২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের মূল দর্শন ‘বৈষম্যবিহীন সমাজ’ গঠনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লাগ (সিপিডি)।

বাজেটের আকার ছোট করা হলেও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাকে বড়-ই বলা যায়। আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করছে সংগঠনটি।

সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। পরে বিকেলে সংগঠনটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড.

ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বাজেটে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটে পুরো একটি কাঠামোগত পরিবর্তন সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেটের যে মূল দর্শন, বৈষম্যবিহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সবক্ষেত্রে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও কিছুটা কাটছাট করা হয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট উচ্চমূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা সর্বোপরি রাজস্ব আহরণের সমস্যা অর্থাৎ কম রাজস্ব আহরণ। এই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনায় নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করেছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এটিকে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ৮ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, এটি একটি বড় লক্ষ্যমাত্রাই বলা যায়। সেদিক থেকে খুব ছোট যে বলা যাবে, তা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক। সামাজিক কর্মসূচির আওতায় ১৪০ টি কর্মসূচি সমান্তরালে চলতো। এখন সেটি কমিয়ে ৯৫টি করা হয়েছে। সেখানে অর্থ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। এটিও ভালো লক্ষ্যণ নয়।’

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটি একটি ভালো দিক। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এটি খুব ভালো হয়েছে তা নয়। তবে এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। জুলাই যোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে, এটিকে আমরা ভালো পদক্ষেপ মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে কর দেওয়ার প্রবৃদ্ধি তাদেরকেই বেশি কর দিতে হবে, আবার যারা উচ্চবিত্ত রয়েছে তাদের কর দেওয়ার হার বেশি হবে না। এখানে আমরা একটি বৈষম্য দেখছি। অঞ্চলভিত্তিক নূন্যতম কর ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটিকে আমরা বৈষম্য হিসাবে দেখছি ‘

তিনি আরও বলেন, ‘কালো টাকার বিষয়টি এবারও রয়ে গেছে। যদিও এখানে হার বাড়ানো হয়েছে। কালো টাকার সুযোগ দিয়ে যারা নৈতিকভাবে আয় করে তাদের প্রতি আঘাত দেওয়া। এটা একবার দুইবার সুযোগ দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদক ষ প লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক আনোয়ারাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এইচআরএফবির নিন্দা

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ৬৯ বছর বয়সী একজন নারীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়সাহেব বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলির ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা আহত হন। পরে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার সঙ্গে আনোয়ারা বেগমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানান।

বিবৃতি অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপর পুলিশ চলমান মামলার আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এইচআরএফবি জানায়, আনোয়ারা বেগম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২১ সালে অবসরে যান। তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জামিনের বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে-যা এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল বলেও সংগঠনটি উল্লেখ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে এইচআরএফবি। পাশাপাশি সংগঠনটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাছবিচারহীনভাবে শত শত ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠালে মামলাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

তাদের মতে, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন। এমনকি জুলাই হত্যাকাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর মামলায় অনিয়মিত গ্রেপ্তারের ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, আনোয়ারা বেগমসহ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর আসামি নির্ধারণ, গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ক্ষেত্রে অধিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুলিশ ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব: আইবিএফবি
  • লক্ষ্য অর্জন দুরূহ হবে: বিসিআই
  • বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা ফিকির
  • রাজস্ব প্রশাসনে যে সংস্কার জরুরি
  • ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে শহীদ আফ্রিদি, তোপের মুখে ক্ষমা চাইলেন আয়োজকেরা
  • অপকর্ম, চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংগঠন ছাড়লেন বরিশালের তিন নেতা
  • মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার
  • জবির ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের প্রোফাইল হালনাগাদের দাবি
  • অধ্যাপক আনোয়ারাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এইচআরএফবির নিন্দা