আদ জাতি ছিল প্রাচীন আরবের এক শক্তিশালী গোত্র, যারা ছিল তাদের অসাধারণ শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও সম্পদের জন্য বিখ্যাত। তবে তাদের অহংকার ও আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুতি তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য নবী হুদ (আ.)-কে পাঠান, কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং উপহাস করে। আল্লাহ ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় প্রেরণ করেন, যা আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।

আদ জাতির শক্তি ও গৌরব

আদ জাতি বাস করত সৌদি আরবের ইরাম নগরীতে, যা কোরআনে ‘জাতুল ইমাদ’ বা ‘স্তম্ভসমৃদ্ধ নগরী’ নামে উল্লিখিত। তারা ছিল দৈত্যাকার, অসাধারণ শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান। তারা পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করত এবং সুন্দর স্তম্ভ দিয়ে নগরী সাজাত। কোরআনে তাদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, ‘তোমরা কি দেখোনি, কীভাবে তোমার রব আদ জাতির সঙ্গে আচরণ করেছিলেন? যারা ছিল ইরামের স্তম্ভসমৃদ্ধ নগরীর অধিবাসী, যাদের মতো শক্তিশালী আর কেউ সৃষ্ট হয়নি।’ (সুরা ফাজর: ৬-৮)

তারা এত শক্তিশালী ছিল যে হাত দিয়ে গাছ উপড়ে ফেলতে পারত। তাদের সম্পদ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা তাদের সময়ের অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু এই শক্তি ও সম্পদই তাদের অহংকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ভাবতে শুরু করে, তাদের শক্তির কাছে কিছুই অসম্ভব নয় এবং তারা আল্লাহর প্রয়োজন মুক্ত।

তারা পৃথিবীতে অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী কে আছে?’ তারা কি দেখেনি যে আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে শক্তিশালী?’সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৫আরও পড়ুনআল্লাহর নিদর্শন উট হত্যা করেছিল সামুদ জাতি২১ মার্চ ২০২৪

অহংকার ও পাপাচার

আদ জাতির অহংকার তাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে। তারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস ত্যাগ করে। তারা গঠন করেছিল দস্যু দল, যারা মানুষকে লুটত, এমনকি হত্যাও করত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা পৃথিবীতে অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী কে আছে?’ তারা কি দেখেনি যে আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে শক্তিশালী?’ (সুরা ফুসসিলাত: ১৫)

তাদের এই অহংকার ও পাপাচার তাদের ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ভুলে যায় যে তাদের শক্তি ও সম্পদ আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকে।

নবী হুদ (আ.

)-এর দাওয়াত

আল্লাহ আদ জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য নবী হুদকে (আ.) প্রেরণ করেন। হুদ (আ.) তাদের আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের শক্তি ও সমৃদ্ধি আল্লাহর নেয়ামত এবং তারা যেন অহংকার ত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। কোরআনে হুদ (আ.)-এর কথা বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তোমরা কি ভয় করবে না?’ (সুরা হুদ: ৫০)

পরদিন ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানে, যা কোরআনে ‘রিহুন আকিম’ বা ‘ধ্বংসকারী ঝড়’ নামে বর্ণিত। এই ঝড় সাত দিন ও আট রাত ধরে চলে এবং আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।

কিন্তু আদ জাতি হুদ (আ.)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর উপহাস করে। তারা বলে, ‘তুমি কি আমাদেরকে এই বলতে এসেছ যে আমরা আমাদের দেবতাদের ইবাদত ত্যাগ করি? তুমি যা বলছ, তা সত্য হলে তা নিয়ে এসো!’ (সুরা আল-আহকাফ: ২২) তাদের এই উপহাস ও অবাধ্যতা আল্লাহর শাস্তিকে ত্বরান্বিত করে।

আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪

আল্লাহর শাস্তি ‘ঝড়’

আদ জাতির অবাধ্যতা ও অহংকারের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করেন। তিনি হুদ (আ.)-কে তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীদের নিয়ে নগরীর কাছে একটি গুহায় আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেন। কোরআনে এই গুহার অবস্থান দক্ষিণ আরব উপদ্বীপে, সম্ভবত পূর্ব ইয়েমেন বা পশ্চিম ওমানে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরদিন ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানে, যা কোরআনে ‘রিহুন আকিম’ বা ‘ধ্বংসকারী ঝড়’ নামে বর্ণিত। এই ঝড় সাত দিন ও আট রাত ধরে চলে এবং আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তারা তা দেখল, তখন বলল, “এ তো এক মেঘ!” কিন্তু তা ছিল তাদের জন্য শাস্তি। আমরা তাদের ওপর এক প্রচণ্ড ঝড় প্রেরণ করলাম, যা তাদের ধ্বংস করে দিল।’ (সুরা আল-আহকাফ: ২৪-২৫) শুধু হুদ (আ.) এবং তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীরা এই শাস্তি থেকে রক্ষা পান।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফর্মেশন ডটকম

আরও পড়ুনদোলনা থেকে কথা বলা তিন শিশু২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ ব স কর আম দ র আল ল হ র জন য ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

না ফেরার দেশে সাংবাদিক সামাদ মতিনের সহধর্মিণী এড. সুরাইয়া মতিন

ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব নারায়ণগঞ্জের সদস্য এম. সামাদ মতিনের সহধর্মিণী প্রবীন  সাংবাদিক ও স্বনামধন্য আইনজীবী সুরাইয়া মতিন (৫৪) আর নেই। ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি  রাজিউন)। 

বুধবার (৩০ জুলাই) ভোর রাতে ফতুল্লার নিজ বাস ভবনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সকলের মাঝ থেকে চীর বিদায় নেন। মরহুমার যানাযার নামাজ  বাদ জোহর ফতুল্লা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে  অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ী কবরস্থানে তার মৃতদেহ দাফন করা হয়। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লা রেল-স্টেশনে এর স্থায়ী বাসিন্দা মৃত হাজী নূরুল ইসলাম এর তৃতীয় কণ্যা সুরাইয়া মতিন এর সহিত ১৯৮৭ সালে ইসলামি বিধান মতে এম সামাদ মতিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

জীবদ্দশায় তিনি দৈনিক খবর, চিত্র বাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সততা ও সাহসিকতার সহিত  সাংবাদিকতা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং  নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় দক্ষতা ও  সুনামের সহিত উকালতি করেছেন। 

মৃত্যুকালে স্বামী, তিন কণ্যাসহ অনেক আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী  রেখে যান। মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা  করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ