অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ৩৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে ‘যৌথ ঘোষণা’ সই
Published: 20th, October 2025 GMT
৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ‘যৌথ ঘোষণা’ সই হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ।
সোমবার (২০ অক্টোবর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো.
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বোঝা ও অকালমৃত্যু প্রতিরোধে খাতভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এই উপলব্ধি থেকেই ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ‘যৌথ ঘোষণা’ পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণে কৃষি, খাদ্য, শিল্প, বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ উৎপাদন ও বাণিজ্য খাতের অংশীদারদের সাথে প্রথম সভা গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। আজকের এই দ্বিতীয় সভায় শিক্ষা, ক্রীড়া, যুব, নগর উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার খাতের মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিরা যারা সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, আচরণগত পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরাসরি ও প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারে তিনি তাদের এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বৃদ্ধির আহ্বান জানান।”
সভায় যৌথ ঘোষণায় বর্ণিত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতভিত্তিক কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা মন্ত্রণালয়গুলোর পারস্পরিক সমন্বয়, যৌথ জবাবদিহিতা কাঠামো গঠন, এবং বহুমন্ত্রণালয় কর্মপরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে মতামত প্রদান করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য কারিগরি সহায়তা, সমন্বয় ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর সচিব ও ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি এবং অধীনস্থ দফতরগুলোর প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নেসলের প্রথম ‘গাট হেলথ সামিট’: অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের গবেষক, বিশেষজ্ঞ
নেসলে বাংলাদেশের আয়োজনে নিউট্রিশন সায়েন্সের অগ্রগতি ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘দ্য গাট নেক্সাস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৪ ও ৫ নভেম্বর রেডিসন ব্লু ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ২৫০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। গাট মাইক্রোবায়োমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও মানুষের সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরাই ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।
মানুষের পেটে থাকা ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ বা উপকারী জীবাণুগুলো হজমশক্তি থেকে শুরু করে মানসিক সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ অসংখ্য উপকারী ভূমিকা রাখে। ওই ওয়ার্কশপে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সেশন, প্রেজেন্টেশন, ইন্টারঅ্যাকটিভ আলোচনা এবং হাতে–কলমে শেখার নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অংশগ্রহণকারীরা এসবের মাধ্যমে গাট হেলথ–সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আধুনিক গবেষণা ও বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেন।
বিশেষজ্ঞের মতামত এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
আন্তর্জাতিক আলোচকদের মধ্যে ছিলেন শ্রীলঙ্কার অধ্যাপক ড. শামান রাজেন্দ্রজিথ। তিনি শিশুদের গাট মাইক্রোবায়োটার বিকাশ এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হজমজনিত সমস্যার মতো ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রাথমিক জীবনে সঠিক মাইক্রোবায়োম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
শামান রাজেন্দ্রজিথ বলেন, ছোটবেলা থেকে সঠিক মাইক্রোবায়োম গড়ে উঠলে জীবনের নানা পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়।
নেদারল্যান্ডসের অধ্যাপক ড. মার্ক এ বেনিঙ্গা অনুষ্ঠানে শিশুদের কলিক সমস্যা এবং গাটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার ওপর তাঁর গবেষণা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন। বেনিঙ্গা বলেন, ব্যাকটেরিয়ার সুষম উপস্থিতি বিঘ্নিত হলে শিশুদের পেটে অস্বস্তি, ব্যথা অনুভব হয়। ফলে শিশুদের কান্নার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সঠিক প্রোবায়োটিক গ্রহণে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।
বাংলাদেশিদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিবিষয়ক বাস্তবতা সামনে রেখে বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন। তিনি গাটবান্ধব খাবার, প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিক গ্রহণের সুবিধা এবং শিশুদের পুষ্টি উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বায়োটিকস যুক্ত হলে হজমশক্তি ও সার্বিক সুস্থতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, যা জীবনমানকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নত করতে সহায়তা করবে।’
গবেষণা ও প্রদর্শনী
কর্মশালায় গাট হেলথ–সম্পর্কিত আধুনিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিভিন্ন সায়েন্টিফিক প্রদর্শনী করা হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিকের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সরাসরি পরিদর্শনের সুযোগ পান, যা নেসলে বাংলাদেশের গবেষণানির্ভর নিউট্রিশনবিষয়ক উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি আরও স্পষ্ট করে।
কর্মশালাটির সার্বিক বিষয়বস্তু এবং সহযোগিতামূলক মনোভাব ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে এবং বাস্তব চিত্র সামনে এনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নেসলে বাংলাদেশ পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় করেছে।
জনস্বাস্থ্যের প্রতি অঙ্গীকার
এই উদ্যোগটি নেসলে নিউট্রিশন ইনস্টিটিউটের বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে, যা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী গাট হেলথ–সম্পর্কিত এডুকেশনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষণা ও জ্ঞানচর্চামূলক প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের মাধ্যমে নেসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং বিজ্ঞাননির্ভর সমাধানের মাধ্যমে আরও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।