‘লেখক হয়ে উঠতে পারা বড় সাধনার বিষয়’
Published: 15th, November 2025 GMT
দিলরুবা আহমেদ গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। প্রবাসে থেকে নিয়মিত লেখালেখি করছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘ক-১৯ উইপিং উইলো ও নিহা’, ‘ব্রাউন গার্লস’, ‘গ্রিনকার্ড’, ‘এসো, হাত ধরো’ প্রভৃতি। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। এ সময় লেখালেখি, সমকালীন সাহিত্যপ্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।
রাইজিংবিডি: আপনার লেখালেখির শুরু কীভাবে?
দিলরুবা আহমেদ: আসলে আপন মনে গুনগুনিয়ে উঠার মতনই আঁকিবুকি করে সেই কোনো এক ছোট বেলাতেই লেখালেখি শুরু করেছিলাম তা আজ কেবলি স্মৃতি। গল্প লিখতাম লুকিয়ে, শেষ করা হতো না হয়তোবা তারপরও লিখতাম। কলেজ জীবনে পিকনিকে গিয়েছিলাম, তখন তাই নিয়ে একটা বড় উপন্যাস লিখে ফেলেছিলাম, যা আজও ধূসর পাণ্ডুলিপি-ই হয়ে রয়ে গেছে, অপ্রকাশিত। যদিও পত্রিকায় আমার প্রথম লেখা বের হয় সেই কলেজ জীবনেই। আসলে যে লিখে সে নিজেও জানে না কখন অক্ষরগুলো শব্দে হয়ে বাক্য তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যায়, যা দাড় করায় কোনো এক ঘটনাকে। বলে বলে লেখাটা আসে না, এটি এসেছে আমার ক্ষেত্রেও আপন গতিতে নীরবে, আমাকে না জানিয়েই এসেছে। আসবার ছিল এসেছে।
আরো পড়ুন:
বগুড়া লেখক চক্রের কবি সম্মেলন ও পুরস্কার ঘোষণা
‘আলফ্রেড কোভালকোভিস্কি পুরস্কার’ পেলেন হাসানআল আব্দুল্লাহ
যদি এরকম হয় যে নিজে নিজে লিখে জমালে লেখক হওয়া হয় না, লেখাটিকে পাঠকের কাছ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে লেখক হওয়ার জন্যে তবে তা বেশ সিরিয়াসলি হয়েছে আমার প্রবাসী জীবনের সূচনাতে। এর আগে পর্যন্ত আমার লেখা হয়েছে টুকটাক এদিক-ওদিক বিবিধভাবে চট্টগ্রামের "আজাদী’ সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। কিন্তু ২০০৫ সালে "টেক্সাস টক’ লিখতে শুরু করেছিলাম "যায় যায় দি ‘ পত্রিকায়। কোনো পত্রিকার কাউকে চিনতাম না। পত্রিকা অফিসের পথ ঘাট ছিল অচেনা। তাই বিদেশ থেকে ই-মেইল করেছিল অনেক পত্রিকায়। উত্তর এসেছিল কেবল "যায় যায় দিন’ থেকেই।
তারপর ওনাদেরকেই পরবর্তী দুই বছর লেখা দিয়েছি। এভবেই লিখে গেছি। এরপর যুগান্তর, আমাদের সময়, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মানবজমিন, অনন্যাসহ আরো অনেক পত্রিকায় লিখেছি। তবে আমার এইসব পত্রিকার কারো সাথেই আজঅব্দি দেখা হয়নি। অথচ ওনারা বিভিন্ন সময়ে লুকিয়ে থাকা এই লেখকের লেখাকে আলোতে এনেছেন। কৃতজ্ঞতা সেইসব সাহিত্য সম্পাদকদের কাছে যারা ভালো লেখাকে ভালো বলার মতন সাহসী ছিলেন। আর তাই আমার লেখালেখিটা শুরু করা গিয়েছিল, শুরু হয়ে গিয়েছিল।
রাইজিংবিডি: কবিতা প্রবন্ধ নয়, কেন কথা সাহিত্যচর্চা করেন?
দিলরুবা আহমেদ: কথাসাহিত্যে জীবনের হাক-ডাক-বাক-ব্যঞ্জন-বর্ণনার ব্যাপক এক পরিসরের যে ব্যাপ্তি থেকে, যে ধরনের প্রাপ্তি থাকে, তা নিঃসন্দেহে লিখিয়েকে অনুপ্রাণিত করে লিখবার জন্য। শব্দের ওপর শব্দ দাঁড় করিয়ে যে ইমারত বানানো যায় তাই আমাকে আকৃষ্ট করে কথাসাহিত্যের পদচারণায়। কবিতাতে ঝলক থেকে, কিছুটা উপলব্ধি থাকে, পলকে অনেকটা ধারণা পেয়ে যাওয়া যায় বটে, কিন্তু পুরোটার বয়ানের সময় ও জায়গা থাকে কি! সম্ভবত না। প্রবন্ধ তো প্রসঙ্গ অনুসঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত ডাটা-উপাত্তের মাপকাঠিতে চলে, অনুমাননির্ভর কিছু নয়, এটি খুবই সিরিয়াস বিষয়। মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু লেখার সুযোগ কম। গল্প উপন্যাস আমাকে লিখবার জন্য মুক্ত একটা বিশাল আকাশ দেয়। অনেক দূর মনের পাখনা মেলে উড়া যায়। তাই আমার মনে হয়েছে ঔপন্যাসিক ও গল্পকার হতে চাওয়া আমার জন্য অনেক আনন্দের হবে। এখনও চেষ্টা চলছে তাই তা হওযার।
রাইজিংবিডি: আপনি দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন, বর্তমানে এআই এর যুগে সাহিত্যচর্চার চ্যালেঞ্জ কী কী?
দিলরুবা আহমেদ: এখন ভরদুপুরে একলা শুয়ে শুধু যে বই পড়ে পড়ে সময় পার করে দেবে কেউ-তা কিন্তু একমাত্র বিনোদন নয়। বিকল্প অনেক। বহু। এর মাঝে এসেছে এআই। ছুরিকে কিভাবে ব্যবহার করব তা যেমন কার হাতে তার ওপর নির্ভর করে, তেমনি এআই কে কিভাবে ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন পাবেন তাও ভবিষতে জানা যাবে। তবে সাহিত্য একটি মৌলিক অঙ্গন, কৃত্রিমতা কতক্ষণইবা কীভাবে কতদূর পর্যন্ত জায়গা করে নেবে এখনো তা পরিষ্কার নয়।
রাইজিংবিডি: আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের অবস্থান কেমন মনে হয়?
দিলরুবা আহমেদ: ভিন্ন ভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে যাওয়া হয়েছে এটা ঠিক তবে এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য খুব যে কোনো গবেষণা করেছি তাও কিন্তু নয়। পর্যবেক্ষণ থেকে পর্যাপ্ত কোনো কংক্রিট উত্তর যে দাঁড় করতে পেরেছি সেরকম নয়। এটা তো সহজেই বলে যায় যত বেড়েছে বা যেভাবে বাড়ছে প্রবাসীর সংখ্যা বাংলা সাহিত্যের অঙ্গন তত বাড়ছে। বিকশিত হচ্ছে। যে যেই দেশেই যাক না কেন সাথে তো যাবেই তার সংস্কার সংস্কৃতি। দুস্কৃতিকারী চাইলেও ছিনতাই করতে পারবে না অস্থিমজ্জায় গেঁথে যাওয়া সেই দেশীয় ভাষার জন্য আবেগ। তাই আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যের প্রচার প্রসার অবস্থান উত্তরত্তোর বাড়ছেই। আমরা দেশে এলে মোটেও দেশীয় টেলিভিশনে প্রচারিত কোনো নাটক বা অন্যকিছু দেখি না অথচ আমেরিকায় বসে সব সময়ই বাংলা টিভি দেখি। আমার তো মনে হয় প্রবাসী হয়েই যেন আমরা বাংলাচর্চা বেশিই করি।
রাইজিংবিডি: আমাদের অনেক ভালো সাহিত্য রচনা রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় অনুবাদ খুব একটা নেই। বিশ্বে বাংলাসাহিত্য তুলে ধরতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি?
দিলরুবা আহমেদ: খুবই চমৎকার প্রশ্ন। অনুবাদের ক্ষেত্রে যা জরুরি তা হচ্ছে অনুবাদকের দুটো ভাষাতেই পারঙ্গম হওয়া, তাকে ধরতে হবে লেখার আবেগটুকুও সবেগে। সাদাসাপটা বাংলা টু ইংলিশ করে দিলেই তো আর হবে না। তবে ইদানিং অনেক ভালো ভালো অনুবাদ হচ্ছে। অনুবাদ যেমন বাংলা ভাষাকে ভিনদেশীয় সাহিত্যের সাথে পরিচিত করছে তেমনি এই মাধ্যমেই বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যাবে বাংলা সাহিত্যকেও। নজিরও আছে। সাহিত্য অনুবাদ হয়েছে বলেই লেখক নোবেল পর্যন্ত পেয়ে গিয়েছেন। সরকারি পর্যায়েও এজন্য পর্যাপ্ত ফান্ড ও উদ্যোগ প্রয়োজন।
রাইজিংবিডি: নতুন কী লিখছেন?
দিলরুবা আহমেদ: আমার ভ্রমণ সাহিত্যে আগ্রহ বাড়ছে। ভ্রমণ নিয়ে লিখছি। যেখানেই যাচ্ছি নতুন যা কিছু দেখছি সবই লিখে রাখতে ভালো লাগছে। চলার পথটা শব্দে এঁকে রাখাটা নিঃসন্দেহে বেশ আনন্দময় যাত্রা কথন। এতে যেমন থাকে সমকালীন জীবন চিত্র তেমনি উঠে আসে ভৌগোলিক বিবরণও। আমার মনে হয় একসময় তা ইতিহাসের গবেষণার কাজেও সহায়ক হয়ে উঠে। "চট্টগ্রাম-২২ বছর পর’-আমার সাম্প্রতিক ভ্রমণভিত্তিক লেখাটি বই আকারে বইমেলায় আসবে। "ল্যাম্পপোস্টের শহরে এক লৌহ কবরী’ পারিসভিত্তিক একটি লেখা। "c/o দ্রাঘিমাক্ষর’ এটিও ভ্রমণ নিয়ে লেখা একটি বই। নতুন একটা উপন্যাস লিখছি তবে নাম ঠিক হয়নি।
রাইজিংবিডি: এ প্রজন্মের লেখকদের আপনার পরামর্শ।
দিলরুবা আহমেদ: পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই পজিটিভ গঠনমূলক লেখাকে উৎসাহিত করব। সব লেখা এবং লেখকই যে সবার কাছে প্রিয় হবে-এমনটা না ভেবে আমার মনে হয় নতুন লেখকদের ভালো লাগার তাগিদেই লিখে যাওয়া উচিত। সবাই মুগ্ধ হবে এরকম না ভেবে লেখকের নিজের যেন লিখে যেতে লাগাতার মুগ্ধতা থাকে এটাই জরুরি। হঠাৎ করে যেমন সব হয় না, তেমনি লেগে থাকলে হঠাৎ একদিন সব হয়ে যায়। শুভ ভাবনার শুভ বিকাশ যেন শুভেচ্ছা বয়ে আনুক নতুন প্রজন্মে লেখকদের লেখায়।
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপন য স র জন য অন ব দ ত ই আম প রব স আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
রাজশাহীতে ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। তার নাম নাইম ইসলাম (২৩)। তিনি রাজশাহী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দুর্ঘটনায় রোহান ইসলাম (২২) আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরের চৌদ্দপাই বিহাস মোড়ে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাইম নগরের মাসকাটাদিঘী এলাকার মো. সাধুর ছেলে। আহত রোহান একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটিতে আগুন দিয়েছে।
আরো পড়ুন:
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল পুলিশবাহী বাস, আহত ২০
স্থানীয়রা জানায়, নগরের বিমানচত্বর এলাকায় আইটি সেন্টরে অনলাইনে কাজ করত নাইম। কাজের জন্য তারা মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে রওনা হয়। পথে চৌদ্দপাইয়ের বিহাস মোড়ে পৌঁছালে ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা ছিটকে পড়ে। এরপর ওই ট্রাকের চাকার নিচে চাপা পড়ে নাইম।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক জানান, দুর্ঘটনায় হতাহতের পর ক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটিতে আগুন দেয়। ট্রাকটি পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে নাইমের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল