বিবিএ পাস রিকশাচালক আমিরের কষ্টের কাহিনি
Published: 31st, May 2025 GMT
ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবেন। অভাব দূর করবেন বৃদ্ধ মা-বাবার। চট্টগ্রাম সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে চাকরি নেন এনজিওতে। পরিবারের চাপে করেন বিয়ে। বিয়ের পর খরচ বেড়ে যাওয়ায় ছেড়ে দেন অল্প টাকার চাকরি। আয় বাড়াতে ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন। বছর পাঁচেক পর কিস্তিতে নিজেই একটি অটোরিকশা কেনেন। এখনও কিস্তির টাকা বাকি রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু সম্প্রতি উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটি চুরি হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা উচ্চশিক্ষিত এই তরুণ। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও উদ্ধার হয়নি তার অটোরিকশাটি। এখন বেকার বসে আছেন, অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে দিন। বলছিলাম সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মীর পাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে আমির হোসেনের (২৩) কথা। পরিবারে তার মা-বাবা, স্ত্রী ও ৬ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
আমির হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর চাকরি পাই একটি বেসরকারি সংস্থায়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বেতন কম হওয়ায় ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভাড়ায় অটোরিকশা চালাতে থাকি। ২০২৩ সাল এভাবেই চলছিল জীবিকা। ওই বছরের শেষের দিকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আসল ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভসহ মোট সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা কিনি। এখনও ১ লাখ ৭০ হাজার ঋণ বাকি। গত ২৩ মে রাতে আমার অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ির সামনের একটি গ্যারেজে তালাবদ্ধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি রেখেছিলাম। পরদিন দেখি গ্যারেজের দরজার তালা ভাঙা। ২৪ মে আমি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা চোরদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ দায়েরের ৬ দিন অতিবাহিত হলেও অটোরিকশাটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে আমি অকূল সাগরে পড়ে গেছি।’
আমির বলেন, ‘অটোরিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করতাম সেটা দিয়ে আমার সংসার চলত। গাড়িটি চুরির পর থেকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমার গাড়িটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হয়।’
কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা কামাল হিরু বলেন, ‘আমির হোসেন একজন উচ্চশিক্ষিত তরুণ। সে বিবিএ পাস করে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অটোরিকশা চালাত। সম্প্রতি তার গাড়িটি চুরি হয়ে যাওয়ায় সে খুবই অর্থ কষ্টে রয়েছে। এ দুঃসময়ে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত আমিরের পাশে দাঁড়ানো।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র হ স ন পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ