প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা মাছ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে নদীর ৮-১০টি স্থানে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। নদীতে পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫-৭ ফুট বেশি থাকায় ডিম সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
হালদা নদীতে কয়েক শ নৌকায় করে রাতে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। একেকটি নৌকায় ২ থেকে ৫ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন সংগ্রহকারীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ও সোমবার রাতে নদীর একাধিক স্থানে নমুনা ডিম দেখা যায়। তখনো সংগ্রহকারীদের কেউ কেউ ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম করে ডিম পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
হাটহাজারীর মাদার্শা গ্রামের ডিম সংগ্রহকারী মুহাম্মদ শফি প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নদীতে আটটি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেন। এ সময় মোট ১৩ বালতি ডিম পেয়েছেন। গড়দোয়ারা গ্রামের প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী মো.
গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে পূর্ণ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে অপেক্ষায় ছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টি হলে জোয়ার কিংবা ভাটার সময় নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। কয়েক দিন ধরে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ দেখা দেয়। এতে দুই উপজেলার চারটি সরকারি হ্যাচারি ও শতাধিক মাটির কুয়ায় রেণু পোনা ফোটানোর জন্য নানা প্রস্তুতি নিয়ে রাখে প্রশাসন ও সংগ্রহকারীরা।
রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম বলেন, নদীতে ৪০০ থেকে ৫০০ নৌকা ডিম ধরার অপেক্ষায় ছিল। রাতে ডিম ছাড়ার পর সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ শুরু করেন। তবে নদীর পানি ৫ থেকে ৭ ফুট বেড়ে যাওয়ায় ডিম সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটেছে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন বলেন, কোনো কোনো নৌকায় ৫ থেকে ৭ বালতি ডিমও পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। হ্যাচারিগুলোতে এসব ডিম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সংগৃহীত ডিমের মোট পরিমাণ এরপর হিসাব করা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হালদা নদীতে ২০২৪ সালে ১ হাজার ৬৬০ কেজি ডিম পাওয়া যায়। এর আগে ২০২৩ সালে মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি। ২০২২ সালে পাওয়া যায় ৭ হাজার ২০০ কেজি। ২০২১ সালে ছিল ৮ হাজার ৫০০ কেজি। তবে ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ৩৫০ থেকে ৪০০টি নৌকায় প্রায় ৬০০ মানুষ ডিম সংগ্রহ করেছেন। নদীতে পানি এখন বিপৎসীমার কাছাকাছি অর্থাৎ স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এখন পানি ৫ থেকে ৬ ফুট বেশি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ম স গ রহক র স গ রহক র র
এছাড়াও পড়ুন:
সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) বিজ্ঞানীরা সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ নতুন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। নতুন জাতটির নাম করা হয়েছে ‘জিএইউ ধান-৩’।
জাতটি সাধারণ জাতের তুলনায় ১৫ ভাগ বেশি ফলন দিতে সক্ষম। নতুন এই জাতের ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকালে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ডের এক সভায় নতুন ‘জিএইউ ধান-৩’ জাতের ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আক্তার ওরফে আইভীর নেতৃত্বে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে একটি নতুন ধানের জাত। যার নাম করন করা হয়েছে ‘জিএইউ ধান-৩’। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের পর এটিই প্রথম নতুন জাত হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই নতুন জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯০টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে দীর্ঘ ৪ বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০ এপ্রিল নতুন এই জাতের ছাড়পত্র দেয়।
নতুন ধানের এই জাতটি মানুষের শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এর দানা চিকন ও লম্বা। তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হয়। আমন মৌসুমে প্রায় ৩ মাস এবং বোরো মৌসুমে সাড়ে ৩ মাস পর উৎপাদন পাওয়া যায়। এর ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।
এ ছাড়া নতুন ধানের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। যা গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, ‘‘সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১৫ ভাগ বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন থেকে ৬ টন। এতে উপস্থিত অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ যা শরীরে শর্করা জাতীয় খাবারগুলোকে সহজে ভেঙে শরীরে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। আবার সাধারণ চালের তুলনায় এতে জিঙ্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। সুবাসযুক্ত ধানটি রান্নার সময় মনোহর সুবাস ছড়ায় ফলে ভোক্তাদের কাছে এর চাহিদা বাড়বে। জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘জিএইউ ধান-৩ শুধু একটি জাত নয়, এটি আমাদের কৃষি গবেষণার গৌরবময় প্রতীক। ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অপরিসীম অবদান রাখবে।’’
এর আগে ড. আইভী লাল ও হলুদ পেঁপের ৪টি এবং ধান, টমেটো, লাউ, মটরশুঁটির ২টি করে মোট ১৩টি জাতের সফল উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন।
ঢাকা/রেজাউল/টিপু