দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিনটিকে সামনে রেখে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের ছোট-বড় গো-খামারিরা। ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ডালের গুঁড়া, খৈল খাইয়ে ষাঁড় মোটাতাজা করছেন তারা। 

এবার কোরবানির ঈদে ৩ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তার। দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৩৩ হাজার পশুর খামার রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার খামারি ঈদুল আজহার জন্য গবাদিপশু প্রস্তুত করছেন। এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে, ষাঁড়-বলদ ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০টি, ছাগল প্রায় ৪ লাখ, মহিষ ৩ হাজার ৮৭৫টি ও ভেড়া ৬৭ হাজার ৩০৩টি।

আরো পড়ুন:

বগুড়ার খামারে ১১০০ কেজির লাক্সারি প্র্যাডো

ফরিদপুরে দেশি গরুর চাহিদা বেশি

জেলার চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য যাবে। মূলত ব্যাপারীরা সরাসরি খামারিদের বাড়ি ও পশুর হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাবেন।

এদিকে, বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নিজ জেলাসহ দেশের অন্য অঞ্চলের হাটে নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে নিরাপত্তাহীনতা, চাঁদাবাজি ও হয়রানির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার রতনকান্দি হাটে গরু কিনতে আসা ব্যাপারী আলতাব বলেন, “সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে কোরবানির গরু পরিবহনে ব্যবসায়ীরা বেশি নিরাপদ মনে করেন। কারণ সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে পরিবহন ব্যয় অনেক কম ও অধিক নিরাপদ। তবে, এবার নৌপথে ডাকাতি, ছিনতাই ও ঘাটে ঘাটে চাঁদা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।”

উল্লাপাড়ার বোলিয়া ও রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা পশুর হাটে আসা গরুর ব্যাপারী আলমগীর ও সাইদুল বলেন, কোরবানির পশু ট্রাক, মিনি ট্রাক, ইঞ্জিন চালিত নছিমনে করে বিভিন্ন অঞ্চলের হাটে নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক টাকা চাঁদা দিতে হয়। ডাকাতি ও ছিনতায়ের আশঙ্কা তো থাকেই।

শাহজাদপুরের পোতাজিয়া হাটের গরু ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, “নৌপথে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন হাটে ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়ে একদল লোক নৌকা থেকে পশু নামিয়ে সেখানে জোর করে বিক্রির জন্য বাধ্য করেন। এ কারণে অধিকাংশ সময় লোকসান গুনতে হয়।” সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে পশু পরিবহনে হয়রানি বন্ধসহ ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

পৌরসভার রানীগ্রামে অবস্থিত খান এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী নাজমুল ইসলাম খান বলেন, “প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের খামারে বর্তমানে ফিজিয়ান, শাহীওয়ালসহ দেশিজাতের শতাধিক ষাঁড় মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণের সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসন্ন ঈদু আজহার হাটগুলোতে যদি গবাদিপশুর দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে গো-খামারিরা বাঁচবে।”

তিনি বলেন, “বেশি দামে গো-খাদ্য খাইয়ে গরু লালন-পালন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে গরু আসলে সব শ্রেণির খামারিরা লোকসানে পড়বেন।” তিনি খামারিদের বাঁচাতে গরু আমদানি না করতে এবং প্রতিটি পণ্যের দাম কমাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

একে এম আনোয়ারুল হক বলেন, “জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি। স্থানীয় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৪১টি। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৩টি পশু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেওয়া হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।”

দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানি করবে না সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জেলার ছোট-বড় সব শ্রেণির খামারিরা পশু ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে এ জেলার গরু ছাগল পালন করায় সারা দেশে সিরাজগঞ্জ জেলার গরু-ছাগলের  চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ঝামেলা ছাড়াই এখানকার হাট থেকে পশু কিনতে পারেন। হাট, সড়ক ও নৌপথে পশু পরিবহনে হয়রানি বন্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ অফিস একযোগে কাজ করবে।”

টাঙ্গাইল অঞ্চলের নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা বলেন, “নদীতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাপারীরা তাদের গরু নিয়ে নদী পথে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন।” 

অবৈধ যানবাহনে পশু পরিবহন না করার অনুরোধ জানিয়ে বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের (পুলিশ সুপার) মো শহিদ উল্লাহ বলেন, কোরবানি উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। নগদ টাকা না নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে সবাইকে লেনদেন করার বিষয়ে সচেতনতা করা হচ্ছে। মহাসড়কগুলোতে যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সংবাদ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “জেলার কোনো সড়ক ও মহাসড়কে যেন কেউ পশুবাহী পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করতে না পারে, সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরাও হাটে দায়িত্ব পালন করবেন।”

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গণপতি রায় জানান, কেউ যাতে হাটে পশুর অতিরিক্ত খাজনা আদায় না করতে পারে, সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। কোনো চক্র যেন কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে; সে লক্ষ্যে প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু করা হয়েছে। পশু ক্রয় ও বিক্রয়সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সব সময় কাজ করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট স র জগঞ জ র ক রব ন র ব যবস য় পর বহন লক ষ য র জন য সড়ক ও করছ ন হয়র ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘সত্যিকারের ক্রিকেট আইকন’ বুলবুলকে আশরাফুলের খোলা চিঠি 

একজন দেশের ক্রিকেটের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। আরেকজন ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। বলা হচ্ছে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মোহাম্মদ আশরাফুলের কথা। 

আমিনুল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। আশরাফুল সেঞ্চুরি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বছর ৬১ দিনে। 

বুলবুল এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। আশরাফুল কোচিংয়ে যুক্ত। সদ্য বিসিবি প্রেসিডেন্ট হওয়া বুলবুলের থেকে আশরাফুলের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে। 

খোলা চিঠিতে সেই কথার ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন তিনি,

“শুভকামনা ও শ্রদ্ধা প্রিয় বুলবুল ভাইকে।”

“বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই, আপনি নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য এক অসীম আনন্দের ও গর্বের বিষয়। আপনিই আমাদের দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান, একজন সত্যিকারের ক্রিকেট আইকন, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট এক নতুন পথচলার সূচনা করেছিল।”

“আপনার হাত ধরে আমি কোচিংয়ে এসেছি, আপনাকে পেয়েছি দুঃসময়ে, আর প্রতিটি মুহূর্তে আপনার অনুপ্রেরণাই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন । শুধু বাংলাদেশের মাটিতে নয়, জাপান-চায়নার মত আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়াতেও আপনার অবদান অনন্য।”

“আজ যখন আপনি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে, তখন বিশ্বাস করি — এই ভঙ্গুর সময়ে আপনার অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও ভালোবাসা থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।”

“আমাদের একসাথে খেলার দিনগুলোতে যেই আবেগ, উচ্ছ্বাস আর স্বপ্ন দেখেছিলাম — এখন সময় সেই স্বপ্নগুলো বাস্তব করার। দেশের প্রতিটি তরুণ যেন আবার ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পায়, সেটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।”

“প্রিয় বুলবুল ভাই, আপনার নতুন যাত্রায় রইলো নিরন্তর ভালোবাসা, দোয়া ও অগাধ সম্মান। বাংলাদেশ ক্রিকেট আবারও জেগে উঠুক, আপনার নেতৃত্বে।”

ঢাকা/ইয়াসিন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ