তিনটি মসজিদ ভ্রমণ করলে ফজিলত পাওয়া যায়। এর প্রথমটি হলো মক্কা মুকাররমা বা কাবা শরিফ (সৌদি আরব), দ্বিতীয়টি মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস—ইসলামের প্রথম কিবলা মসজিদ (ফিলিস্তিন), তৃতীয়টি মদিনা আল মুনাওয়ারার মসজিদে নববি। মদিনা নবী করিম (সা.)-এর শহর, একে আরবিতে বলা হয় মদিনাতুন নবী। আর মদিনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববি’। রাসুলুল্লাহ (সা.

) মদিনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন এবং একে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ায় ফজিলত বেশি।

মসজিদে নববিতে নামাজ
আদায় ও দোয়া করার উদ্দেশ্যে মদিনায় গমন এবং সালাত আদায় করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা ও সালাম পৌঁছানোর ইচ্ছা থাকে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের। জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মদিনায় যাওয়া সুন্নত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়।

মসজিদে নববিতে নারীদের জন্য নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা আছে। ভেতরে কিছু দূর পরপর কোরআন শরিফ রাখা আছে। আর পাশে আছে জমজমের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। এখানে জিয়ারতের জন্য ইহরাম করতে বা তালবিয়া পড়তে হয় না। তবে মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসতে হয়, তাহলে মিকাত আবিয়ারে আলী পার হলে ইহরাম করে আসতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন এবং একে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন।আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রথম আলোর হজ গাইড১০ মে ২০২৫

রিয়াজুল জান্নাহ

হুজরায়ে মোবারক ও মিম্বার শরিফের পাশের জায়গাটি ‘রওজায়ে জান্নাত’ বা ‘রিয়াজুল জান্নাহ’ বা ‘বেহেশতের বাগান’ নামে পরিচিত। স্থানটির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তৈরি করা মসজিদে খেজুরগাছের খুঁটিগুলোর স্থলে ওসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা। প্রথম কাতারে চারটি স্তম্ভ লাল পাথরের এবং এগুলোকে পার্থক্য করার সুবিধার জন্য সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে। মসজিদে নববির ভেতরে কয়েকটি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুঁটি বলা হয়। রিয়াজুল জান্নাহতে প্রবেশের জন্য নুসুক অ্যাপে নিবন্ধন করতে হয়। নারীদের প্রবেশের সময়সূচি: সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা, বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা, রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত।

জান্নাতুল বাকি

মসজিদে নববির পাশেই বাকিউল গরকাদ (জান্নাতুল বাকি) কবরস্থান। এখানে হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত ওসমান (রা.)–সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। এর এক পাশে নতুন নতুন কবর হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

ওহুদ যুদ্ধের ময়দান

ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধ এটি। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, দুই মাথার মাঝখানে একটু নিচু—এটাই ওহুদের পাহাড়। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

মসজিদে কুবা

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় আগমন করে প্রথম শহরের প্রবেশদ্বারে কুবা নামক স্থানে নামাজ পড়েন। পরে এখানে মসজিদ গড়ে ওঠে।

কিবলাতাইন মসজিদ

এই মসজিদে একই নামাজ দুই কিবলামুখী হয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। 

এ ছাড়া মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইন, ওহুদ পাহাড়, খন্দকের পাহাড় প্রভৃতি দেখার জন্য মসজিদে নববির বাইরে প্রবেশপথের কাছে ট্যাক্সিচালকেরা প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন। খরচ ১০–২০ রিয়াল।

আরও পড়ুনমক্কা-মদিনা এখন বিশ্বমানবের শহর৩১ জুলাই ২০১৮

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন মদ ন র র জন য স তম ভ প রব শ মসজ দ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

৭ জুন কোরবানির ঈদ

দেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গে‌ছে। ফলে ২৯ মে বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র জিলহজ মাস গণনা করা হবে। এ অনুযায়ী শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে।

বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সকল জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:

জিলহজের চাঁদ উঠেছে, ৭ জুন ঈদুল আজহা

আশির দশকের পশুপাখি

সভায় অন্যান্যের মধ্যে তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ নিজামূল কবীর, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আঃ আউয়াল হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোঃ আয়াতুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মোঃ নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের উপ-সচিব শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ নূরুল করিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি লোকমান হোসেন, চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ ফারুক, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক, জমিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার সহকারী অধ্যক্ষ আব্দুল গাফফার। 

প‌বিত্র ঈদুল আজহা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ দিনটির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য।

ঈদুল আজহার আরেক নাম কোরবানির ঈদ। অনেক জায়গায় এই ঈদ বকরি ঈদ নামেও পরিচিত। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত ঈদুল আজহা হাজির হয় কোরবানির বিশেষ বার্তা নিয়ে।

এই দিনে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রিয়পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহ তাআলার নামে স্বপ্নে জবাই করতে দেখেন। তাদের অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান পুণ্যময় ত্যাগের দৃষ্টান্ত দেখে আল্লাহ তাআলা পুত্র কোরবানির পরিবর্তে বাহ্যিকভাবে পশু কোরবানির আদেশ দেন।

পুণ্যময় এই দিনটিকে স্মরণ করেই তাই সব ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর নামে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির এই ঈদে পশু কোরবানি হলো ইবরাহিম (আ.)-এর অনুসরণে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি তার উম্মতের সমর্থ ব্যক্তিদের জন্য আবশ্যক করেছেন। এটি পালনের মধ্য দিয়ে মুসলিমরা তাদের খোদাভিরুতা জানান দেন।

এই দিনটি মুসলমানদের মাঝে যে বার্তা পৌঁছে দেয়, তা হলো আল্লাহর প্রতি হজরত ইবরাহিমের (আ.) অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান পুণ্যময় ত্যাগ।

দিনটি আরো শিক্ষা দেয় মানুষের কুপ্রবৃত্তি হিংসা-বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার, কপটতা, পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা দূর করার। নিজের সব পশু-প্রবৃত্তিকে কোরবানি করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার ত্যাগের শিক্ষা দেয় এই কোরবানির ঈদ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৭ জুন কোরবানির ঈদ
  • ঈদুল আজহা ক‌বে, জানা যা‌বে সন্ধ‌্যায়
  • মানব পাচারে জড়িত অভিযোগে ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩
  • একটি জানালার শাশ্বত স্মৃতি