ইউরোপ ও আমেরিকার রাস্তায় চলছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা সাইকেল। চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠান আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও করভো সাইকেলস লিমিটেড কয়েক ধরনের সাইকেল তৈরি করে রপ্তানি করছে। দুই প্রতিষ্ঠানই রপ্তানিনির্ভর।
আলিটা বাংলাদেশ জানিয়েছে, এক বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৯০ হাজার পিস সাইকেল রপ্তানি করেছে তারা। করভো সাইকেলের রপ্তানি সেই তুলনায় কম হলেও ক্রমশ বাড়ছে তাদের উৎপাদন। আলিটার রপ্তানি করা সাইকেলের ৮০ শতাংশেরই গন্তব্য ইংল্যান্ড। আর করভোর তৈরি সাইকেল যাচ্ছে প্যারিস ও আমেরিকাতে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রামের এই দুই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮২ হাজার বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে।
ইউরোস্ট্যাটের উদ্ধৃতি দিয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান জানান, গত বছরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। আর পুরো বিশ্বে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
বাংলাদেশের এই রপ্তানি বাজারে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং কেইপিজেড এলাকায় অবস্থিত করভো সাইকেলস লিমিটেড। কর্ণফুলী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মশিউদ্দিন
বিন মেজবাহ বলেন, করোনার পর সাইকেলের চাহিদা বেড়ে যায় হুহু করে। এখন সেটাতে একটু ভাটার টান থাকলেও ক্রমশ বড় হচ্ছে চট্টগ্রামের কারখানাগুলোর পরিধি। সম্ভাবনাময় এই খাতে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া গেলে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানো যাবে।
কর্ণফুলী ইপিজেডের পরিচালক নাদিমুল হক জানান, করভো সাইকেল লিমিটেড বাইসাইকেলের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ট্রিডেন্ট সাইকেলস কোম্পানি লিমিটেড নামে আরেকটি কারখানা স্থাপন করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৯ মে পর্যন্ত করভো সাইকেল লিমিটেড ৬৩ লাখ ৩১ হাজার ৪৯২ ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাইসাইকেল রপ্তানি বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
বিপরীত চিত্র দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ইপিজেডে থাকা আলিটা বাংলাদেশ লিমিটেডের রপ্তানি চিত্রে। আগের অর্থবছরের তুলনায় এবারে তাদের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। সে তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম ফেরদৌস। কোম্পানিটির রপ্তানি করা বাইসাইকেলের ৮০ শতাংশই যাচ্ছে ইংল্যান্ডে। পোল্যান্ড ও স্পেনেও রপ্তানি হচ্ছে। সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আমেরিকা। রপ্তানি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৯০ হাজার পিস সাইকেল রপ্তানি করেছি আমরা। তবে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৭০ হাজারের মতো সাইকেল রপ্তানি করেছি।’
দেশের বাইরে প্রথম বাইসাইকেল রপ্তানি শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকেই। ১৯৯৫ সালে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লিখে সাইকেল রপ্তানি শুরু করে আলিটা। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে বাইসাইকেল উৎপাদন শুরু করে মালয়েশিয়াভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সাল থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বাইসাইকেল রপ্তানি করছে চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠান করভো সাইকেলস লিমিটেড। ২০০৩ সালে রপ্তানিকারকের তালিকায় যুক্ত হয় দেশি প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ। ২০১৪ সালে যুক্ত হয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
করভো সাইকেলসের ব্যবস্থাপক বখতিয়ার জামাল বলেন, এখন সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ ২৮টির বেশি দেশে। বাংলাদেশে বাইসাইকেল রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের পানাম নগরীতে ১,৯০,০০০ বর্গফুট এলাকাজুড়ে সাইকেল কারখানা গড়ে তুলেছে পানাম গ্রুপ। টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পানাম গ্রুপ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পানাম সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে সাইকেল কারখানা চালু করে। কোম্পানিটি ওই বছরই সাইকেল রপ্তানি শুরু করে। এটিও শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান।
বাইক ইউর প্রতিবেদন মতে, পানামের ২ লাখ ২০ হাজার ইউনিট সাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। চলতি বছর ১ লাখ ইউনিট সাইকেল রপ্তানির আশা করছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি ই-বাইকও তৈরি করছে।
বাংলাদেশের বাজারের পাশাপাশি সাইকেল রপ্তানি করে থাকে মেঘনা গ্রুপ এবং প্রাণ-আরএফএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের বছরে ১০ লাখ বাইসাইকেল তৈরির সক্ষমতা আছে। কোম্পানিটির তৈরি সাইকেলের এক-তৃতীয়াংশ যায় ইউরোপের বাজারে। বাকিটা দেশে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে প্রতি বছর গড়ে ১০ কোটি ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি
সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।
সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।
এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা