সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা
Published: 30th, May 2025 GMT
দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিনটিকে সামনে রেখে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের ছোট-বড় গো-খামারিরা। ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ডালের গুঁড়া, খৈল খাইয়ে ষাঁড় মোটাতাজা করছেন তারা।
এবার কোরবানির ঈদে ৩ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তার। দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৩৩ হাজার পশুর খামার রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার খামারি ঈদুল আজহার জন্য গবাদিপশু প্রস্তুত করছেন। এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে, ষাঁড়-বলদ ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০টি, ছাগল প্রায় ৪ লাখ, মহিষ ৩ হাজার ৮৭৫টি ও ভেড়া ৬৭ হাজার ৩০৩টি।
আরো পড়ুন:
বগুড়ার খামারে ১১০০ কেজির লাক্সারি প্র্যাডো
ফরিদপুরে দেশি গরুর চাহিদা বেশি
জেলার চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য যাবে। মূলত ব্যাপারীরা সরাসরি খামারিদের বাড়ি ও পশুর হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাবেন।
এদিকে, বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নিজ জেলাসহ দেশের অন্য অঞ্চলের হাটে নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে নিরাপত্তাহীনতা, চাঁদাবাজি ও হয়রানির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার রতনকান্দি হাটে গরু কিনতে আসা ব্যাপারী আলতাব বলেন, “সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে কোরবানির গরু পরিবহনে ব্যবসায়ীরা বেশি নিরাপদ মনে করেন। কারণ সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে পরিবহন ব্যয় অনেক কম ও অধিক নিরাপদ। তবে, এবার নৌপথে ডাকাতি, ছিনতাই ও ঘাটে ঘাটে চাঁদা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।”
উল্লাপাড়ার বোলিয়া ও রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা পশুর হাটে আসা গরুর ব্যাপারী আলমগীর ও সাইদুল বলেন, কোরবানির পশু ট্রাক, মিনি ট্রাক, ইঞ্জিন চালিত নছিমনে করে বিভিন্ন অঞ্চলের হাটে নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক টাকা চাঁদা দিতে হয়। ডাকাতি ও ছিনতায়ের আশঙ্কা তো থাকেই।
শাহজাদপুরের পোতাজিয়া হাটের গরু ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, “নৌপথে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন হাটে ব্যাপারীরা গরু-ছাগল নিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়ে একদল লোক নৌকা থেকে পশু নামিয়ে সেখানে জোর করে বিক্রির জন্য বাধ্য করেন। এ কারণে অধিকাংশ সময় লোকসান গুনতে হয়।” সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে পশু পরিবহনে হয়রানি বন্ধসহ ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
পৌরসভার রানীগ্রামে অবস্থিত খান এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী নাজমুল ইসলাম খান বলেন, “প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের খামারে বর্তমানে ফিজিয়ান, শাহীওয়ালসহ দেশিজাতের শতাধিক ষাঁড় মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণের সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসন্ন ঈদু আজহার হাটগুলোতে যদি গবাদিপশুর দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে গো-খামারিরা বাঁচবে।”
তিনি বলেন, “বেশি দামে গো-খাদ্য খাইয়ে গরু লালন-পালন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে গরু আসলে সব শ্রেণির খামারিরা লোকসানে পড়বেন।” তিনি খামারিদের বাঁচাতে গরু আমদানি না করতে এবং প্রতিটি পণ্যের দাম কমাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানি করবে না সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জেলার ছোট-বড় সব শ্রেণির খামারিরা পশু ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে এ জেলার গরু ছাগল পালন করায় সারা দেশে সিরাজগঞ্জ জেলার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ঝামেলা ছাড়াই এখানকার হাট থেকে পশু কিনতে পারেন। হাট, সড়ক ও নৌপথে পশু পরিবহনে হয়রানি বন্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ অফিস একযোগে কাজ করবে।”
টাঙ্গাইল অঞ্চলের নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা বলেন, “নদীতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাপারীরা তাদের গরু নিয়ে নদী পথে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন।”
অবৈধ যানবাহনে পশু পরিবহন না করার অনুরোধ জানিয়ে বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের (পুলিশ সুপার) মো শহিদ উল্লাহ বলেন, কোরবানি উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। নগদ টাকা না নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে সবাইকে লেনদেন করার বিষয়ে সচেতনতা করা হচ্ছে। মহাসড়কগুলোতে যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সংবাদ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “জেলার কোনো সড়ক ও মহাসড়কে যেন কেউ পশুবাহী পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করতে না পারে, সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরাও হাটে দায়িত্ব পালন করবেন।”
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গণপতি রায় জানান, কেউ যাতে হাটে পশুর অতিরিক্ত খাজনা আদায় না করতে পারে, সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। কোনো চক্র যেন কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে; সে লক্ষ্যে প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু করা হয়েছে। পশু ক্রয় ও বিক্রয়সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সব সময় কাজ করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট স র জগঞ জ র ক রব ন র ব যবস য় পর বহন লক ষ য র জন য সড়ক ও করছ ন হয়র ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক