বন্ধ হওয়ার দুদিন পর দর্শনার্থীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি
Published: 13th, June 2025 GMT
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার দুদিন পর দর্শনার্থীদের জন্য আবারো উন্মুক্ত হলো সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি।
শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন দিয়ে কাছারি বাড়িতে প্রবেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। কাছারিবাড়িতে প্রবেশ উন্মুক্ত করায় দর্শনার্থীরা ভেতরে ঢুকতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। এর আগে প্রবেশ টোকেন নিয়ে প্রবাসী এক দর্শনার্থীর সঙ্গে স্টাফদের গণ্ডগোলের জেরে বন্ধ করা হয় প্রবেশ অধিকার।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে কোনোপ্রকার হামলার ঘটনা ঘটেনি। সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে কাছারিবাড়ি। হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ির পাশেই অবস্থিত অডিটোরিয়ামে। সেটাও কাছারিবাড়িকে টার্গেট করে নয়। কোনও মৌলবাদ বা কোনও রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি। সেইসঙ্গে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে আর কোনও নিরাপত্তার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে সব দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
দুপুরে উন্মুক্ত করার সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো.
তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হবে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সহায়তায় কবিগুরুর কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা নেই। ঘটনায় সাথে জড়িত জুবায়ের, আশিকুর রহমান, সজীব, রিমন, তানভীর, সারদুল, আব্দুস সালামসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত (৮ জুন) প্রবাসী শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে গেলে পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই দর্শনার্থীকে অডিটোরিয়ামের ভেতরে আটকে মারধর করে এবং পিটিয়ে আহত করে। পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় ওইদিন রাতেই কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার দুইদিন পরও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা থানা পুলিশ না নেওয়ায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা গত (১০ জুন) শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করে অডিটোরিয়ামের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের ৩ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
একই দিনে কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সহায়তায় গত দুদিনে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে শাহজাদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আসলাম আলী শুক্রবার বিকেলে সমকালকে জানিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ রব ন দ র ক ছ র ব র রহম ন প রব শ র জন য ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ–লাগোয়া ধুবড়িতে ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ আসামের মুখ্যমন্ত্রীর
বাংলাদেশ–লাগোয়া পশ্চিম আসামের ধুবড়ি জেলায় ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, ধুবড়ি জেলায় রাতে দেখামাত্র গুলি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারাই পাথর ছুড়বে, তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হবে।
ধুবড়ি জেলায় একটি হনুমান মন্দিরের কাছে গত রোববার প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। এ নিয়ে সেখানে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পরিস্থিতি দেখতে গতকাল শুক্রবার ধুবড়ি জেলায় যান মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা।
এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ধুবড়িতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী মন্দিরের ক্ষতি করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
শুক্রবার ধুবড়ি সফর শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আসামের রাজধানী গৌহাটিতে পৌঁছে দুষ্কৃতকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেবেন।
মন্দিরে মাংস রাখার ঘটনাকে ‘বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করে বিশ্বশর্মা দাবি করেন, ঈদের আগের দিন, ‘নবীন বাংলা’ নামে একটি দল ধুবড়িকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে পোস্টার লাগিয়েছে। একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধুবড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও আধা–সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং যেসব অপরাধীর নামে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী আসামের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের চক্রও আসামে সক্রিয় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বকরি ঈদের সময় কিছু লোক গরুর মাংস খায়। এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার গবাদিপশু আনা হয়েছে। ধুবড়িতে একটি “গরুর মাফিয়া চক্র” গড়ে উঠেছে। এরা উৎসবের ঠিক আগে হাজার হাজার পশু সংগ্রহ করেছে।’
কথিত এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বশর্মা।
এই হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর ঈদের দিন আমি ধুবড়ি আসব ও পরদিনও থাকব। আমরা সম্প্রদায়ের একটি অংশকে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অনুমতি দিতে পারি না।’
আসামের বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচনের বাকি ৯ থেকে ১০ মাস। আসামে নির্বাচনের আগে বিষয়টিকে একটি ইস্যু হিসেবে দেখছে সব পক্ষই।
কিছু বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রায় এক বছর আগে থেকে নির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।