Samakal:
2025-07-12@01:41:32 GMT

বিড়ালবান্ধব ক্যাফের গল্প

Published: 23rd, May 2025 GMT

বিড়ালবান্ধব ক্যাফের গল্প

বিড়াল। নামটি শুনলেই জ্বলজ্বলে চোখের নরম আদুরে একটি চেহারা ভেসে ওঠে। এই ছোট্ট প্রাণীটিকে দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। চুপচাপ গাঘেঁষে এসে বসছে কিংবা নিজের মতো দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াচ্ছে নিঃশব্দে। কিংবা চোখ ফেরালে দেখা যাচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই শরীর এলিয়ে ঘুমুচ্ছে। এ রকম আদুরে প্রাণী যান্ত্রিক জীবনে অনেকে পোষ্য হিসেবে রাখেন। নিজের একাকিত্বের সঙ্গী কিংবা ঠিক সন্তানের মতো করে। পড়ন্ত বিকেলে তাকে নিয়ে অনেকে হাঁটতেও বের হন। কিন্তু এ প্রাণীটিকে নিয়ে হঠাৎ করে কোনো রেস্টুরেন্টে ঢুকে আয়েশ করে এক কাপ কফিতে চুমুক দিতে দিতে অন্য বিড়ালদের সঙ্গে নিজের বিড়ালকে খেলতে দেখা কিংবা কফি খেতে খেতে বিড়ালদের সঙ্গে সময় কাটানোর উপায় কিছুদিন আগেও ঢাকায় ছিল না। এখন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেটপুজো, মনপুজো ও প্রাণী সেবা– এই তিনকে এক করে ধানমন্ডির ২৭-এর নাভানা মাশিরার প্রথম তলায় ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে দেশের প্রথম বিড়ালবান্ধব একটি ক্যাফে– ‘ক্যাপওচিনো ক্যাট ক্যাফে’। 
ফিরোজা, নীল, সাদার মতো প্রশান্তিময় রঙের মিশেলে তৈরি ইন্টেরিয়র সমৃদ্ধ ক্যাফেটিতে ঢুকলে মন ভরে যায়। সোফায় বসে পুরো ক্যাফেটিতে চোখ ঘোরালে একটি কাচ দিয়ে ঘেরা ঘরের দিকে তাকালে আদুরে প্রাণীগুলোর দেখা মেলে। তারা যে যার মতো নিজেদের কাজকর্ম করে যাচ্ছে। এ ক্যাফেতে থাকা বিড়ালগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব বিড়ালই উদ্ধার করে আনা হয়েছে এখানে। নির্বাক এ আদুরে প্রাণীগুলোর একেকটি ছিল মহাবিপদে। বিড়াল ও এই ক্যাফে সম্পর্কে মালিক রাহাত রহমান বলেন, ‘ক্যাফের উদ্যোগটা নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। 
আমার বাসায় অনেক বিড়াল। তাই আমি ভেবেছিলাম, এমন একটা জায়গা তৈরি করার, যেখানে বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটানো ও আদর করার পাশাপাশি কফিও খাওয়া যাবে। এ চিন্তা থেকে মিরপুরে আমার বাসার নিচে ক্যাফেটি শুরু করি। সেই থেকে আমাদের পথচলা শুরু। 
দেশের বাইরে এ ধরনের পেট ক্যাফেতে বিড়ালের পাশে বসে মানুষ রেস্তোরাঁয় খাবার খান। আমাদের দেশের পরিবেশ ও মানসিকতার কথা চিন্তা করে আমরা সম্পূর্ণ আলাদা দুটো জোন তৈরি করি এক ছাদের নিচে। তবে অনলাইনে অনেক প্রশ্ন পাই, খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে কিনা কিংবা বিড়ালের লোমের বিষয়টি। যারা সরাসরি আসেন আমাদের ক্যাফেতে, তারা এসে সম্পূর্ণ পরিবেশ দেখে আশ্বস্ত হন। হাইজিনের ব্যাপারে আমরা কঠোর সচেতনতা অবলম্বন করি। প্রতি সপ্তাহে বিড়ালদের চেকআপ করেন ডাক্তার।’
ক্যাফের আয় থেকে বড় একটা অংশ ব্যয় হয় বাইরের প্রাণীদের বিভিন্ন সেবা-শুশ্রূষার পেছনে; যা আমাদের মার্কেটিংয়ের আওতায় রাখি না কখনোই। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি ক্লিনিক, স্যালুনসহ নানা কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। রাস্তার কুকুর, বিড়ালদের এক টুকরো বিস্কুট কিংবা পাউরুটি খেতে দিলে তারা যিনি দিচ্ছেন তার জন্য জীবনও দিতে পারে। এ অবলা প্রাণীদের প্রতি রাস্তায় কিংবা ঘরে অত্যাচার কাম্য নয় বলে জানান রাহাত।
ক্যাফেটিতে বর্তমানে রয়েছে ২০টি বিড়াল। যেগুলোর সবই উদ্ধার করা বিড়াল। ২০১৮ সালে মিরপুর থেকে রাহাতের উদ্ধার করা দুটি বিড়াল চার্লি ও পান্ডার সঙ্গে যাত্রা শুরু হয় ক্যাফেটির। কিছুদিন আগে চার্লির মৃত্যু হয়। বেশ কিছুদিন আগে ইনফ্লুয়েন্সার সুনেরাহ’র উদ্ধার করা এক চোখ অন্ধ একটি বিড়ালকে নিজেদের ক্যাফেতে ঠাঁই দেন তারা। বিড়ালগুলোর নামও সুন্দর। এখন ক্যাফেতে রয়েছে– পান্ডা, রাইজেন, ব্যাটম্যান, ক্লাউস, লুনা, জিগি, ডিম, চার্লি জুনিয়র, মুডি, কাইলি, নোবিতা, নিনি, তারাসহ অনেক আদুরে বিড়াল। 
এ ক্যাফের প্রতিটি বিড়ালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একেকটি গল্প। ক্যাফেটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে কাচ দিয়ে ঘেরা বিড়ালদের ঘর। অন্যদিকে সম্পূর্ণ আলাদা রেস্তোরাঁ। বিড়ালদের ঘরে শুধু কফি ও ড্রিংকস, সেটিও ঢাকনাসহ নিয়ে ঢোকা যায় ২০০ টাকা প্রবেশমূল্যের মাধ্যমে। যে টাকার সম্পূর্ণ অর্থই ব্যয় হয় বিড়ালদের বিভিন্ন পরিচর্যার পেছনে। কোনো নতুন বিড়াল ক্যাফেতে আনার আগে বিভিন্ন পরিচর্যা শেষে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এ ক্যাফের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, স্লট খালি থাকার ওপর নির্ভর করে উদ্ধার করা বিড়াল এনে রাখা যায় এবং যে কেউ সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারবেন– এই ভিত্তিতে বিড়াল দত্তকও নিতে পারেন। 
দুপুর ১২টায় খুলে যায় এই প্রশান্তিময় স্থানের দরজা, বন্ধ হয় রাত ১১টায়। সপ্তাহে সাত দিন। 
ঢাকায় প্রাণীবান্ধব এ রকম রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যান্ত্রিকজীবনে একাকিত্ব দূরীকরণ ও যান্ত্রিকতার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে মুক্তি মেলার জন্যও অনেকে এ ক্যাফেগুলোয় যান। বাসায় ১২টি বিড়াল পালেন আয়েশা। মধ্যবয়স্ক চাকরিজীবী এ নারী বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যে এসব ক্যাট ক্যাফেতে যাই। আমার ভালো লাগে। কেননা, বিড়াল একটা শান্তির নাম। কোনো ধরনের অভিযোগ নেই, কিছুটা সময় কাটালে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকার মতো জায়গায় চলতি পথে কিছু খাওয়ার জন্য কোথাও ঢুকে যদি মনের মতো প্রাণীদের দেখি পাশে মুখ উঁচিয়ে বসে আছে, তাহলে মনটা আরও ভরে যায়।’
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পোষা বিড়ালের সান্নিধ্যে থাকলে মানুষের কর্টিসল লেভেল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানসিক উদ্বেগ প্রশমনে সাহায্য করে। 
ঢাকার বনানী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশানেও রয়েছে ক্যাট ক্যাফে। যেখানে এ রকম বিড়ালের সঙ্গে বসে বসে কফির স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। কিছু উদ্যোক্তার নিছক শখ থেকে এই ক্যাট ক্যাফে শুরু হলেও করোনা-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে বিড়ালের মতো প্রশান্তিময় প্রাণীর চাহিদা বাড়তে থাকে; যা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লাইফস্টাইল হয়ে উঠেছে। 
ঢাকায় বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ১৫টির বেশি রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে, যাদের থিম গড়ে উঠেছে বিড়ালকেন্দ্রিক। এর মধ্যে ৭টি পুরোপুরি ক্যাট-ক্যাফে ও বাকি ৮টি রেস্টুরেন্ট পোষা বিড়ালদের বসবাসের সুযোগ সমৃদ্ধ। 
মূলত বিড়াল শান্ত ও পরিচ্ছন্ন প্রাণী। যে কোনো ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে এরা পরিবেশ নষ্ট না করে অতিথির সঙ্গে এক ধরনের মানসিক সংযোগ তৈরি করে। যেটি কিনা প্রশান্তি দেয় অতিথিদের। 
ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো এখন শুধু গিয়ে খাবার খেয়ে চলে আসার জায়গা নয়; বরং তা হয়ে উঠেছে থেরাপি স্পেস ও প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানের মডেল। 
এ বিড়ালকেন্দ্রিক ক্যাফের বিবর্তন শুধু একটি ট্রেন্ড নয়। এটি মানুষ ও প্রাণীর অদ্ভুত সুন্দর এক সম্মিলন। এখানে কফির কাপের পাশে বিড়ালের মিউমিউ ডাক ও নরম গাঘেঁষে বসা যেন আলাদা তৃপ্তি দেয় আত্মাকে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র ব ড় লক

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক আরোপের সময়সীমা পেছালেন ট্রাম্প, তারপরও কেন স্বস্তি নেই

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত তথাকথিত পাল্টা শুল্ক আজ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই হবে। তা না হলে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে। কিন্তু বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন সময়সীমা ১ আগস্ট।

এ বিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারেরা নতুন চুক্তির জন্য কিছুটা বাড়তি সময় পাচ্ছেন ঠিক, কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। মূলধারার অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ বরাবরই শুল্কের বিরুদ্ধে। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, শুল্ক আরোপকারী দেশই শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়ে এবং ভোক্তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

অবশ্য ট্রাম্পের আগের আরোপিত শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি সেভাবে বাড়েনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে যায়নি, চাকরিও কমেনি—অন্তত এখন পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্র্রী স্কট বেসেন্ট মজা করে বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়টি দৃশ্যমান নয়, বিষয়টি অনেকটা সেই কুকুরের মতো, যে ঘেউ ঘেউ করছে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানে এর প্রভাব পড়তে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। বছরের শেষ দিকে এসে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে।

শুল্ক হচ্ছে আমদানি পণ্যের ওপর কর, যে কারণে সরাসরি উৎপাদন খরচ ও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির অর্ধেকের বেশি হলো মধ্যবর্তী পণ্য, মূল পণ্য তৈরিতে যা ব্যবহৃত হয়।

ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতিবিদ ডগ আরউইন বলেন, বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কোনো গাড়ি আসলে বিভিন্ন দেশের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। তিনি জানান, এসব উপকরণে শুল্ক আরোপ মানে খরচ বৃদ্ধি। যে ভার শেষমেশ ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।

এটাই ঘটেছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। ২০১৮ সালে ২৮৩ বিলিয়ন বা ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের আমদানিতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, এ শুল্কের প্রভাব স্থানীয় বাজারে পণ্যের দামে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলেন, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার তুলনামূলকভাবে কম থাকায় আমদানি পণ্য সস্তা ছিল। ফলে ২০০১ সাল থেকে আমদানি পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি, কিন্তু সেবার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যমূল্য কিছুটা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেও ধারণা।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব

শুল্ক আরোপ শুধু দামের ওপর নয়, দেশের মোট উৎপাদনেও (জিডিপি) নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০২০ সালে ১৫১টি দেশের ১৯৬৩-২০১৪ কালপর্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, এ শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে যায়।

শুল্ক কম থাকলে যেটা হয়, সেটা হলো যেসব পণ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা আছে, দেশগুলো সাধারণত সেসব পণ্য উৎপাদনে জোর দেয়। কিন্তু শুল্ক বাড়লে শ্রমশক্তি ততটা দক্ষভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয় নয়।

শুল্কনীতির আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো এতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অসংলগ্নতা। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ করনীতির ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইনডিপেনডেন্ট বিজনেসের এক জরিপে দেখা গেছে, অনিশ্চয়তার ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর পুঁজি বিনিয়োগ পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পরিস্থিতি বোঝাতে তারা এ উপমা ব্যবহার করেছে, ‘কুয়াশার মধ্যে জাহাজ চালানো কঠিন।’

চাকরিতেও ক্ষতি

অবাক করার মতো হলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শুল্ক আরোপে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিবর্তে বেকারত্ব কিছুটা বাড়ে। ডার্টমাউথের ডগ আরউইনের মতে, ২০১৮ সালের ইস্পাত শুল্কে কর্মসংস্থান কমে গেছে। কারণ, স্টিলশিল্পে যেসংখ্যক লোক কাজ করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ কাজ করেন স্টিলনির্ভর বিভিন্ন খাতে।

২০১৮-১৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের এক গবেষণায় দেখা যায়, এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে, কর্মসংস্থান কমে। প্রতিশোধমূলক শুল্কের (যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর) কারণে ক্ষতি বৃদ্ধি হয়।

শুল্ক আরোপের জবাবে প্রতিপক্ষ দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়। ফলে ওই সব দেশের ক্রেতাদের কাছে সে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তখন চাহিদা কমে। এ বছর ট্রাম্প যখন নতুন শুল্কের ঘোষণা দেন, তখনই চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে অস্থায়ী সমঝোতায় আসে।

অর্থনীতিবিদেরা স্বীকার করেন, মুক্ত বাণিজ্য যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, তেমনি এর কিছু মূল্যও দিতে হয়। যেমন বিদেশি প্রতিযোগিতার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারান। বিষয়টি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মতো—সারা বিশ্বেই উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানের হার কমছে।

তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ‘ন্যায়সংগত রূপান্তরের’ ধারণা কাজে আসতে পারে, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পের শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন খাতে স্থানান্তর করা যায়।

মহামারির সময় সরবরাহ–শৃঙ্খল ভেঙে পড়ায় অনেক দেশ নিজস্ব উৎপাদনশীলতায় নির্ভর করার নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলেন, সে লক্ষ্যেও শুল্ক নয়; বরং নির্দিষ্ট খাতে প্রণোদনা বা ভর্তুকি কার্যকর পন্থা হতে পারে।

মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গানের ডেভিড কেলি মনে করিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুধু মুনাফার বিষয় নয়, এটি যুদ্ধ ও সংঘাত এড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশগুলোর একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর হলে দ্বন্দ্ব–সংঘাতে তাদের ক্ষতির ঝুঁকিও কম থাকে। ফলে যুদ্ধ এড়ানোর প্রবণতা বাড়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেই মেয়েরাই এখন গোলে ভাসাচ্ছেন প্রতিপক্ষকে
  • মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
  • এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা সাময়িক বরখাস্ত
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব তানজিনা রইস বরখাস্ত
  • ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রত্ব না থাকা শিক্ষার্থীরা
  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান
  • গেমসে পদকের আশায় সাঁতারে পাঁচ লাখ টাকার কোচ
  • শুল্ক আরোপের সময়সীমা পেছালেন ট্রাম্প, তারপরও কেন স্বস্তি নেই