Samakal:
2025-11-03@10:30:57 GMT

বিড়ালবান্ধব ক্যাফের গল্প

Published: 23rd, May 2025 GMT

বিড়ালবান্ধব ক্যাফের গল্প

বিড়াল। নামটি শুনলেই জ্বলজ্বলে চোখের নরম আদুরে একটি চেহারা ভেসে ওঠে। এই ছোট্ট প্রাণীটিকে দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। চুপচাপ গাঘেঁষে এসে বসছে কিংবা নিজের মতো দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াচ্ছে নিঃশব্দে। কিংবা চোখ ফেরালে দেখা যাচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই শরীর এলিয়ে ঘুমুচ্ছে। এ রকম আদুরে প্রাণী যান্ত্রিক জীবনে অনেকে পোষ্য হিসেবে রাখেন। নিজের একাকিত্বের সঙ্গী কিংবা ঠিক সন্তানের মতো করে। পড়ন্ত বিকেলে তাকে নিয়ে অনেকে হাঁটতেও বের হন। কিন্তু এ প্রাণীটিকে নিয়ে হঠাৎ করে কোনো রেস্টুরেন্টে ঢুকে আয়েশ করে এক কাপ কফিতে চুমুক দিতে দিতে অন্য বিড়ালদের সঙ্গে নিজের বিড়ালকে খেলতে দেখা কিংবা কফি খেতে খেতে বিড়ালদের সঙ্গে সময় কাটানোর উপায় কিছুদিন আগেও ঢাকায় ছিল না। এখন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেটপুজো, মনপুজো ও প্রাণী সেবা– এই তিনকে এক করে ধানমন্ডির ২৭-এর নাভানা মাশিরার প্রথম তলায় ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে দেশের প্রথম বিড়ালবান্ধব একটি ক্যাফে– ‘ক্যাপওচিনো ক্যাট ক্যাফে’। 
ফিরোজা, নীল, সাদার মতো প্রশান্তিময় রঙের মিশেলে তৈরি ইন্টেরিয়র সমৃদ্ধ ক্যাফেটিতে ঢুকলে মন ভরে যায়। সোফায় বসে পুরো ক্যাফেটিতে চোখ ঘোরালে একটি কাচ দিয়ে ঘেরা ঘরের দিকে তাকালে আদুরে প্রাণীগুলোর দেখা মেলে। তারা যে যার মতো নিজেদের কাজকর্ম করে যাচ্ছে। এ ক্যাফেতে থাকা বিড়ালগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব বিড়ালই উদ্ধার করে আনা হয়েছে এখানে। নির্বাক এ আদুরে প্রাণীগুলোর একেকটি ছিল মহাবিপদে। বিড়াল ও এই ক্যাফে সম্পর্কে মালিক রাহাত রহমান বলেন, ‘ক্যাফের উদ্যোগটা নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। 
আমার বাসায় অনেক বিড়াল। তাই আমি ভেবেছিলাম, এমন একটা জায়গা তৈরি করার, যেখানে বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটানো ও আদর করার পাশাপাশি কফিও খাওয়া যাবে। এ চিন্তা থেকে মিরপুরে আমার বাসার নিচে ক্যাফেটি শুরু করি। সেই থেকে আমাদের পথচলা শুরু। 
দেশের বাইরে এ ধরনের পেট ক্যাফেতে বিড়ালের পাশে বসে মানুষ রেস্তোরাঁয় খাবার খান। আমাদের দেশের পরিবেশ ও মানসিকতার কথা চিন্তা করে আমরা সম্পূর্ণ আলাদা দুটো জোন তৈরি করি এক ছাদের নিচে। তবে অনলাইনে অনেক প্রশ্ন পাই, খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে কিনা কিংবা বিড়ালের লোমের বিষয়টি। যারা সরাসরি আসেন আমাদের ক্যাফেতে, তারা এসে সম্পূর্ণ পরিবেশ দেখে আশ্বস্ত হন। হাইজিনের ব্যাপারে আমরা কঠোর সচেতনতা অবলম্বন করি। প্রতি সপ্তাহে বিড়ালদের চেকআপ করেন ডাক্তার।’
ক্যাফের আয় থেকে বড় একটা অংশ ব্যয় হয় বাইরের প্রাণীদের বিভিন্ন সেবা-শুশ্রূষার পেছনে; যা আমাদের মার্কেটিংয়ের আওতায় রাখি না কখনোই। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি ক্লিনিক, স্যালুনসহ নানা কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। রাস্তার কুকুর, বিড়ালদের এক টুকরো বিস্কুট কিংবা পাউরুটি খেতে দিলে তারা যিনি দিচ্ছেন তার জন্য জীবনও দিতে পারে। এ অবলা প্রাণীদের প্রতি রাস্তায় কিংবা ঘরে অত্যাচার কাম্য নয় বলে জানান রাহাত।
ক্যাফেটিতে বর্তমানে রয়েছে ২০টি বিড়াল। যেগুলোর সবই উদ্ধার করা বিড়াল। ২০১৮ সালে মিরপুর থেকে রাহাতের উদ্ধার করা দুটি বিড়াল চার্লি ও পান্ডার সঙ্গে যাত্রা শুরু হয় ক্যাফেটির। কিছুদিন আগে চার্লির মৃত্যু হয়। বেশ কিছুদিন আগে ইনফ্লুয়েন্সার সুনেরাহ’র উদ্ধার করা এক চোখ অন্ধ একটি বিড়ালকে নিজেদের ক্যাফেতে ঠাঁই দেন তারা। বিড়ালগুলোর নামও সুন্দর। এখন ক্যাফেতে রয়েছে– পান্ডা, রাইজেন, ব্যাটম্যান, ক্লাউস, লুনা, জিগি, ডিম, চার্লি জুনিয়র, মুডি, কাইলি, নোবিতা, নিনি, তারাসহ অনেক আদুরে বিড়াল। 
এ ক্যাফের প্রতিটি বিড়ালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একেকটি গল্প। ক্যাফেটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে কাচ দিয়ে ঘেরা বিড়ালদের ঘর। অন্যদিকে সম্পূর্ণ আলাদা রেস্তোরাঁ। বিড়ালদের ঘরে শুধু কফি ও ড্রিংকস, সেটিও ঢাকনাসহ নিয়ে ঢোকা যায় ২০০ টাকা প্রবেশমূল্যের মাধ্যমে। যে টাকার সম্পূর্ণ অর্থই ব্যয় হয় বিড়ালদের বিভিন্ন পরিচর্যার পেছনে। কোনো নতুন বিড়াল ক্যাফেতে আনার আগে বিভিন্ন পরিচর্যা শেষে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এ ক্যাফের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, স্লট খালি থাকার ওপর নির্ভর করে উদ্ধার করা বিড়াল এনে রাখা যায় এবং যে কেউ সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারবেন– এই ভিত্তিতে বিড়াল দত্তকও নিতে পারেন। 
দুপুর ১২টায় খুলে যায় এই প্রশান্তিময় স্থানের দরজা, বন্ধ হয় রাত ১১টায়। সপ্তাহে সাত দিন। 
ঢাকায় প্রাণীবান্ধব এ রকম রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যান্ত্রিকজীবনে একাকিত্ব দূরীকরণ ও যান্ত্রিকতার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে মুক্তি মেলার জন্যও অনেকে এ ক্যাফেগুলোয় যান। বাসায় ১২টি বিড়াল পালেন আয়েশা। মধ্যবয়স্ক চাকরিজীবী এ নারী বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যে এসব ক্যাট ক্যাফেতে যাই। আমার ভালো লাগে। কেননা, বিড়াল একটা শান্তির নাম। কোনো ধরনের অভিযোগ নেই, কিছুটা সময় কাটালে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকার মতো জায়গায় চলতি পথে কিছু খাওয়ার জন্য কোথাও ঢুকে যদি মনের মতো প্রাণীদের দেখি পাশে মুখ উঁচিয়ে বসে আছে, তাহলে মনটা আরও ভরে যায়।’
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পোষা বিড়ালের সান্নিধ্যে থাকলে মানুষের কর্টিসল লেভেল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানসিক উদ্বেগ প্রশমনে সাহায্য করে। 
ঢাকার বনানী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশানেও রয়েছে ক্যাট ক্যাফে। যেখানে এ রকম বিড়ালের সঙ্গে বসে বসে কফির স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। কিছু উদ্যোক্তার নিছক শখ থেকে এই ক্যাট ক্যাফে শুরু হলেও করোনা-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে বিড়ালের মতো প্রশান্তিময় প্রাণীর চাহিদা বাড়তে থাকে; যা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লাইফস্টাইল হয়ে উঠেছে। 
ঢাকায় বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ১৫টির বেশি রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে, যাদের থিম গড়ে উঠেছে বিড়ালকেন্দ্রিক। এর মধ্যে ৭টি পুরোপুরি ক্যাট-ক্যাফে ও বাকি ৮টি রেস্টুরেন্ট পোষা বিড়ালদের বসবাসের সুযোগ সমৃদ্ধ। 
মূলত বিড়াল শান্ত ও পরিচ্ছন্ন প্রাণী। যে কোনো ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে এরা পরিবেশ নষ্ট না করে অতিথির সঙ্গে এক ধরনের মানসিক সংযোগ তৈরি করে। যেটি কিনা প্রশান্তি দেয় অতিথিদের। 
ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো এখন শুধু গিয়ে খাবার খেয়ে চলে আসার জায়গা নয়; বরং তা হয়ে উঠেছে থেরাপি স্পেস ও প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানের মডেল। 
এ বিড়ালকেন্দ্রিক ক্যাফের বিবর্তন শুধু একটি ট্রেন্ড নয়। এটি মানুষ ও প্রাণীর অদ্ভুত সুন্দর এক সম্মিলন। এখানে কফির কাপের পাশে বিড়ালের মিউমিউ ডাক ও নরম গাঘেঁষে বসা যেন আলাদা তৃপ্তি দেয় আত্মাকে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র ব ড় লক

এছাড়াও পড়ুন:

এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি। 

ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন,  তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’

কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”

লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”

২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।

দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।” 

তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগের ভোটের সবাই বাদ, ‘যোগ্য’ নতুন ডিসি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত