ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
Published: 13th, June 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীকে মারধর এবং হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বাইরে কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এ ঘটনায় রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কোনো নিদর্শন নষ্ট হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দুটি কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার থেকে কাছারিবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ এটি খুলে দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন তুলে দেন।
এ সময় নজরুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। এটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ির পাশে রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে। সেটাও কাছারিবাড়িকে লক্ষ্য করে নয়, বরং প্রবেশ টোকেন নিয়ে এক প্রবাসী দর্শনার্থীর সঙ্গে কাছারিবাড়ির স্টাফদের ব্যক্তিগত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কোনো মৌলবাদ বা রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি।
এদিন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কাছারিবাড়ি পরিদর্শন করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের পরিচালক সাইফুর রহমান প্রমুখ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেখে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত জুবায়ের, আশিকুর রহমান, সজীব, রিমন, তানভীর, সারদুল, আব্দুস সালামসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৮ জুন মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে কাছারিবাড়িতে এক দর্শনার্থীকে আটকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দর্শনার্থী মো.
এ ঘটনায় কাস্টোডিয়ান হাবিবুর বাদী হয়ে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় ১০ জনের নামে বুধবার থানায় মামলা করেন। মামলার পর দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আট জনকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন শাহজাদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আসলাম আলী।
এদিকে কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কাছারিবাড়িতে হামলার ঘটনাকে জঘন্য উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানান জয়সোয়াল।
এ ছাড়া কাছারিবাড়িতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে মোদিকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র ঘটন য় রব ন দ র ব যবস থ তদন ত এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বাবা-ছেলের রিমান্ড: এএসআই ক্লোজড, এসআইকে বদলি
মাদকসহ গ্রেপ্তার আনোয়ার হোসেন (৪৯) ও তার ছেলে মানিক মিয়ার (২৯) রিমান্ডের ঘটনায় ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে রৌমারী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমানকে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। একই সময় উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আওয়ালকে ঢুষমারা থানায় বদলি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নন্দলাল চৌধুরী।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা যাদুরচর ইউনিয়নের আলগার চর সীমান্ত এলাকায় রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালায় পুলিশের একটি দল। এ সময় মাদকসহ আনোয়ার হোসেন ও তার ছেলে মানিক মিয়াকে আটক করা হয়। আটকের পর থানায় নেওয়ার পথে স্বজন ও এলাকাবাসী তাদের ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা চালান। এ সময় আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা করা হয়। পরে ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয় ও ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার মাদক ব্যবসায়ী বাবা ও ছেলেকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে ওই দুই আসামিকে আনতে কুড়িগ্রামে পাঠানো হয় এএসআই হাবিবুর রহমানসহ দুই কনস্টেবলকে। কিন্তু আসামিদের সঙ্গে এএসআই আসেননি। ফলে দায়িত্ব অবহেলার কারণে এএসআই হাবিবুর রহমানকে ক্লোজড করা হয়। একই সময়ে বদলি করা হয় এসআই আব্দুল আওয়ালকে।
রৌমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নন্দলাল চৌধুরী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রিমান্ডের দুই আসামিকে আনতে কুড়িগ্রামে পাঠানো হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমানসহ দুই কনস্টেবলকে। কিন্তু রিমান্ডের ওই দুই আসামির সঙ্গে না এসে কনস্টেবলদের মাধ্যমে তাদের থানায় পাঠিয়ে দেন এএসআই হাবিবুর রহমান। দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। আর প্রশাসনিক কারণে উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আওয়ালকে ঢুষমারা থানায় বদলি করা হয়েছে।