‘লিচুর বাগান’ দেখে সাবিলাকে নিয়ে যা বললেন চয়নিকা চৌধুরী
Published: 5th, June 2025 GMT
ঈদের সিনেমার প্রচারণা এখন তুঙ্গে। ট্রেইলার, টিজার প্রকাশের পর প্রকাশিত হচ্ছে সিনেমার গান।সম্প্রতি রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার একই ডান্স নাম্বার প্রকাশিত হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এই গানকে আইটেম গান ভেবে ভুল করছেন। সে যাইহোক, লিচুর বাগানে গানটিতে সাবিলা নূরকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এবং সাবিলা নূর নিজেকে কতটুকু উপস্থাপন করতে পেরেছেন— এ বিষয় নিয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন গুণী পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী।
তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এই লেখাটি আমার একদম ব্যাক্তিগত। আর লেখাটি শুধু মাত্র এই ছবির মেয়েটির জন্যে। শুধুই তার জন্যে।সিনেমায় এসে হঠাৎ করেই কেউ এসে মন জয় করে ফেলবে আর দর্শক প্রিয় হবে, এমন ভাবাটা বোকামি। রায়হান রাফীর তাণ্ডবের লিচু বাগান গানটি দেখলাম। গানটা হঠাৎ করে ভালো লাগবে সেটা বলবো না। গানটা শুনতে শুনতে ভালো লাগবে। তবে আমার চোখ ছিল একদম একজন দর্শক এবং পরিচালকের চোখ।’’
একজন পরিচালক হিসেবে চায়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘গানে সাদা পোশাক পরা অংশটা দারুণ। মনে হয়েছে বোম্বের কোনো ফিল্মের গান।কিন্ত প্রথম অংশের ডান্স এর জায়গায় তার পারফরম্যান্স দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ।আমার চোখে এমন কোরিওগ্রাফিতে ডান্স যথেষ্ট কঠিন। আর এই কঠিন কাজটি এই মেয়েটি রিদমের সাথে সাবলীলভাবে করেছে। যেন তার কাছে এটা কোন ব্যাপারই না। প্রতিটি স্টেপ্স, ড্রেসআপ আর এক্সপ্রেশন, ডান্স এর মুভমেন্ট, রিদম একদম পারফেক্ট। সবচেয়ে যেটা আমার কাছে ভালো লেগেছে এই ফিল্মের গান সবার সাথে বসে দেখা যায়।মার্জিত।’’
আরো পড়ুন:
শাকিব খানের সঙ্গে নাচার অভিজ্ঞতা জানালেন ফারিণ
দুই সুন্দরীকে বড় পর্দায় দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন মেহজাবীন
চয়নিকা চৌধুরী মনে করেন, ‘‘এই গানে একটা শটেও ভাল্গারিজম ছিল নাই। এটি পুরোপুরি একটি কমার্শিয়াল গান, সব কিছুই আছে কিন্ত কোন আরোপিত দেখানো শটস নেই যা দেখলে বিব্রত হতে হয় সবার সামনে। এইসব গানে ইচ্ছা করেই শরীর দেখানোর ব্যাপারগুলো দেখেছি এর আগে। কিন্ত এখানে সবই ছিল কিন্ত খুব ন্যাচারাল, ড্রেসআপ একদমই মেয়েটির জন্য ঠিকঠাক মানে সে ক্যারি করতে পেরেছে, তাকে মানিয়েছে। আর সে যে কত সুন্দর! কত যে সুন্দর লেগেছে তাকে! মায়াবী, গ্ল্যামার সবকিছুই পারফেক্ট।’’
চয়নিকা চৌধুরী আরও লিখেছেন, ‘‘আমার দেশের এত বড় অনলি ওয়ান একজন মেগাষ্টার শাকিব খানের সাথে অভিনয় করে এমন একটি পারফরম্যান্স করা বিশাল ব্যাপার। অনেক নার্ভাস থাকার কথা। যদিও সহশিল্পীর সহযোগিতা, পুরো টীমের সাপোর্ট, ডিরেক্টরের ইনভলবমেন্ট সবই ছিল। তারপরেও মনেই হচ্ছিল না সে নতুন, এটাই তার প্রথম।’’
সাবিলা নূরকে অভিনন্দন জানিয়ে চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘সাবিলা নূর অভিনন্দন তোমাকে । এমন গান তো প্রায় সিনেমায় দেখি। আমার দেখা এই অবধি আমার দেশের এমন একটি গানে তুমিই বেষ্ট বেষ্ট বেষ্ট। সিনেমা তো ঈদের দিনেই দেখবো।তার আগেই এই এতটুকু দেখেই আমি মুগ্ধ। আসলে কাজ দিয়েই জবাব দিতে হয় যা তুমি পেরেছ। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক দূর তুমি যাবে এই ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রিতে। আমার বিশ্বাস।’’
চয়নিকা চৌধুরী তান্ডব টিমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন এই সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলকেও।
চয়নিকা চৌধুরী তার পোস্টের শেষে একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন, ‘‘লেখাটা আসলে শুধুই সাবিলা নূরের জন্যে ছিল।’’
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব র জন য পর চ ল প রক শ চয়ন ক
এছাড়াও পড়ুন:
রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি আবেগ, যা অনিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে ইসলাম রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
রাগ একটি মানসিক অবস্থা, যা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও প্রতিশোধের ইচ্ছা থেকে উৎপন্ন হয়। যখন এ উত্তেজনা তীব্র হয়, তখন ক্রোধের আগুনকে আরও উসকে দেয়। ফলে মানুষের মন ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং শিষ্টাচার ও নির্দেশনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।’ (আল-কুলায়নী, আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস: ১২)
নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।ইমাম বাকির (আ.), আল-কুলায়নী, আল-কাফিরাগকে অনেকে শক্তির প্রকাশ মনে করলেও এটি আসলে একটি দুর্বলতা। রাগের কারণে মানুষ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা তার জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়।
রাগের ক্ষতিরাগ যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে এটি ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব হলো উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অপরাধবোধ, হতাশা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।
সামাজিক পরিসরে রাগ সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। রাগের বশে মানুষ এমন কথা বলে বা কাজ করে, যা তার সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক ছিন্ন করে। কখনো কখনো এটি হত্যা বা রক্তপাতের মতো চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, রাগের কারণে মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এ ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা অপরিহার্য।
শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়রাগ একটি শক্তিশালী আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে কোরআন এ সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
এ আয়াতে রাগ দমনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
কোরআনে নবীদের জীবন থেকে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। নবী ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা তাঁকে পাথর ছুড়ে মারার হুমকি দিলে তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সুরা মারয়াম, আয়াত: ৪৭)
কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে, তা এই পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটি তাদের জন্য যারা ঈমান আনে, তাদের রবের ওপর ভরসা করে, বড় পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাগের সময় ক্ষমা করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৬-৩৭)
এ আয়াতে রাগ নিয়ন্ত্রণকে সততার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে।
আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি২৮ জুন ২০২৫হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপদেশইসলামে রাগকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪১. শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা: সুলায়মান ইবনে সারদ বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বসেছিলাম। দুজন লোক একে অপরের বিরুদ্ধে গালমন্দ করছিল। তাদের একজনের মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছিল।
নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটি কথা জানি, যদি সে তা বলে, তার এ অবস্থা দূর হয়ে যাবে। তা হলো, আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজিম (আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২)।
২. নীরব থাকা: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে সে যেন নীরব থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৯৩, ৪০২৭)
রাগের সময় কথা বললে অযৌক্তিক বা ক্ষতিকর কথা বেরিয়ে আসতে পারে, যা সম্পর্ক নষ্ট করে। তাই নীরব থাকা রাগ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায়।
৩. শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে যদি সে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সে যেন বসে পড়ে। তাতে তার রাগ দূর না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৬৪)
আবু জর (রা.) রাগের সময় এ নির্দেশ পালন করেছিলেন এবং শান্ত হয়েছিলেন।
৪. নবীর (সা.) পরামর্শ অনুসরণ: একজন সাহাবি নবীজি (সা.)-এর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বারবার বলেছিলেন, ‘ক্রুদ্ধ হয়ো না।’ (সহিহ বুখারি, ফাতহুল বারী, ১০/৪৫৬)
৫. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি স্মরণ: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, যখন তার রাগ প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার হৃদয়কে সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে দেবেন।’ (তাবারানি, হাদিস: ১২/৪৫৩)।
৬. নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ: মহানবী (সা.)-এর জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ উদাহরণ রয়েছে। একবার একজন বেদুইন তাঁর গলায় রুক্ষভাবে ধরে তাঁকে কিছু দেওয়ার দাবি করেন। নবীজি (সা.) শান্তভাবে হেসে তাঁকে কিছু দিতে আদেশ করেন। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৭৫)
৭. দোয়া: দোয়া মুমিনের শক্তিশালী অস্ত্র। নবীজি (সা.)-এর একটি দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রকাশ্যে ও গোপনে তোমার ভয় করার তৌফিক প্রার্থনা করি এবং সন্তুষ্টি ও রাগের সময় সত্য কথা বলার তৌফিক চাই।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস নং ৩০৩৯)
তবে রাগ যদি আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হয়, তবে তা প্রশংসনীয়। নবীজি (সা.) যখন দেখতেন যে কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করছে, তখন তিনি রাগ প্রকাশ করতেন, তবে তা ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করা যায়১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫