ইরানকে অস্থির করতে তেহরানে ‘দাহিয়া ধাঁচের’ হামলার হুমকি ইসরায়েলের
Published: 17th, June 2025 GMT
ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘দাহিয়া ধাঁচের’ সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। পরিকল্পিত এই অভিযান মূলত ইরানের সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নেওয়া হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারের অর্থায়নকৃত অলাভজনক প্রেস মনিটরিং সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটর।
ইসরায়েলি সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল ১৪-এর প্রতিবেদনের বরাতে মিডল ইস্ট মনিটর বলেছে, পরিকল্পিত এই অভিযান মূলত ইরানের সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ইরানের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ধারাবাহিক বোমা হামলা চালানো হবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।
এই অভিযানের অনুমোদন দেন ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেছেন, “তেহরানের পরিণতি হবে বৈরুতের মতো।”
এছাড়াও তিনি আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি ইরাকের সাবেক শাসক সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে। যিনি ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর ক্ষমতাচ্যুত হন ও পরবর্তীতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।”
মূলত, ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধে প্রথম প্রয়োগ করা হয় এই অভিযান। ওই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের দাহিয়া জেলাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা এই অভিযানকে মূলত যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসামরিক অবকাঠামো ও জনপদকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হয়।
‘দাহিয়া ডকট্রিন’ ইসরায়েলের একটি আনুষ্ঠানিক সামরিক কৌশল, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ও সম্পূর্ণ ধ্বংস। এই নীতিতে বৈধতা ছাড়াই সম্পূর্ণ বেসামরিক অঞ্চল ধ্বংস করা হয়। বহু মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এই কৌশলকে গণবিধ্বংসী কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই অভিযান আন্তর্জাতিক আইনেও অবৈধ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্পষ্ট বলা আছে, বেসামরিক জনগণ ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য না করে চালানো হামলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ‘দাহিয়া ধাঁচে’ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং গাজায় এর প্রমাণ রয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা তেহরানে সম্ভাব্য সামরিক ও দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য স্থাপনার আশপাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষকে ফার্সি ভাষায় সতর্কবার্তা পাঠাতে শুরু করেছে। একই কৌশল আগেও তারা গাজা ও লেবাননে ব্যবহার করেছিল।
এর আগে সোমবার ভোরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পাশে অবস্থিত একটি বেসামরিক বাসভবনে হামলা চালানো হয়। সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ব নন ইসর য় ল ইসর য় ল মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে ২ বছর কারাদণ্ড
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার রাতে এ অধ্যাদেশের গেজেট জারি করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা নিলে এতে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। এর আগে গত ১৫ মে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা যে কোনো শ্রেণির আহত জুলাইযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে বা বিভ্রান্তিকর কাগজাদি দাখিল করে নিজেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাইযোদ্ধা দাবি করে কোনো চিকিৎসা সুবিধা বা আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন সুবিধা দাবি করেন বা গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে।’
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ, পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে এটি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে– আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, তাই সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করলেন।’
পুনর্বাসনের বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে শহীদ হয়েছেন এমন ব্যক্তির পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য এবং আহত জুলাইযোদ্ধাদের অনুকূলে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক উপার্জনমুখী কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি প্রদান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান।
এরই মধ্যে গঠন করা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ এ অধ্যাদেশের অধীনে আনা হয়েছে। জুলাই শহীদ ও আহতদের তালিকাও এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রকাশ করা হয়েছে বলে ধরা হবে। অধ্যাদেশে আহতদের তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের যথাক্রমে ‘জুলাই শহীদ’ এবং ‘জুলাইযোদ্ধা’র স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।