বিশ্বজুড়ে পরিবেশ নিয়ে মনোযোগ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে জুতাশিল্পেও এর গুরুত্ব বেড়েছে। এই খাতে ব্যবহৃত উপকরণ যেমন– চামড়া, প্লাস্টিক ও নানা রাসায়নিক উপকরণ পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। তবে এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপকরণ ও পদ্ধতি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা উপকরণ, অর্গানিক তুলা, পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক ইত্যাদি। এর মাধ্যমে এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাবকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপন করছে। জুতাশিল্প খাতে এ পরিবর্তন ক্রেতাদেরও পরিবেশবান্ধব পণ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে।

আজকের বিশ্বে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো ব্যবসায়িক সাফল্যের অন্যতম মৌলিক উপাদান হয়ে উঠেছে। পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি যেমন– পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার, জ্বালানি অপচয় রোধ ও দূষণ কমানোর উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনতে সহায়তা করে না; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি করে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে ব্যবসার টেকসই মডেল নিশ্চিত করা তাই একটি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ সাফল্যকেই নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল করে। এমন উদ্যোগগুলো একদিকে যেমন ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও লাভজনক করে তোলে, অন্যদিকে ভোক্তা ও সমাজের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই উচিত পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করা। 

তৈরি পোশাক খাতে গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্মাণসহ টেকসই নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে আরএমজি ছাড়াও চামড়া, সিরামিকস, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ইলেকট্রনিকসের মতো খাতগুলোতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জ্বালানিসাশ্রয়ী টেকসই সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করার মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ববাজারে দায়িত্বশীল উৎপাদনের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সময় পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি ও সামগ্রিকভাবে সব খাতে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেকে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে পারে। 

পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক খাত গড়ে তুলতে হলে কৌশলগত নীতিমালা সংস্কার এবং অবকাঠামোগত বিনিয়োগ অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে থাকা বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রিন ফাইন্যান্সিং সুবিধার অভাব, টেকনিক্যাল দক্ষতার সীমাবদ্ধতা, রিসাইক্লিং ইকোসিস্টেমের যথেষ্ট সক্ষমতা না থাকা এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের জন্য কর প্রণোদনা দেওয়া, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন গড়ে তোলা, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তিতে খাতভিত্তিক সহযোগিতা উৎসাহিত করা এবং পরিবেশ-সংক্রান্ত নিয়ম-কানুনের মান নির্ধারণ ও কঠোর প্রয়োগের দিকে মনোযোগ 
দিতে হবে। 

এখন বিশ্বজুড়েই পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প খাতে পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা বা দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘জিরো লিকুইড ডিসচার্জ’ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই প্রযুক্তি কারখানাগুলোতে পানির ব্যবহার কমাতে এবং প্রক্রিয়াজাত বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করতে সহায়তা করে। ফলে কারখানা থেকে দূষণ কমে আসে; পানিসম্পদের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে কাগজবিহীন পদ্ধতির দিকে সারাবিশ্ব ঝুঁকে পড়েছে। সব জায়গাতেই এখন ই-বিল ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে শুধু পরিবেশ সংরক্ষণের সুযোগই তৈরি হচ্ছে না; বরং সময়, খরচ ও অপচ কমে আসছে। বলা চলে, এ দুই উদ্যোগ একযোগে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে ভূমিকা রাখে। 

শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম কারও একার পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ খাতে উদ্ভাবন বাড়াতে ও টেকসই চর্চায় দ্রুত রূপান্তর ঘটাতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। এটা সম্ভব হলেই শিল্প ও উৎপাদন খাতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত উপকরণ ব্যবহার এবং জ্বালানিসাশ্রয়ী উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করা সহজ হবে।

ফ্যাশন, জুতাসহ উৎপাদনমুখী সব খাতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব চর্চা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের প্রগতিশীল পরিবেশবাদী নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব খাতকে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল করে তোলা যেতে পারে। টেকসই পণ্য উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে সরকারকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও কার্যক্রমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড় দিতে হবে। এভাবে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একযোগে একটি পরিবেশবান্ধব ও আগামী প্রজন্মের উপযোগী শিল্প খাত গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়: ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ র ব যবহ র প রক র ব যবস সরক র ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

মুঘল ঐতিহ্যের মিষ্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করল ‘হেরিটেজ সুইটস’

মুঘল ঐতিহ্যের মিষ্টি নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হলো ‘হেরিটেজ সুইটস’-এর। মঙ্গলবার (২৭ মে) বসুন্ধরা আবাসিকের সি ব্লকে (আপন মার্ট-২-এর পাশে) ‘হেরিটেজ সুইটস’-এর আউটলেট উদ্বোধন করা হয়।  

মুঘল সম্রাটদের রাজসভা ও উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বাহারি ও সুস্বাদু মিষ্টান্ন। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে হেরিটেজ সুইটস-এ পরিবেশিত হবে আদি রসগোল্লা, কমলাভোগ, দিল্লী চমচম, ভোগসাগর, গুলাব-জমুন, ছানার জিলেবিসহ আরো নানান ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি।

প্রতিটি মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন মুঘল রেসিপি অনুসারে, যেখানে আধুনিক স্বাস্থ্যবিধি, দক্ষ কারিগর ও উৎকৃষ্ট মানের উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে স্বাদ ও গুণগতমান। গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ও স্বাদ দুটোই মাথায় রেখে, প্রতিটি পদে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বোচ্চ মানের উপকরণ ও পরীক্ষিত প্রাচীন পদ্ধতি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আইসিসিবি-র চিফ অপারেটিং অফিসার এম এম জসীম উদ্দীন বলেন, “আইসিসিবি হেরিটেজ সুইটস শুধু একটি মিষ্টির আউটলেট নয়, বরং এটি একটি অভিজ্ঞতা—যেখানে আপনি ফিরে পাবেন মুঘল আমলের রাজকীয় আতিথেয়তা ও স্বাদের ঐতিহ্য। বাংলার মুঘল ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হচ্ছে আমাদের মিষ্টান্ন। সেই ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে আমরা আইসিসিবি হেরিটেজ সুইটস-এর যাত্রা শুরু করেছি।”

তিনি আরো বলেন, “মুঘল যুগের অনবদ্য স্বাদ, পরিবেশনা ও সৌন্দর্যকে আধুনিক স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিবেশন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, খাদ্য শুধু স্বাদ বা পুষ্টির উৎস নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিরও বাহক। তাই, আমাদের প্রতিটি মিষ্টি তৈরি হয়েছে প্রথাগত রেসিপি ও উৎকৃষ্ট উপকরণে, যাতে পুরোনো দিনের স্বাদ ও গুণ বজায় থাকে।”

আইসিসিবি হেরিটেজ সুইটস এর আউটলেটের পরিবেশে ফুটে উঠেছে মুঘল আমলের স্থাপত্য ও সৌন্দর্য, যা গ্রাহকের মুহূর্তকে করে তুলবে আরো স্মরণীয়। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা/চিশতী/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুঘল ঐতিহ্যের মিষ্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করল ‘হেরিটেজ সুইটস’
  • গরমে হালকা খাবার