দুই কিশোর খুঁজে পেল ৬৬ বছরের পুরোনো প্রেমপত্রভর্তি বোতল
Published: 26th, May 2025 GMT
পোল্যান্ডের গদান্স্ক শহরের কাছে একটি সমুদ্রসৈকতের ধার দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ১০ বছর বয়সী দুই কিশোর একটি পুরোনো বোতল খুঁজে পায়। সেই বোতলের ভেতর পাওয়া গেল একটি চমকপ্রদ জিনিস, একটি হাতে লেখা প্রেমপত্র। অবাক করা বিষয় হলো, চিঠিটি লেখা হয়েছে ৬৬ বছর আগে।
স্টোগি সৈকতের কাছে হাঁটার সময় বোতলটি খুঁজে পায় এরিক ও কুবা। দুই কিশোর জানায়, গদান্স্কের স্টোগি সৈকতের কাছাকাছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দুর্গগুলো ঘুরে দেখছিল তারা। তখনই তাদের চোখ পড়ে একটি পুরোনো বোতলের ওপর। বোতলের ভেতরে রাখা একটি কাগজ দেখে তাদের মনে কৌতূহল তৈরি হয়। পরে তারা সেটি হাতে নিয়ে খুলে দেখতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
বোতল খুলে দেখা গেল, এতে থাকা কাগজটি মূলত একটি প্রেমপত্র। হাতে লেখা বিবর্ণ চিঠিটি ১৯৫৯ সালে ‘রিশিয়া’ নামের এক মেয়ে লিখেছেন। এটি লেখা হয়েছে ‘বান্নি’ নামের এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে। লেখিকা চিঠিতে স্কুলজীবনের একাকিত্ব আর প্রাপকের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতির কথা উল্লেখ করেছেন।
ওই চিঠি থেকে জানা যায়, রিশিয়া পোল্যান্ডের তরনুভ শহরের একটি স্কুলে পড়তেন। শহরটি গদান্স্ক থেকে প্রায় ৪২০ মাইল দূরে অবস্থিত। সেখানে পড়ার সময় তিনি একাকিত্বে ভুগছিলেন।
চিঠিতে রিশিয়া লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে আশ্বস্ত করছি যে আমি শান্ত ও বিনয়ী। আমি কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করি না। পুরুষদের এড়িয়ে চলি।’
এরপরই চিঠিতে রিশিয়া জানিয়েছেন তাঁর গভীর আবেগের কথা, যা তিনি বান্নির জন্য অনুভব করতেন।
এরিক ও কুবা চিঠির লেখিকাকে খুঁজে বের করার জন্য এরই মধ্যে তরনুভ শহরের একটি জাদুঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা রিশিয়ার পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত করে সম্ভব হলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন