সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমিনুল ইসলাম (৫৫)। পাশেই ছিল তাঁর ব্যাটারিচালিত রিকশা। হঠাৎ একটি বাস এসে চাপা দেয় তাঁকে। সেখানে একটি পাকুড়গাছ ও বাসের মাঝখানে আটকা পড়েন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে আমিনুলের মৃত্যু হয়।

নিহত আমিনুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদি ইউনিয়নের কালপোয়া গ্রামে। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মধুখালী উপজেলার মেছরদিয়া মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।  

করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমিনুলের দুই পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছিল। দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথে বেলা আড়াইটার দিকে ভাঙ্গা এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের হাতে মরদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনমহাসড়কে পাকুড়গাছে বাসের ধাক্কা, বাস ও গাছের মাঝে আটকে আছেন এক ব্যক্তি৭ ঘণ্টা আগে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা থেকে যশোরগামী একটি বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মধুখালী উপজেলার মেছরদিয়া মোড় এলাকায় উল্টো দিক (ডান দিকে) দিয়ে গিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ানো একটি পাকুড়গাছে আঘাত করে। পাকুড়গাছ ও বাসের মধ্যে আটকে পড়েন আমিনুল ইসলাম। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একটি রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিকে টেনে বের করা হয়। এরপর আমিনুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনবাস ও গাছের মাঝে আটকে পড়া ব্যক্তিকে ২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার৪ ঘণ্টা আগে

আমিনুলের পরিবারে স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর ছোটে মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সয়েল আহমেদ বলেন, ‘আমিনুল ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটা নিঃস্ব হয়ে গেল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন ল পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যান্টার্কটিকার পর্বতমালার রহস্য উন্মোচন

৫০ কোটি বছর ধরে লুকানো এক পর্বতের রহস্য উন্মোচন করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই বরফাচ্ছন্ন অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের রহস্যের শেষ নেই। সেই অ্যান্টার্কটিকার বরফের গভীরে থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালার বৈচিত্র্য খোঁজার কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

পুরোনো পৃথিবীর বরফ সংরক্ষিত আছে, এমন পর্বত বলয়ের একটি অ্যান্টার্কটিকাতে আছে। বরফের নিচের থাকা গ্যাম্বুরতসেভ পর্বতমালা সাধারণভাবে ইউরোপীয় আল্পসের মতো। বিজ্ঞানীরা বরফের কয়েক কিলোমিটার নিচে গাম্বুরতসেভ উপহিমবাহনির্ভর পর্বতমালা সনাক্ত করেছেন। পর্বতমালা কয়েক কিলোমিটার বরফের নিচে অবস্থিত। ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে এই পর্বতমালা। ১৯৫৮ সালে একটি অভিযানের সময় ভূমিকম্প কৌশল ব্যবহার করে এই পবর্তমালার তথ্য প্রথম জানা যায়। ৫০ কোটি বছর ধরে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে এই পর্বতমালা।

বরফের নিচের লুকিয়ে থাকা গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা পূর্ব অ্যান্টার্কটিক বরফের সর্বোচ্চ বিন্দুর নিচে চাপা পড়ে আছে। যেখানে বেশির ভাগ পর্বতশ্রেণি ক্ষয় বা টেকটোনিক ঘটনার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়, সেখানে গাম্বুরতসেভ পর্বতমালা বরফের গভীর স্তরে বহু বছর ধরে সংরক্ষিত আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত পর্বত বলয় বলা হচ্ছে এই পবর্তমালাকে।

দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে পর্বতমালা তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব কাঠামো পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের পর হিমালয় পবর্তমালা তৈরি হয়। হিমালয় পর্বতশ্রেণির এখনো উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা এত দিন ধরে কীভাবে স্থিতিশীল আছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা।

আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটারস জার্নালে অ্যান্টার্কটিকার পবর্তমালা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানা সুপার মহাদেশ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়। তখন থেকে অ্যান্টার্কটিকার পর্বতশ্রেণি বিকাশ লাভ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই সংঘর্ষের ফলে পাহাড়ের নিচে গরম ও আংশিকভাবে গলিত শিলার প্রবাহ শুরু হয়েছিল। পর্বত আকার ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভূত্বক ঘন হয়ে ওঠে। অনেক সময় পবর্তের নিজস্ব ওজনের কারণে ভেঙে পড়ে পর্বতকাঠামো।

বিজ্ঞানী জেফ বেনোভিটজ বলেন, অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর অ্যান্টার্কটিকার ভূতত্ত্বকে ঢেকে রেখেছে। ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিকা বেসমেন্ট শিলা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বরফের নিচের ভূপ্রকৃতির বিকাশ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রদান করতে পারে। প্রাচীন সময়ের ল্যান্ডস্কেপ কেমন ছিল, তা জানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। গবেষকেরা পবর্তের তথ্য আহরণের জন্য জিরকন নামের খনিজের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই খনিজ ভূতাত্ত্বিক স্টপওয়াচের মতো কাজ করে। এই ক্ষুদ্র স্ফটিক কোটি কোটি বছর ধরে টিকে থাকতে পারে। জিরকনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম ধারণ করতে পারে। ইউরোনিয়ামের ক্ষয় থেকে বিজ্ঞানীরা নির্ভুলতার সঙ্গে বয়স নির্ধারণ করতে পারে। এসব খনিজের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫৮ কোটি বছর আগে পর্বতশৃঙ্গ তৈরি হয়। আর ৫০ কোটি বছর আগে সেখানে কাঠামোগত পতনের শুরু হয়েছিল।

বরফের মধ্য দিয়ে খনন করে শিলার নমুনা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। সেখানে খনিজের উপস্থিতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও তথ্য সংগ্রহ করতে নতুন মডেল নিয়ে কাজ করছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ