী সড়ক, মহানগর সৈয়দ জসিম উদ্দিন সড়ক, শাহ মোহাম্মদ ভূঁইয়া সড়ক, কদর ভূঁইয়া সড়ক, দক্ষিণ বগাচতল সি রোড, দক্ষিণ বগাচতল সোনা মিয়া ভূঁইয়া সড়ক, তাকিয়াপাড়া সড়কের অবস্থাও বেহাল।
ভাটিয়ারী ইমামনগরের বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কয়েকশ বছরের পুরোনো মির্জানগর ছোঁয়াখালি ঘাট সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। এই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটারর অংশ চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, নবনির্মিত বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট সড়কে সাগরের বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় ৭০০ মিটার সড়কের ১০০ মিটার সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। কিছু অংশে ইট ও ব্লক সরে গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, সড়কের উপরিতল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি সংস্কার করা হয়েছে।
গত ২৪ মার্চ সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুই বিশেষ সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এর আগে সড়কটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উদ্বোধনের দুই মাসের মাথায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রবল জোয়ারে সংযোগ সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেটি এখন গাড়ি চলাচলে উপযোগী করা হয়েছে। সড়কের উপরিতলের ইট সরে গিয়ে কিছু অংশের মাটি সরে গেছে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পরিদর্শন করেছি। বর্ষায় প্রবল ঢেউ থেকে কিভাবে সড়কটি রক্ষা করা যায়, সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা ও পৌরসভার যেসব সড়ক সংষ্কারের অবস্থা খারাপ সেগুলো পযায়ক্রমে সংষ্কার করা হবে।’