অধিকাংশ বাঙালি নারীই এখনো বঁটিতে কাটাকুটির কাজ করেন। মসলা পেষার মূল সহায় এখনো শিলপাটা। মাটির চুলাতে হয় রান্না। জ্বালানির উৎস ঘুঁটে, কাঠ আর খড়ি। পরম মমতায় পরিবারের সবার জন্য এভাবেই খাবার তৈরি করেন এ দেশের নারীরা। দেশের বহু এলাকায় এখনো এমন চিত্র দেখা যায়। বছরের পর বছর ধরে এভাবে যাঁরা কাজগুলো করেন, তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাটা আমরা অনেকেই ভাবি না। ঝুঁকে বসে কাজ করতে করতে তাঁরা ঘাড় কিংবা কোমরব্যথায় ভোগেন। অথচ মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়িয়ে কাজগুলো করা গেলে এমন সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তাই এমন যন্ত্র সবারই প্রয়োজন, মেরুদণ্ড সোজা রেখেই যা ব্যবহার করা যায়। এগুলো বিলাসিতা না। ধোঁয়াতেও বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই বিকল্প চুলার ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।

এমন কিছু যন্ত্র এবং অনুষঙ্গের কথা জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো রান্নার কাজকে সহজ করে, কমায় স্বাস্থ্যঝুঁকি।

ইনডাকশন চুলা

মাটির চুলার চেয়ে গ্যাসের চুলায় ধোঁয়া কম হয়। তবে অনেক এলাকাতেই গ্যাসের চাপ কম থাকে বলে ঠিকঠাক রান্না করা যায় না। বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারও সব ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো সমাধান না। কারণ, সরবরাহকৃত গ্যাসে রান্নার চুলা আর সিলিন্ডার গ্যাসে রান্নার চুলা আলাদা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে ইনডাকশন চুলা। এই চুলায় তুলনামূলক কম ঝক্কিতেই রান্না সারা যায়। তবে এই চুলায় রান্নার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট ধরনের পাত্র ব্যবহার করতে হবে।

আরও যত কুকার

রান্নার জন্য বিভিন্ন ধরনের কুকার কাজে লাগাতে পারেন। প্রেশার কুকারের সাহায্যে চুলাতেই কম সময়ে রান্না করা সম্ভব। খাবার সেদ্ধ করার কাজটা বেশ সহজেই হয়ে যায়। নরম তুলতুলে কেকও তৈরি করা যায়। রাইস কুকার ও কারি কুকারে রান্না হয়ে ওঠে নিতান্তই সহজ এক কাজ। রাইস কুকারে যে কেবল ভাতই রান্না করা যায়, তা নয়। এতে তরিতরকারিও রান্না করা যায়। আবার কারি কুকারেও রান্না করা যায় ভাত। কিছু কুকারে ভাপে রান্নার ব্যবস্থাও থাকে। সহজে রান্নার জন্য বাজারে আরও আছে ডিজিটাল মাল্টিকুকার।

ওভেন

বৈদ্যুতিক ওভেন এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা ছাড়াও নানান রকম পদ রান্না করা যায়। তবে নির্দিষ্ট ধরনের পাত্র ও প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট ধরনের ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে। ওভেনের গরম জিনিস ধরার জন্য বিশেষ ধরনের গ্লাভসও ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।

ওভেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র জন য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়

ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপে বরিশাল নদীবন্দরে সেই চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর থেকেই বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রীদের ঢল নামে। কে কার আগে এসে লঞ্চে জায়গা নেবেন, এ নিয়ে শুরু হয় জোর তৎপরতা। শুক্রবার বরিশাল নদীবন্দর থেকে সরাসরি ১২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া ভায়া পথে আরেকটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

বিকেলে বরিশাল নদীবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পরিসরের পন্টুনে যাত্রীদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাই নেই। ঘাটে ১২টি লঞ্চ নোঙর করা। লঞ্চগুলোর নিচতলা, দোতলা, তিনতলা এমনকি ছাদের ডেকে বিছানার চাদর বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য যাত্রী।

আরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজ যে অবস্থা তাতে লঞ্চে জায়গা পাব বলে মনে হচ্ছিল না। তাই দুপুরের মধ্যে ঘাটে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি, তখনই সব লঞ্চের ডেক প্রায় পরিপূর্ণ। ভাগ্য ভালো যে একটু জায়গা পেয়েছি। কিছু পরে এলে হয়তো তা-ও পেতাম না।’

ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছিল ৩ জুন রাত থেকে। লঞ্চমালিকদের সূত্র বলছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ সার্ভিসের জন্য তাঁরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এর অংশ হিসেবে এ সার্ভিসে যুক্ত করা হয় অন্তত ১৬টি লঞ্চ। ঈদের এ বিশেষ যাত্রা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী গ্রামে ফেরেন। ঈদের পর দুই দিন যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। এ সময় চার থেকে ছয়টি লঞ্চ চলাচল করেছে, কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ১১টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে। আজ যাত্রীদের চাপ আরও বেড়ে গেলে লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২টি করা হয়।

অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর নদীপথে যাত্রী সংখ্যা তলানিতে নামে। এ জন্য প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি লঞ্চের বদলে দুটিতে নামিয়ে এনে রোটেশন প্রথা চালু করা হয়। তবে ঈদের যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায় বলে অতিরিক্ত লঞ্চ দিয়ে বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

তবে ঈদযাত্রায় ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজারের জায়গায় এখন ১ হাজার ২০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার স্থলে ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকার জায়গায় ৪০০ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হলেও কেবিনের টিকিট মিলছে না। লঞ্চে গেলে কেবিন নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও কালোবাজারে সিঙ্গেল কেবিন তিন হাজার এবং ডাবল কেবিন ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাকিবুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, শুক্রবার ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিনি কোনো লঞ্চের কেবিন পাননি। কিন্তু কালোবাজারে তাঁর কাছে একটি সিঙ্গেল কেবিন তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললেও তা পাননি।

জানতে চাইলে সুরভী শিপিং লাইনসের পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমরা সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার কম নিয়েই যাত্রী পরিবহন করি। এতে অনেক সময় আমাদের লোকসানে থাকতে হয়। কিন্তু ঈদের সময় সরকার-নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে তা কিছুটা পোষাতে হয়।’ কালোবাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে মালিক বা লঞ্চের স্টাফদের সংশ্লিষ্টতা নেই। হয়তো বাইরের কেউ আগে নিজেদের নামে বুকিং দিয়ে এসব করতে পারে। বাইরের কেউ এমন করলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, দেশে নৌপথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বেশি যাত্রী চলাচল করে ঢাকা-বরিশাল পথে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই নৌপথে যাত্রীসংখ্যা কমে যায়। আগে যেখানে প্রতিদিন ছয় থেকে আটটি লঞ্চ চলাচল করত, এখন প্রতিদিন দুটি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদের সময় যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে বরাবরই। এবার তা অনেক বেশি।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় আগের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী গ্রামে ফিরেছেন। তাই এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাওয়া পাচ্ছে লঞ্চগুলোয়। বিশেষ করে ঈদের তিন দিন আগে এবং ঈদের দুই দিন পর থেকে যাত্রীদের এত চাপ যে তাঁদের দম ফেলার সময় নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ