মেহেরপুরে আরো ৩০ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ
Published: 27th, May 2025 GMT
মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে দুই দিনের ব্যবধানে আরও ৩০ জন বাংলাদেশি নারী ও শিশুকে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোররাতে মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। তারা সীমান্ত পার হয়ে উপজেলার কেদারগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করলে মুজিবনগর থানা পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
পুশ-ইন করা ব্যক্তিরা হলেন:
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার টগরপাড়া গ্রামের আজারুলের ছেলে মোহাম্মদ বজলুর (৪০), তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৪), মেয়ে মর্জিনা খাতুন (৯), মোছা মিম (৪) ও ছেলে মোহাম্মদ রাসেল (২১)।
ফুলবাড়ী থানার নগরাজপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আলিমুদ্দিন (৫০), আলিমুদ্দিনের ছেলে আতিকুর (৩০), আব্দুল আলীর মেয়ে আমিনা খাতুন, মমতাজের মেয়ে মনিরা খাতুন (৪০), হুজুর আলীর মেয়ে হালিমা (১৮) ও আতিকুরের মেয়ে হামিমা (৩)।
নাগেশ্বরী থানার বালাসিপাড়া গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে ইচা আলী, তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন, ছেলে ইসমাইল (৮), ইব্রাহিম (১৫), মেয়ে ইসমি (৩), শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমনা খাতুন (১৭)।
ফুলবাড়ী থানার নগরাজপুর গ্রামের হারুনের স্ত্রী ববিতা খাতুন (১৫), ছেলে ওবায়দুর (৭ মাস); ধর্মপুর গ্রামের কিতাব আলীর মেয়ে কল্পনা বেগম (২৭), অজয়টারি গ্রামের আমিনুরের মেয়ে ইয়াসমিন (২০), আতিকুলের ছেলে ইয়ানুর (২), ইয়াসিন (৫) ও মেয়ে ফাতেমা (১)।
ফুলবাড়ী থানার ভোগারকুটি গ্রামের হুজুর আলীর ছেলে মনির হোসেন, মেয়ে আদরি (২), ছেলে মনির হোসেন (৭); ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে শাহানুর (২৯).
আটককৃতরা জানান, বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে তারা ভারতে প্রবেশ করে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন।
এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, আটককৃতরা কেদারগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তাদের আটক করে থানায় আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার নাজমুল আহসান জানান, বিএসএফ যে ব্যক্তিদের ঠেলে দিয়েছে, তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। তাদের অধিকাংশই অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন। বিএসএফ তাদের আটক করে মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার ভোরে একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরও ১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশ-ইন করেছিল বিএসএফ।
ঢাকা/ফারুক/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম জ বনগর আল র ছ ল ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
হাতে ২০০ টাকা, পানি আর খাবার দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে বড়াইবাড়ী সীমান্তের ১০৬৭ নম্বর সীমানা পিলারের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ এলাকা দিয়ে ওই নাগরিকদের ঠেলে পাঠানো হয়। ওই ১৪ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।
আরও পড়ুনকুড়িগ্রাম সীমান্তে ১৪ জনকে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা বিএসএফের, বিজিবির বাধা৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ভারতের আসামের বাসিন্দা। ঠেলে পাঠানোর সময় তাঁদের প্রত্যেকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ টাকা, একটি পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে তাঁদের জোরপূর্বক ঠেলে এপাশে পাঠানো হয়। কেউ আসতে না চাইলে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
পুশ ইনের শিকার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আসামের মিকিরভিটায় আমাদের মাটি (জমি) আছে, ঘরবাড়ি আছে। আমি সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমার মা-বাবা সেখানের আদি বাসিন্দা। আমার বড় ভাই ও মা সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার।’
খায়রুল আরও বলেন, ‘২৩ মে আমাকে এসপি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভারতের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। গতকাল (সোমবার) ওই ক্যাম্প থেকে ফজরের নামাজের আগে কাঁটাতার পার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সীমান্তে পাঠানোর আগে আমার সাথি ভাইবোনদের সবার হাতে ২০০ টাকা, পানির বোতল ও প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কেউ আসতে রাজি না হলে মারধর করে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে পুশ ইন করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুশ ইন ঠেকাতে এলাকাবাসী ও বিজিবি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিলে বিএসএফ চারটি গুলি করে। এ ছাড়া দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিএসএফ রাজি হয়নি। উল্টো বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন ওড়ানো, সীমান্তে ভারী অস্ত্র তাক করিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
তবে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে পুশ ইনের চেষ্টার ঘটনায় উত্তেজনার কথা স্বীকার করা হলেও গুলির কথা অস্বীকার করেছে। জামালপুর ৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) হাসানুর রহমান বলেন, পতাকা বৈঠকের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। আটক ১৪ জনকে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাঁরা মূলত কোন দেশের নাগরিক সেটা যাচাই–বাছাই করে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএসএফ জোর করে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি বাধা দিতে গেলে বিএসএফ আমাদের ভয় দেখাতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ছাড়া তারা ভারত ও বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ওই সময়ে ভারতের সীমান্তে বেশ কিছু ভারী যানবাহন দেখা যায়। কিন্তু বিজিবি কেন এটি অস্বীকার করছে, আমার জানা নেই। বর্তমানে পুশ ইনের শিকার ওই ১৪ জন বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ভারতীয় নাগরিকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ করে টাকা ও পানির বোতল দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আমাকে টাকা দেখিয়েছেন।’