সারাদেশের চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন রাজশাহী বিভাগের আট জেলার খামারিরা। নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত ১৭ লাখ কোরবানির পশু যাবে সারাদেশে। ইতোমধ্যেই এ বিভাগে বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। তবে হাটগুলোতে এবার ভারতীয় গরু উঠছে না। দেশি গরুতেই ভরসা রাখতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

বিভাগের ৩০২টি হাটে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার সারাদেশে ১ কোটি ২৬ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগেই এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ পশু, যা সারাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ। আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ। ফলে উদ্বৃত্ত থাকবে ১৭ লাখ পশু, যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হবে। তবে আট জেলার মধ্যে শুধু বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় অল্প ঘাটতি রয়েছে। 
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা.

আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, সীমান্ত দিয়ে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি গরুর চাহিদা ও দাম বাড়ছে। পর্যাপ্ত গবাদি পশুর মজুত আমাদের নিজেদেরই আছে। বাইরের গরু আসে না বলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আবার চাহিদার তুলনায় মজুত বেশি থাকায় দাম খুব বেশি বাড়বে এমনটাও নয়, বাজার স্বাভাবিক থাকবে। 
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে, যা সারাদেশের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। বড় খামারগুলোতে উন্নতজাতের গরু কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। ক্রেতারা সাধারণত হাটে গিয়ে গরু কিনতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে খামারে গিয়েও গরু কেনেন। বিভাগের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটি হাট। এটি ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে।  

খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশু সাধারণ পশুর চেয়ে অনেক সুন্দর হয়। কারণ এর খাবার ও যত্ন বেশি নেওয়া হয়। কিন্তু এবার দাম সাধারণ পশুর মতো। বাজারে যে দরে গরুর মাংস কেনা হয়, সে দরেই কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ পশুর চেয়ে কোরবানির পশুর দাম কিছুটা বেশি না হলে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন না। 
রাজশাহীর নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের সহকারী ব্যবস্থাপক ডা. সারওয়ার জাহান জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাদের ফার্মে ১০০টি গরু মোটাতাজাকরণ হয়েছে। ভুট্টা, কাঁচা ঘাসসহ প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। অনেকেই অনলাইনে গরু কিনছেন। 
পবা উপজেলার খামারি হাফিজুর রহমান বলেন, এবার কোরবানির পশুর দাম স্বাভাবিক। খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না। তবে লোকসানও হচ্ছে না।
রাজশাহী কোর্ট এলাকার খামারি আজাদ আলী বলেন, এবার ভারতীয় গরু আসছে না। হাটে শুধু দেশি গরু উঠছে। বড় গরুর দাম কম। ছোট গরুর দাম স্বাভাবিক। আড়াই থেকে তিন মণ গরুর চাহিদা বেশি। টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকা ডুবে গেছে। সামনে দাম আরও কমবে। 
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, প্রতিটি পশুর হাটে সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য ইজারাদার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাজার কমিটি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। হাটের সার্বিক নিরাপত্তায় স্থাপন করা হয়েছে হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর প রস ত ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ