ইউসিবির রাইট ইস্যুর আবেদনে অসঙ্গতি, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব
Published: 20th, October 2025 GMT
পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসির রাইটস ইস্যুর আবেদন ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতি এবং নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কারণে ব্যাংকটির রাইটস ইস্যু সংক্রান্ত অসঙ্গতির বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি বিএসইসির কর্পোরেট ফাইন্যান্স ডিভিশনের আইপিও, আরপিও ও রাইটস ইস্যু শাখা থেকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
ক্রাউন সিমেন্টের লভ্যাংশ ঘোষণা
বিএসইসি জানিয়েছে, ব্যাংকটির গত ১৮ আগস্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে রাইট ইস্যু আবেদন ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বেশ কিছু আর্থিক অসঙ্গতি, মূলধন ঘাটতি ও নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয় কমিশনের নজরে এসেছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বড় ঘাটতি
ইউসিবির নিরীক্ষকরা তাদের প্রতিবেদনে একটি ‘কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন’ দিয়েছে। যেখানে ৫ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি ও ১৯২ কোটি টাকার অতিরিক্ত সুদ আয় হিসাবভুক্ত করা হয়েছে। এই দুই অসঙ্গতি সঠিকভাবে সমন্বয় করলে ঘোষিত ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার মুনাফা হলে ৫ হাজার ৪৩০ কোটিরও বেশি ক্ষতি হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকটির ঘোষিত মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৭৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২০৬ কোটিরও বেশি। পাশাপাশি ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও (সিএআর) নেমে আসে ৭.
ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইটস ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৬–এর বিধি ৩ (এইচ) অনুসারে, রাইটস শেয়ার ইস্যুর জন্য কোম্পানির অবিলম্বে পূর্ববর্তী বছরে সন্তোষজনক মুনাফা থাকা আবশ্যক। উল্লিখিত সমন্বয় অনুসারে ব্যাংকটি বর্তমানে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে এবং পর্যাপ্ত মূলধন নেই। ফলে কোম্পানিটি নিয়ম ৩ (এইচ) এর শর্ত পূরণ করছে না। এই পরিস্থিতিতে রাইট শেয়ার ইস্যু করলে তা বিধিমালা অনুযায়ী উল্লিখিত নিয়মের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই ইউসিবির বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সেই শর্ত পূরণ হয়নি বলে কমিশন মনে করে।
স্পনসর ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণে বড় ঘাটতি
ইউসিবির স্পনসর ও পরিচালকেরা বর্তমানে ব্যাংকের মোট শেয়ারের মাত্র ১০.২৭ শতাংশ ধারণ করছেন। কিন্তু বিএসইসি ২২ নভেম্বর ২০১১ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্পনসর, প্রমোটার ও পরিচালকদের সর্বদা ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার যৌথভাবে ধারণ করতে হবে। ইউসিবির স্পন্সর ও পরিচালকদের মোট ১০.২৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ বিএসইসির উল্লিখিত নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ওই নির্দেশনায় বলা আছে, “যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্পন্সর/প্রমোটার ও পরিচালকেরা উপরোক্ত পরিমাণ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হন, তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি রাইট শেয়ার ঘোষণা করতে বা রিপিট পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না।” ফলে, রাইট শেয়ার ঘোষণা করে ইউসিবি বিএসইসির নির্দেশনার শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে কমিশন মনে করে।
ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ
বিএসইসি জানিয়েছে, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৬–এর বিধি ১০(২) অনুযায়ী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের রাইট ইস্যু আবেদনপত্রের ঘাটতি পূরণ, ব্যাখ্যা প্রদান এবং সমর্থনকারী নথিপত্রসহ চিঠি ইস্যুর তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনে দাখিল করতে হবে।
এছাড়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের র রাইট ইস্যু আবেদন বিষয়ে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত
বিএসইসির এ ধরনের পর্যবেক্ষণকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ। একটি ব্যাংক যখন মূলধন ঘাটতি ও নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও রাইটস ইস্যু করতে চায়, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। রাইটস ইস্যুর মূল উদ্দেশ্য হলো, বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা। কিন্তু যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থায় দুর্বল হয় এবং নিরীক্ষায় বড় প্রভিশন ঘাটতি দেখা যায়, তবে রাইটস ইস্যু করা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বিএসইসির পদক্ষেপ তাই যুক্তিসঙ্গত।
এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘ইউসিবিএল এর রাইট হিসেবে আবেদন বিএসসির যাচাই-বাছাই করে দেখছে। ইতিমধ্যে তাদের কাছে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’’
এ বিষয়ে জানতে ইউসিবির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা/এনটি/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র ইউস ব র র জন য র র ইট আর থ ক ম লধন
এছাড়াও পড়ুন:
কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজের অনিয়ম তদন্তে বিএসইসি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) সদস্যভুক্ত ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউস কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর- ১৪৩) অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটিকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
দুলামিয়া কটনের এজিএম স্থগিত
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন
আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়াই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকার অনিরাপদ ঋণ নিয়েছে কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজ লিমিটেড। সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমটি।
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি আদেশ বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির জারি করা আদেশ কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইউসুফ ভূঁইয়া, সহকারী পরিচালক মো. কামাল হোসেন এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বিএসইসি মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ওঠা অভেোযগের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯-এর সেকশন ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩-এর ধারা ১৭(ক)-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ব্রোকারেজ হাউজটির বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি এবং ডিএসই থেকে তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়াই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে কে. এইচ. বি. সিকিউরিটিজ লিমিটেড যে ৮ কোটি টাকার অনিরাপদ ঋণ নিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে, সেটি অনুসন্ধান করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যাচাইযোগ্য নয়, এমন লিজ অ্যাকাউন্টের সমন্বয় খতিয়ে দেখা হবে। ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার অ-উদ্ধৃত শেয়ারে অনিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
শেয়ারহোল্ডার পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি যাচাই করে দেখবে তদন্ত কমিটি। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) ফাইলিংসহ নন-কমপ্লায়েন্স যাচাই-বাছাই করা হবে। অন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে এই কমিটি।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজগুলো কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/এনটি/রাসেল