সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু আজ
Published: 2nd, June 2025 GMT
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল চারটায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার সূচনা করবেন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হবে বিষয়ভিত্তিক। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে এক দিন এবং ঈদের পরে দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চলবে। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের যেসব মৌলিক প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো এ পর্বে বেশি গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তাঁর উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের এই আলোচনার উদ্বোধন করবেন। সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়। সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
পরে ২৬ মে ঐকমত্য কমিশন সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম ধাপের আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ক্ষমতার ভারসাম্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে ওই দিন জানিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে—এ ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে এসব বিষয়ে অনেক দল আরও আলোচনার কথা বলেছে এবং আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে বলে জানায় ঐকমত্য কমিশন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব ত য় পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ‘নমনীয়’ জামায়াত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভোটের পক্ষে
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এই অবস্থান জানিয়েছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তারা নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে কঠোর নয়, নমনীয় থাকতে চায়। তাঁদের চাওয়া ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হোক। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব কথা বলেছেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রথম হচ্ছে সংস্কারের বিষয়। আমরা বলেছি, জুলাইয়ের ভেতরে এই সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। অনেক বিষয় ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে সামান্য সামান্য দ্বিমত আছে বিভিন্ন দলের মাঝে। আগামীকাল থেকে সব দলকে একসাথ করে একটা মিটিং হবে। সেখানে এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। আর যেসব বিষয়ে মৌলিক কিন্তু ঐকমত্য হচ্ছে না, সেগুলোর ব্যাপারেও আমরা বারবার আলোচনায় এসে কাছাকাছি জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব।’
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ‘একেবারে ঐকমত্য হচ্ছে না এসব বিষয়ে কী করা যাবে, সে বিষয়ে আমরা একটা আলোচনা করব এবং জুলাইয়ের ভেতরে এটা শেষ হবে। তারপর একটা জুলাই সনদ হবে, যেখানে আমরা সব পলিটিক্যাল পার্টি নীতিগতভাবে একমত হয়েছি যে সেই চার্টারে আমরা সাইন করব।’
প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এই বৈঠকে নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা দুটো কথা বলেছি। প্রথম হচ্ছে, আমরা সব দল ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি এবং উনার নেতৃত্বেই একটি সফল সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন হোক আমরা এটা চেয়েছি, এটা উনাকে বলেছি।’
নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনটি বক্তব্য এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর টু জুন, কিছু পলিটিক্যাল পার্টি বলেছে ডিসেম্বর। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি জুন ও মে মাস আবহাওয়াগতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযোগী নয়। তাহলে মে, জুন বাদ দিলে ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) যে কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) আছে, কমিটমেন্টের যে টাইমলাইন (সময়সীমা), সেটা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। এর মাঝে একটি রোজা আছে। আমরা বলেছি, এর ভেতরেই আপনি একটা ডেট (তারিখ) ঘোষণা করবেন।’
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী নমনীয় থাকতে চায় উল্লেখ করে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে খুব রিজিড (কঠোর) হতে চাই না। আমরা ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) এবং আপনাকে কোনো ডেট আমরা নির্দেশও দিতে চাই না। ডিক্টেটও করতে চাই না। আমাদের সেন্টিমেন্ট অবশ্যই আজকে প্রকাশ পেয়েছে। আপনি বুঝেছেন এর মাঝে ডিসেম্বর টু এপ্রিল একটা সুইটেবল টাইমে আপনি একটা ডেট দিলেই জনমনে যে এখন কিছুটা শঙ্কা ও অস্বস্তি আছে, এটা কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। আজকের বৈঠকেও দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এটাও বলেছি কোনো একটি দল বা কেউ কোনো একটা নির্ধারিত তারিখের ব্যাপারে খুব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এটা ওয়াইজ না, আমরা ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা) চাই, মানে এই সময়ের ভেতরে আমরা নির্বাচন চাই।’
এ ছাড়া আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ (সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি) প্রয়োজনীয় বিষয়ে করণীয় নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।