চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্ট থাকতেও বরগুনার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন অফিসের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা। অথচ থেরাপি দেওয়ার কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটও নাই তার। 

অভিযোগ রয়েছে, তার ভুল চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধরা। এমনকি থেরাপির নামে নারীদের যৌন হয়রানির দৃশ্যও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।

বরগুনা সদরের লাকুরতলা এলাকার ফাতিমা আক্তার ফিহা। জন্ম থেকেই শারীরিক সমস্যা থাকায় ফিহাকে ৬ মাস বয়স থেকে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপির জন্য নিয়ে আসেন স্বজনরা।

ফাতিমার বয়স এখন এক বছর। অর্থাৎ ৬ গত মাস ধরে তাকে চিকিৎসক পরিচয়ে থেরাপি দিয়ে আসছেন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সঞ্জয় মিস্ত্রি।

ফাতিহার দাদী রাজিয়া বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, “নাতনী নিয়ে আসার পর দেখি সঞ্জয় বাবু সব শিশুদের থেরাপি দিচ্ছেন। আমি তো তখন শুনেছি তিনিই চিকিৎসক, নিজেই থেরাপি দেন। আমার নাতনীকেও ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে থেরাপি দিচ্ছেন তিনি। তেমন কোন উন্নতি হয়নি ফাতিহার। উনি যে চিকিৎসক নন, এটা আমি জানতাম না। কারণ উনি চিকিৎসক পরিচয়েই থেরাপি দেন। অফিসের সবাই উনাকে স্যার বলে ডাকে, সেজন্য আমি ভেবেছি উনিই সবার থেকে বড় ডাক্তার।”

শুধু শিশু নয়, কোন ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অসংখ্য শিশু থেকে বৃদ্ধকে থেরাপি দিচ্ছেন তিনি। প্রশাসনিক কাজ করার কথা থাকলেও থেরাপির প্রতিই আগ্রহ বেশি সঞ্জয় মিস্ত্রির।

সেবা নিতে আসা আবুল কালাম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, “সঞ্জয় মিস্ত্রি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয়ে থেরাপি দেন। আমিও আসার পর থেকে এটাই জানতাম যে তিনি চিকিৎসক। এটা তো অনেক বড় ধরনের প্রতারণা।”

এই প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে অনৈতিকভাবে নারী রোগীদের সঞ্জয় মিস্ত্রির ফিজিওথেরাপি দেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। নারীদের শরীরের উপরে ওঠে অশ্লীল ভঙ্গিতে থেরাপি প্রদান করেন সঞ্জয় মিস্ত্রি। এমন একাধিক চিত্র ধারণ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, দিনের বেলায় এভাবে থেরাপি দিয়ে রাতেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সঞ্জয় মিস্ত্রি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও মালামাল ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থেরাপি দিচেছন শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের।

বরগুনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, “শহরের মানুষের চোখে ধূলা দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং বাণিজ্য করে আসছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সঞ্জয় মিস্ত্রি। তার কোন ধরনের থেরাপি দেওয়ার প্রশিক্ষণ নাই। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় মানুষ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন তিনি। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে ভোগান্তির শিকার সচেতন মানুষরা। তদন্ত শুরু হয়েছে কিন্তু দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি।”

প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা.

রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও তিনি থেরাপি দেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। তিনি অফিস প্রধান। আমি তাকে অনুরোধ করেছি এমন কাজ না করতে, তিনি আমার কথা শোনেননি। তার ভুল থেরাপিতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই দায়ভার তার।”

এই সেবা কেন্দ্রের অপর চিকিৎসক ডা. দিলরুবা আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, “সঞ্জয় মিস্ত্রি প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা এবং এই অফিসের প্রধান। আমরা কোন ভুল করলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে, আমাদের কিছু করার নেই। অপচিকিৎসায় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, একাধিকবার নিষেধ করলেও থেরাপি দেওয়া বন্ধ হয়নি।”

বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজুয়ারা শিপু রাইজিংবিডিকে বলেন, “ভুলভাল চিকিৎসা বন্ধ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কর্মকর্তাকে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেবার নামে তিনি নারীদের যৌন হয়রানি করছেন।”

এদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সঞ্জয় মিস্ত্রির দাবি, অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রাথমিক ধারণা থেকে থেরাপি দিচ্ছেন তিনি। তবে তিনি ভুল চিকিৎসা দেন না। যদি কেউ অভিযোগ দেয়, তাহলে এমন কাজ আর তিনি করবেন না। অভিযোগ না দেওয়া পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফাত্তাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, “এটি খুব মারাত্মক অপরাধ। এমন অনভিজ্ঞ কর্মকর্তার থেরাপিতে কেউ তো সুস্থ হবেই না, বরং স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “এটা অন্যায়, তার কোন সুযোগ নাই থেরাপি দেওয়ার। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হবে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরগ ন র চ ক ৎসক অফ স র ব যবস ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

পশুর হাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধীর দুই নেতা গ্রেপ্তার

চাঁদাবাজির অভিযোগে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর পশুর হাটের ‘বৈধ’ ইজারাদার মাহাবুব রহমান ও তাঁর সহযোগী মো. আলমগীর গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার সময় যৌথ বাহিনীর হাতে তারা আটক হন। গতকাল বুধবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। সেখানে বৈধতার কাগজপত্র দেখালে শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।

গ্রেপ্তার মাহাবুব রহমান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। মো. আলমগীর কুড়িগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। গত মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাপুর গরুর হাটে রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার অভিযোগ ওঠে। পরে ফেনী জেলার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আজাদ হাটে টহলরত যৌথ বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে তাদের আটক করা হয়। আলমগীর পুরো ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট থেকে ১৭টি মহিষ কেনেন। পরে অভিযুক্তরা তাঁকে (আনোয়ার) গরু-মহিষ বিক্রির রসিদ শেডঘরে নিয়ে যান এবং প্রত্যেক মহিষের জন্য ৫০০ টাকা করে ৮ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এ সময় আনোয়ার তাদের কাছে রসিদ চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি। আনোয়ার বিষয়টি যৌথ বাহিনীকে জানালে এ দু’জনকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, ‘মাহাবুব রহমান ওই হাটের ইজারাদার। তিনি চাঁদাবাজ নন। আমার সঙ্গে মাহাবুব রহমানের কথা হয়েছে। তারা কাগজ প্রদর্শনের সময় পাননি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করে যৌথ বাহিনী। সকালে কাগজপত্র দেখালে তাদের জামিন হয়।’ 

কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ জানান, মাহাবুব রহমান যাত্রাপুর হাটের বৈধ ইজারা মালিক। তবে ওই সময়ে তাঁর কাছে কাগজপত্র না থাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করা হয়। সকালে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. আলমগীর বলেন, দুপুরে যথাযথ কাগজ আদালতে দাখিল করে জামিনে মুক্ত হয়েছি। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ