এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ সম্পর্কে কিছু তথ্য
Published: 12th, June 2025 GMT
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার শিকার বোয়িং ৭৮৭ মডেলের কোনো উড়োজাহাজ এর আগে কখনও এভাবে ভেঙে পড়েনি। বোয়িং ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজটি ‘ড্রিমলাইনার’ নামেও পরিচিত, যা ১৪ বছর আগে আকাশে উড্ডয়ন করে। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি মডেলটির ১০০ কোটি যাত্রী পরিবহনের মাইলফলক উদ্যাপন করেছে।
সে উপলক্ষে কোম্পানিটি জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ১৭৫টির বেশি ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ প্রায় ৫০ লাখ ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। এ সময় মডেলটির ফ্লাইটগুলো তিন কোটি ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে ছিল।
এ দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য বড় একটি ধাক্কা। এমন এক সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন কোম্পানিটি ৭৩৭ সিরিজের উড়োজাহাজ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
৭৮৭-৮ বোয়িং ড্রিমলাইনার প্রথম বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু করেছিল ২০১১ সালে। এই বিমানটি প্রযুক্তি, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য অসাধারণ। বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ (ANA), জাপান এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, ল্যাটাম এয়ারলাইন্স এই বোয়িং ব্যবহার করে।
বোয়িং ৭৮৭-৮ কোন দিক থেকে আলাদা?
এটাই ড্রিমলাইনার পরিবারের প্রথম মডেল - বোয়িং ৭৮৭-৮ হল ৭৮৭ সিরিজের প্রথম সংস্করণ।
আন্তর্জাতিক দীর্ঘপথের উপযোগী- ১৩,৫৩০ কিমি পর্যন্ত উড়তে পারে।
সাধারণত ২৫৬ যাত্রী বহন করতে সক্ষম (২-ক্লাস লেআউটে)।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছিল এই বোয়িং। বিমানটির প্রায় ৫০ শতাংশ অংশ তৈরি হয়েছে কার্বন ফাইবার কম্পোজিট দিয়ে। ফলে এটি অনেক হালকা ও টেকসই। প্রচলিত পদ্ধতির বদলে উন্নত ইলেকট্রিক সিস্টেম ব্যবহারে জ্বালানি সাশ্রয় হয়। রোলস-রয়েস ট্রেন্ট ১০০০ অথবা জেনারেল ইলেকট্রিকের GEnx-1B ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে এবং ডানার বিশেষ ডিজাইন বাতাসে ঘর্ষণ কমায় এবং জ্বালানি খরচ বাঁচায়।
এছাড়াও ২০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় পুরনো ৭৬৭ মডেলের তুলনায়। কার্বন নিঃসরণ কমায়। ফলে ছোট শহর থেকে বড় শহরের সরাসরি ফ্লাইটে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
২০১৩ সালে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির সমস্যা তৈরি হলেও দ্রুত নতুন ডিজাইন ও সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানটি এখন অন্যতম নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিমান হিসেবে সুপরিচিত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ধ বস ত ন হত দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫