আদ জাতি ও ইরাম নগরী ধ্বংসের কাহিনি
Published: 14th, June 2025 GMT
আদ জাতি ছিল প্রাচীন আরবের এক শক্তিশালী গোত্র, যারা ছিল তাদের অসাধারণ শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও সম্পদের জন্য বিখ্যাত। তবে তাদের অহংকার ও আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুতি তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য নবী হুদ (আ.)-কে পাঠান, কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং উপহাস করে। আল্লাহ ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় প্রেরণ করেন, যা আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।
আদ জাতির শক্তি ও গৌরব
আদ জাতি বাস করত সৌদি আরবের ইরাম নগরীতে, যা কোরআনে ‘জাতুল ইমাদ’ বা ‘স্তম্ভসমৃদ্ধ নগরী’ নামে উল্লিখিত। তারা ছিল দৈত্যাকার, অসাধারণ শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান। তারা পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করত এবং সুন্দর স্তম্ভ দিয়ে নগরী সাজাত। কোরআনে তাদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, ‘তোমরা কি দেখোনি, কীভাবে তোমার রব আদ জাতির সঙ্গে আচরণ করেছিলেন? যারা ছিল ইরামের স্তম্ভসমৃদ্ধ নগরীর অধিবাসী, যাদের মতো শক্তিশালী আর কেউ সৃষ্ট হয়নি।’ (সুরা ফাজর: ৬-৮)
তারা এত শক্তিশালী ছিল যে হাত দিয়ে গাছ উপড়ে ফেলতে পারত। তাদের সম্পদ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা তাদের সময়ের অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু এই শক্তি ও সম্পদই তাদের অহংকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ভাবতে শুরু করে, তাদের শক্তির কাছে কিছুই অসম্ভব নয় এবং তারা আল্লাহর প্রয়োজন মুক্ত।
তারা পৃথিবীতে অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী কে আছে?’ তারা কি দেখেনি যে আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে শক্তিশালী?’সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৫আরও পড়ুনআল্লাহর নিদর্শন উট হত্যা করেছিল সামুদ জাতি২১ মার্চ ২০২৪অহংকার ও পাপাচার
আদ জাতির অহংকার তাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে। তারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস ত্যাগ করে। তারা গঠন করেছিল দস্যু দল, যারা মানুষকে লুটত, এমনকি হত্যাও করত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা পৃথিবীতে অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী কে আছে?’ তারা কি দেখেনি যে আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে শক্তিশালী?’ (সুরা ফুসসিলাত: ১৫)
তাদের এই অহংকার ও পাপাচার তাদের ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ভুলে যায় যে তাদের শক্তি ও সম্পদ আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকে।
নবী হুদ (আ.
)-এর দাওয়াত
আল্লাহ আদ জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য নবী হুদকে (আ.) প্রেরণ করেন। হুদ (আ.) তাদের আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের শক্তি ও সমৃদ্ধি আল্লাহর নেয়ামত এবং তারা যেন অহংকার ত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। কোরআনে হুদ (আ.)-এর কথা বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তোমরা কি ভয় করবে না?’ (সুরা হুদ: ৫০)
পরদিন ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানে, যা কোরআনে ‘রিহুন আকিম’ বা ‘ধ্বংসকারী ঝড়’ নামে বর্ণিত। এই ঝড় সাত দিন ও আট রাত ধরে চলে এবং আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।কিন্তু আদ জাতি হুদ (আ.)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর উপহাস করে। তারা বলে, ‘তুমি কি আমাদেরকে এই বলতে এসেছ যে আমরা আমাদের দেবতাদের ইবাদত ত্যাগ করি? তুমি যা বলছ, তা সত্য হলে তা নিয়ে এসো!’ (সুরা আল-আহকাফ: ২২) তাদের এই উপহাস ও অবাধ্যতা আল্লাহর শাস্তিকে ত্বরান্বিত করে।
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪আল্লাহর শাস্তি ‘ঝড়’
আদ জাতির অবাধ্যতা ও অহংকারের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করেন। তিনি হুদ (আ.)-কে তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীদের নিয়ে নগরীর কাছে একটি গুহায় আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেন। কোরআনে এই গুহার অবস্থান দক্ষিণ আরব উপদ্বীপে, সম্ভবত পূর্ব ইয়েমেন বা পশ্চিম ওমানে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরদিন ইরাম নগরীতে এক ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানে, যা কোরআনে ‘রিহুন আকিম’ বা ‘ধ্বংসকারী ঝড়’ নামে বর্ণিত। এই ঝড় সাত দিন ও আট রাত ধরে চলে এবং আদ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তারা তা দেখল, তখন বলল, “এ তো এক মেঘ!” কিন্তু তা ছিল তাদের জন্য শাস্তি। আমরা তাদের ওপর এক প্রচণ্ড ঝড় প্রেরণ করলাম, যা তাদের ধ্বংস করে দিল।’ (সুরা আল-আহকাফ: ২৪-২৫) শুধু হুদ (আ.) এবং তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীরা এই শাস্তি থেকে রক্ষা পান।
সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফর্মেশন ডটকম
আরও পড়ুনদোলনা থেকে কথা বলা তিন শিশু২৫ ডিসেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ব স কর আম দ র আল ল হ র জন য ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে