আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানো নিয়ে ঢাকার সায়েন্সল্যাবে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। 

মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায়  পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সায়েন্সল্যাব থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অভিমুখে ডাকা লং মার্চে অংশ নিতে জড় হয় কিছু শিক্ষার্থী। তবে তাদের সরিয়ে দেয় পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষের শিক্ষার্থীরা।

এইচএসসি পরীক্ষার পক্ষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুব সৈকত বলেন, “আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছি। এই সময়ের মধ্যে ঠিকমত লেখাপড়া করলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। কিন্তু এখন কিছু কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ১৬-১৭ মাস পড়েনি তারা এখন এসে পরীক্ষা পেছানোর দাবি করছে। যা একেবারেই অযৌক্তিক। এটা করা হলে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়বো। যার ফলে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় একটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।”

আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সায়ের হোসেন রিফাত বলেন, “আমরা আজ  এইচএসসি পরীক্ষার পেছানোর দাবিতে সায়েন্স ল্যাব থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অভিমুখে পরীক্ষার্থীদের ডাকা লংমার্চ করতে এসেছিলাম। জুলাই আন্দোলনের কারণে আমাদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে৷ পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর আমাদের অনেক শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতায় কাজ করেছে। যার ফলে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এখন আবার করোনা ছড়াচ্ছে। আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তাই দুই মাস পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাচ্ছি।”

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মো.

মুসা বলেন, “আমাদের যে সিলেবাস তা ৮ থেকে ১০ মাসেই শেষ করা সম্ভব। সেখানে আমরা ১৬ থেকে ১৭ মাস সময় পেয়েছি। তাই আমরা পরীক্ষা পেছানোর যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। বরং পরীক্ষা পেছালে আমাদের আরো ক্ষতি হবে।”

তিনি আরো বলেন, “যারা পরীক্ষা পেছানোর দাবি করছে তাঁরা ‘ভালো’ কোনো কলেজের শিক্ষার্থী না। আমরা ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ ও সিটি কলেজসহ বড় বড় কলেজের শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে পরীক্ষা চাই।”

আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এমন থাকলেও পরীক্ষা যথানিয়মে ও নির্ধারিত সময়ে শুরু করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্পও ভেবে রাখা হচ্ছে।

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ফরম পূরণ করেছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ও ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন। যদিও এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে; অর্থাৎ আগামী ১৮-১৯ জুন ফের ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছে ঢাকা বোর্ড। ফলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।

ঢাকা/রায়হান/ইভা  

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল জ র শ ক ষ র থ পর ক ষ র থ ন পর ক ষ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক