বৈরী আবহাওয়ার পরও বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন রেজাউল করিম ও আল আমিন। দুই জনের চোখে মুখেই হতাশা। রেজাউল করিম বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টায় সৈকতে ঘোড়া নিয়ে আসি। সারাদিন ঘোড়ার পিঠে পর্যটকদের উঠিয়ে ছবি তোলা কিংবা চড়ায়। তার বিনিময়ে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এসেছি, কিছু পর্যটকও আছে। কিন্তু কেউ ঘোড়াতে চড়েনি বৈরী আবহাওয়ার কারণে। কোনো আয় রোজগারও হয়নি। কীভাবে খালি হাতে ঘরে যাব বুঝতে পারছি না।

ঘোড়াওয়ালাদের পাশেই অবস্থান করছে বিচবাইক চালক নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, এক টাকাও আয় হয়নি আজকে। যেহেতু সাগরের জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে তাই বিচ বাইক চালানো যাচ্ছে না। এখনও শূন্য হাতে বসে আছি।

সাগরের পাড়ের সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর দিকে একটু হাঁটতেই দেখা হয় ঝাল মুড়ি বিক্রেতা মো.

নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় বিচে এসেছেন। এখন বিকেল ৪টা বাজে, কিন্তু এক টাকার ঝাল মুড়িও বিক্রি করতে পারেননি।

সবার মতো একই অবস্থা জেড স্কি, ফটোগ্রাফার, চটপটি, কিংবা শামুক-ঝিনুক বিক্রেতাদের। লাবনী পয়েন্টের ফটোগ্রাফার মো. গফুর বলেন, অন্যান্য দিন দুপুর পর্যন্ত সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে এক হাজার টাকা আয় হতো। সেখানে আজকে ছবি তোলা শুরুই করতে পারিনি। আমার মতো এই পয়েন্টে অন্তত ২৫ জন ফটোগ্রাফারের একই অবস্থা।

সাগরের পানি থেকে উঠিয়ে রাখা হয়েছে জেড স্কি। এই জেড স্কি চালক আবু রায়হান বলেন, সাগরে বিশাল বিশাল ঢেউ। যার কারণে জেড স্কি উপকূলে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যবসা এক প্রকার বন্ধ। কিটকট ব্যবসায়ী কায়েস বলেন, লাবনী থেকে সুগন্ধা ও শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত কয়েকশ কিটকট (চেয়ার-ছাতা) বালুচর থেকে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এখন ব্যবসা বন্ধ করে নিরাপদে বসে আছি।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় বন্ধ রয়েছে শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঝড়ো বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যাচ্ছে। যার কারণে দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল। বয়ে যাচ্ছে ঝড় বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাস। নেই কাঙ্ক্ষিত পর্যটক। যার কারণে একপ্রকার বন্ধ সৈকত পাড়ের ব্যবসা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

পাশাপাশি টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোকজন কাজে বের হতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন। অন্যদিকে সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্ক করে লাল পতাকা উঁচিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন জানান, উত্তাল সাগরে গোসল থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করে পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিন আবহাওয়া পরিস্থিতি এমন থাকতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু