আমের বিপণনব্যবস্থা পাল্টে যাওয়ায় স্বস্তিতে কৃষক
Published: 3rd, June 2025 GMT
রাজশাহীর পুঠিয়ার আমচাষি মাহবুব ইসলাম একসময় বাগান ধরে ব্যবসায়ীদের কাছে আম বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করে টাকা দিতেন। অনেক সময় টাকার জন্য ঘুরতেও হতো তাঁকে। ব্যবসায় ভালো করলে ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে দিতেন। আর যদি ব্যবসা না হতো, তখন চাষিরা চুক্তি অনুযায়ীও টাকা পেতেন না। এতে মাহবুবের খুব বেশি পোষাত না। তবে তিন থেকে চার বছর ধরে তাঁকে আর আমবাগান ধরে বিক্রি করতে হয় না। আম পরিপক্ব হতে না হতেই বাগানে চলে আসেন ক্রেতা কিংবা নিজেই হাঁটে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে মাহবুব দামও ভালো পাচ্ছেন। আড়তদার বা অন্য ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি থাকতে হচ্ছে না তাঁকে।
মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় আমার বাগানের আম আমি ছুঁতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে বাগান ধরে বিক্রি করে দিতে হতো। এখন আমার আম আমি বিক্রি করি। লস হলেও আমার, লাভ হলেও আমার। আগে বাগান ধরে বিক্রি করতে হতো অথবা আড়তদারের কাছে। এখন আম বেচার অনেক বিকল্প পথ তৈরি হয়েছে।’
আমচাষি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে কয়েক বছর আগেও মুকুল আসার পর চাষিরা আমবাগান বিক্রি করতেন। এ ধরনের রেওয়াজ বহুদিন আগের। সে সময় আরেকটি উপায় ছিল বাজারের আড়তদারের কাছে আম বিক্রি করা। কিন্তু বর্তমানে আম ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তি আসায় পাল্টে গেছে বিপণনব্যবস্থা। আমের এই বিকল্প বিপণনে যুক্ত হয়েছেন অনেক তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পৌঁছে দিচ্ছেন। আমের মৌসুম শুরু হলেই তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিপণনে।
রাজশাহীর বিশুদ্ধ আম পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। অনলাইনভিত্তিক এই উদ্যোগের পেছনে তরুণেরাই বেশি জড়িত। এই তরুণেরা রাজশাহীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরও অনেকে নানাভাবে আম ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আছেন নারীরাও। আম পরিবহনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সেবায় ভিন্নতা এনেছে।
বাঘার আমচাষি নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও বাগান ধরে আম বিক্রি করতে না পারলে গাছতলায় পড়ে থাকত। ব্যবসায়ী বা আড়তদারেরা যে দাম দিতেন, তাই বিক্রি করতে হতো। টাকাপয়সাও ঠিকঠাক দিতেন না। এখন তিনি বাঘা বা আশপাশের কুরিয়ার থেকেও বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠাতে পারছেন। আর এখন যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো।
রাজশাহীতে গত ১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। এখন আম বেচাকেনা নিয়ে একরকম আমেজ চলছে। মৌসুমের শুরুতে গুটি আমসহ নানা জাতের আম বিভিন্ন কোম্পানি আচার তৈরির জন্য কিনে নেয়। আগে আম শুধু হাটে বিক্রি হতো। এখন আমের হাট ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তার পাশে, মোড়ে বসে অনেকেই আম বিক্রি করছেন। রাস্তার ধার থেকে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
আলমগীর হোসেন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা জানালেন, তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে রাজশাহীর আম কুরিয়ারে করে পাঠাচ্ছেন। বাগান থেকে আম পেড়ে পাঠান তাঁরা। ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করায় তাঁদের এই উদ্যোগ আজও ভালোভাবে টিকে আছে। গত বছরও ১০০ টনের মতো আম শুধু কুরিয়ার করেছেন। তিনি বলেন, আমচাষিরা একসময় চিন্তায় থাকতেন আম বিক্রি নিয়ে। এখন আর তাঁদের চিন্তা করতে হয় না। ক্রেতারা বাগানে চলে যান আম কিনতে। তাঁরাই চাষির বাগান থেকে আম নিয়ে ক্রেতাদের পৌঁছে দেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম ব ক র ব যবস য় এখন আম আড়তদ র আম র ব ম হব ব ন আম ব আমচ ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার