আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা
Published: 12th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ চতুর্থ পর্বে থাকছে, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
প্রতিবারের মতো এবারও আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ থেকে দুটি প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নম্বর থাকবে ১৫।
১৬৭টি ধারা নিয়ে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২। আইনটি যেহেতু সাক্ষ্য, প্রমাণ, জবানবন্দি ও জেরাসংক্রান্ত, তাই দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের মামলায় এটি ব্যবহৃত হয়। ফলে সাক্ষ্য আইনের প্রতিটি ধারা, উপধারা ও ব্যাখ্যা বেশ গুরুত্বসহকারে পড়তে, লিখতে ও বুঝতে হবে। এরপরও আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় বেশির ভাগ সময়ে নির্দিষ্ট অধ্যায় বা অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। ফলে অধিক চর্চিত ধারাগুলো গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে।
বেশি বেশি যা পড়বেন
সাক্ষ্য আইনের শুরুতেই বেশ কিছু সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এই সংজ্ঞাগুলো টিকা বা শর্ট নোট আকারে পরীক্ষায় আসতে পারে। ফলে সংজ্ঞাগুলো পড়তে হবে। পরের অংশে অনুমান, ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা, স্বীকৃতি, দোষ স্বীকারোক্তি, ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তির রেকর্ড করার আইনি আনুষ্ঠানিকতা, সহ–আসামির স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে অপর আসামিকে শাস্তি দেওয়া যায় কি?, মৃত্যুকালীন ঘোষণা, যদি মৃত্যুকালীন ঘোষণাকারী বেঁচে যায়, তার ফলাফল কী হতে পারে বিশারদের অভিমত, যেসব ঘটনা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই, মৌখিক সাক্ষ্য, দালিলিক সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, বিচার্য বিষয়, সত্যায়িত দলিলের প্রমাণ, প্রমাণের দায়িত্ব, এস্টোপেল, সাক্ষীর পরীক্ষা, সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, প্লি অব অ্যালিবাই কী? ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন, বৈরী সাক্ষীর সংশ্লিষ্ট ধারা, ব্যাখ্যা ও উদাহরণগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হন প্রশ্ন না বুঝে লেখার কারণে। ফলে সংশ্লিষ্ট আইনের ওপর বিগত সালে যত ধরনের প্রশ্ন এসেছে, সব কটির সমাধান করতে হবে। প্রশ্নগুলো একবার হলেও পড়তে হবে। এতে প্রশ্নপত্রের প্রশ্নগুলো সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে। মূলত বেয়ার অ্যাক্ট বা মূল আইনে ধারার শিরোনাম ও ধারার বক্তব্য সুসংগঠিতভাবে লেখা থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় প্রশ্ন হুবহু মূল আইনের ধারার মতো হবে না। ধারার সঙ্গে মিল রেখে কৌশলী বা সমস্যামূলক প্রশ্ন আসবে। ফলে আগে থেকেই এ সম্পর্কে সচেতনভাবে পড়াশোনা করতে হবে।
পরীক্ষার হলে যেভাবে লিখবেন
কয়েক বছর ধরেই আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় সরল বাক্যে প্রশ্নের পরিবর্তে সমস্যামূলক প্রশ্ন বেশি আসছে। ফলে সমস্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার কয়েকটি ধরন আয়ত্ত করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। ফলে প্রশ্নপত্রে যেকোনো ধরনের প্রশ্নই আসতে পারে। তাই রচনামূলক প্রশ্নের প্রস্তুতিও থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি ধারার গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি প্রশ্নে হুবহু তুলে দিয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। আবার কখনো কখনো একটি বা একাধিক ধারার কনসেপ্টের সঙ্গে মিল রেখে প্রশ্ন করা হয়, যা ধারার মধ্যে সরাসরি বলা নেই। তবে ধারার মূল বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। এসব প্রশ্নকে ট্রিকি বা কৌশলী প্রশ্ন বলা হয়। যেমন মাঝেমধ্যেই একটি প্রশ্ন আসে—প্লি অব অ্যালিবাই কী? ব্যাখ্যা করুন। সাক্ষ্য আইনের কোথাও সরাসরি প্লি অব অ্যালিবাইয়ের কথা উল্লেখ নেই। তবে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি, যা সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারার সঙ্গে মেলে। চলুন দেখে নিই, এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লেখা উচিত—প্লি অব অ্যালিবাইয়ের অর্থ হচ্ছে অন্যত্র। অর্থাৎ যে ঘটনার জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তিনি চাইলে ডিফেন্স হিসেবে বলতে পারেন, তিনি ঘটনার সময় উক্ত স্থানে ছিলেন না।
কাজী মাহবুবুদ্দিন আহমেদ বনাম রাষ্ট্র, ৫৭ ডিএলআর (২০০৫) ৫১৩ মামলায় বলা হয়, অ্যালিবাই অভিযুক্তের পক্ষ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করা সুবিধাজনক শব্দ, যার অর্থ ঘটনাটি ঘটার সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে এত দূরে ছিলেন যে অপরাধে অংশ নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
সাক্ষ্য আইনের ১১ ও ১০৩ ধারায় এ–সংক্রান্ত বিধান আলোচনা করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১০৩ ধারা অনুসারে আসামি যদি প্রমাণ করাতে চান, তিনি অপরাধ সংঘটনের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন না (অর্থাৎ প্লি অব অ্যালিবাইয়ের দাবি), তাহলে উক্ত দাবিটি দাবিকারকেরই প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার অস্তিত্ব যে দাবি করবে, তাকেই তা প্রমাণ করতে হবে।
উদাহরণ: ‘এ’ চুরির দায়ে ‘বি’কে অভিযুক্ত করে। ‘এ’ আদালতকে বিশ্বাস করাতে চায়, ‘বি’ চুরির কথা ‘সি’–এর কাছে স্বীকার করেছে। এখন স্বীকৃতির বিষয়টি ‘এ’কে প্রমাণ করতে হবে। অপর দিকে ‘বি’ আদালতকে বিশ্বাস করাতে চায়, সে অপরাধ সংঘটনের সময়ে অন্য জায়গায় ছিল। এটা ‘বি’কে প্রমাণ করা হবে।
লিখিত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা যদি এভাবে সংশ্লিষ্ট আইন, কেস রেফারেন্স ও উদাহরণ দিয়ে লিখতে পারেন, তবে সাক্ষ্য আইনে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল ক ভ ক ত র ল খ ত পর ক ষ ল খ ত পর ক ষ য় স ক ষ য আইন র অব অ য ল ব ই পর ক ষ র আইনজ ব র সময় ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।