ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করায় জ্যেষ্ঠ মার্কিন সেনা কর্মকর্তাকে অপসারণ
Published: 18th, June 2025 GMT
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট সামনে আসার পর মার্কিন পররাষ্ট্র সদর দপ্তর পেন্টাগন একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে পেন্টাগন।
অপসারিত এই সেনা কর্মকর্তা হলেন কর্নেল নাথান ম্যাক্করম্যাক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের জে৫ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিরেক্টরটের লেভান্ত (ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল) ও মিসর শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
ম্যাক্করম্যাক নামের সঙ্গে আংশিক মিল থাকা একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের বিষয়ে মঙ্গলবার জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেটের (জেএনএস) একটি খবর প্রকাশের পরপরই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ওই ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে অন্যান্য বক্তব্যের পাশাপাশি ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা জেএনএস-কে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় তিনি আর জয়েন্ট স্টাফ থাকবেন না। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতিরক্ষা দপ্তর এসব পোস্টের বিষয়বস্তু এবং এর প্রভাবের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করছে।
জেএনএস প্রথম এক্সে দেওয়া এসব পোস্টের বিষয়ে খবর প্রকাশ করে। পরে মিডল ইস্ট আই পোস্টগুলোর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করে। বর্তমানে আর্কাইভ করে রাখা এই পোস্টগুলোতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও সমালোচনা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই পোস্টগুলো দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনইরানে হামলা নিয়ে ট্রাম্প শিবিরে বিভক্তি, যুক্তরাষ্ট্রও কি সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে১৫ জুন ২০২৫ম্যাক্করম্যাক এসব পোস্টে নেতানিয়াহু এবং তাঁর মিত্রদের ‘ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদী ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোষ্ঠী’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাঁরা ‘ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করতে এবং “এরেৎজ ইসরায়েল” (ইসরায়েলি ভূখণ্ড) থেকে জাতিগত ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে চান’ বলেও অভিযোগ করেন।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পোস্টগুলোতে ইসরায়েলের ‘খারাপ আচরণে’ মদদ দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমা দেশগুলো হলোকাস্টের অপরাধবোধ থেকে ইসরায়েলের সমালোচনা করা থেকে অনেক দূরে থাকে।’
ম্যাক্করম্যাক আরও লিখেছন, কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের কার্যকলাপ জাতিগত নির্মূল এবং গণহত্যার অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের জুনের পর থেকে ইসরায়েলকে ‘খুনোখুনি প্রিয় গোষ্ঠী’ বলে মন্তব্য করে আসছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনইরানে হামলা চালাতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে বড় পরিবর্তন আনল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র১৫ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য ক করম য ক য ক তর ষ ট র কর মকর ত এসব প ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘দেশে যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে নারীসমাজকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশের মা-বোনদের আহ্বান জানাই, আপনারা সচেতন ও সজাগ থাকুন।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পটভূমিতে নারীসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে উল্লেখ করে সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া উচিত, তেমনই একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।’
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে যেসব পরিবার আপনজন হারিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। এসব পরিবারে একজন পুরুষ সদস্যের মৃত্যুর পর একজন নারী যেভাবে প্রতিদিন সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তা এক অনবদ্য সংগ্রাম।
নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূলধারার বাইরে রেখে কখনোই নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। নারীশক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা ও দক্ষতার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে।
নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করা গেলে বৈষম্য কমবে, পারিবারিক সহিংসতাও রোধ হবে। তাই বিএনপির স্লোগান হচ্ছে—‘ক্ষমতায়িত নারীশক্তি, পরিবারের মুক্তি।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে প্রান্তিক ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করবে। এই কার্ড নারীদের নামে ইস্যু করা হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক বা খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটবে এবং পরিবারগুলো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে সভায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই তথ্যচিত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা খানম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এই লড়াইয়ে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছে নারীসমাজ।
যাঁরা রক্ত-অশ্রু ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সেই নারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তাজমেরি এস এ ইসলাম ও তাহসীনা রুশদির, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম, টক শো উপস্থাপক হাসিনা আখতারের ধারণ করা বক্তব্য সভায় প্রচার করা হয়। সভার সঞ্চালক ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো হয়।