সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি
Published: 1st, June 2025 GMT
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ছাত্রসংগঠনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, সহসভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক একরামুল হক জিহাদসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে হামলার হুমকিদাতাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজীদ হায়দার চঞ্চল। তিনি বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের এবং চট্টগ্রাম নগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রশিবির হামলা করেছে। ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’–এর ব্যানারে জামায়াতে ইসলামী-ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতা–কর্মীদের এসব হামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রায় ৩০ জন নেতা–কর্মী আহত হন। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের নৃশংস হামলার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ মে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পরিবারকে, কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদকে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সংসদের সভাপতি একরামুল হক জিহাদকে হুমকি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আপামর জনগণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর যে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা করেছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সেই আকাঙ্ক্ষাকে ছাত্রশিবির বিনষ্ট করেছে। ভিন্নমত দমনে নৈমিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্যাগিং, পেশিশক্তি, মব–সন্ত্রাস বেছে নিয়েছে ছাত্রশিবির, যা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি পুরোনো ফ্যাসিস্ট–ব্যবস্থাকে জিইয়ে রেখেছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামে ও রাবিতে নৃশংস হামলা চালিয়েছে, নারী আন্দোলন কর্মীদের বর্বরোচিতভাবে আঘাত করেছে। এমন সন্ত্রাসী তৎপরতার পর জামায়াত-শিবির ক্ষান্ত না হয়ে একেক পর এক ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্রশিবিরের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ নজির এটাই প্রথম নয় উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৮৪ সালে শিবির চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে। ১৯৮৮ সালে শিবিরের ক্যাডার বাহিনী ছাত্র মৈত্রীর নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে হত্যা করে। তা ছাড়া শিবিরের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সঞ্জয় তলাপাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা তপন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে ছাত্র ইউনিয়ন। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। ’২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতার স্বার্থে চিফ প্রসিকিউটরকে পরিবর্তন করতে হবে। অবিলম্বে শিমুল কুম্ভকার, মনীষা ওয়াহিদ ও একরামুল হক জিহাদকে হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অনলাইনে ‘নাস্তিক’, ‘শাহবাগি’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহনন এবং বট-মবভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে গণ–আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের প্রান্তিকীকরণ করার চেষ্টা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে তৎপর ও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিমুল কুম্ভকারসহ ছাত্র ইউনিয়নের অন্য নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক কর ম দ র ন করত ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’