এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার শিকার বোয়িং ৭৮৭ মডেলের কোনো উড়োজাহাজ এর আগে কখনও এভাবে ভেঙে পড়েনি। বোয়িং ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজটি ‘ড্রিমলাইনার’ নামেও পরিচিত, যা ১৪ বছর আগে আকাশে উড্ডয়ন করে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি মডেলটির ১০০ কোটি যাত্রী পরিবহনের মাইলফলক উদ্‌যাপন করেছে।

সে উপলক্ষে কোম্পানিটি জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ১৭৫টির বেশি ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ প্রায় ৫০ লাখ ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। এ সময় মডেলটির ফ্লাইটগুলো তিন কোটি ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে ছিল।

এ দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য বড় একটি ধাক্কা। এমন এক সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন কোম্পানিটি ৭৩৭ সিরিজের উড়োজাহাজ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

৭৮৭-৮ বোয়িং ড্রিমলাইনার প্রথম বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু করেছিল ২০১১ সালে। এই বিমানটি প্রযুক্তি, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য অসাধারণ। বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ (ANA), জাপান এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, ল্যাটাম এয়ারলাইন্স এই বোয়িং ব্যবহার করে।

বোয়িং ৭৮৭-৮ কোন দিক থেকে আলাদা?

এটাই ড্রিমলাইনার পরিবারের প্রথম মডেল - বোয়িং ৭৮৭-৮ হল ৭৮৭ সিরিজের প্রথম সংস্করণ।
আন্তর্জাতিক দীর্ঘপথের উপযোগী- ১৩,৫৩০ কিমি পর্যন্ত উড়তে পারে।
সাধারণত ২৫৬ যাত্রী বহন করতে সক্ষম (২-ক্লাস লেআউটে)।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছিল এই বোয়িং। বিমানটির প্রায় ৫০ শতাংশ অংশ তৈরি হয়েছে কার্বন ফাইবার কম্পোজিট দিয়ে। ফলে এটি অনেক হালকা ও টেকসই। প্রচলিত পদ্ধতির বদলে উন্নত ইলেকট্রিক সিস্টেম ব্যবহারে জ্বালানি সাশ্রয় হয়। রোলস-রয়েস ট্রেন্ট ১০০০ অথবা জেনারেল ইলেকট্রিকের GEnx-1B ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে এবং ডানার বিশেষ ডিজাইন বাতাসে ঘর্ষণ কমায় এবং জ্বালানি খরচ বাঁচায়।

এছাড়াও ২০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় পুরনো ৭৬৭ মডেলের তুলনায়। কার্বন নিঃসরণ কমায়। ফলে ছোট শহর থেকে বড় শহরের সরাসরি ফ্লাইটে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

২০১৩ সালে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির সমস্যা তৈরি হলেও দ্রুত নতুন ডিজাইন ও সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানটি এখন অন্যতম নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিমান হিসেবে সুপরিচিত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ধ বস ত ন হত দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ