বরগুনায় সরকারি হিসাবের বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬ জনের মৃত্যু
Published: 19th, June 2025 GMT
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সেই হিসাবে জেলায় চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১।
সরকারি হিসাবের বাইরে যে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁরা সবাই বরগুনাতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এরপর ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ রয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যগুলো জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেই কেবল সরকারি তালিকায় তথ্য যুক্ত হয়। জেলার বাইরে কিংবা বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে সেই তথ্য সরকারের খাতায় উঠছে না। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, বরগুনায় ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা সরকারি-বেসরকারি হিসাবের চেয়েও বেশি।
জেলার বাইরে ৫ জনের মৃত্যু, বাড়িতে ১বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৯ জুন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনার ৫ জন। তবে যেসব রোগী বিভাগের বাইরের হাসপাতালে মারা গেছেন, তা সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়নি।
সরকারি হিসাবের বাইরে অনুসন্ধান করে আরও ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ২৯ এপ্রিল বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার ছোট মেয়ে উপমা (১৫) রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডেঙ্গু পজিটিভ হয়। পরে তার অবস্থা গুরুতর হলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৯ এপ্রিল মারা যায়।
আরও পড়ুনবরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সাবেক এমপির মেয়ের মৃত্যু, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ০৭ জুন ২০২৫স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত কারও মৃত্যুর তথ্য নেই।
জায়গা না হওয়ায় বরগুনা জেনারেল হাসপতালের বারান্দায় চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র ম ত য সরক র অবস থ ইসল ম বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আল–কাহহার’: অপরাজিত প্রভুত্ব শুধু আল্লাহর
যখন আকাশের বিশালতা থরথর করে কাঁপে, পাহাড়ের গর্বিত শিখর নত হয়, তখন একটি নাম হৃদয়ের গভীরে শিহরণ জাগায়, সেটি হলো আল–কাহহার। তিনি আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির প্রতিটি কণাকে তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর সামনে কোনো শক্তি টিকে না, কোনো অহংকার টেকে না।
তিনি সেই সত্তা, যিনি অত্যাচারীদের ধূলিসাৎ করেন, মৃত্যুর মাধ্যমে সবাইকে নতজানু করেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বচরাচর পরিচালিত হয়। আল–কাহহার নামটি শুধু তাঁর শক্তির প্রকাশ নয়; বরং আমাদের জীবনকে আলোকিত করার এক আধ্যাত্মিক পথনির্দেশ। আসুন, এই নামের গভীর তাৎপর্যে ডুব দিই, যা আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঞ্চার করে।
আল–কাহহার আল্লাহর সেই গুণ, যা তাঁর সর্বোচ্চ প্রভুত্ব ও অপরিমেয় ক্ষমতার কথা বলে। তিনি সেই সত্তা, যাঁর হাতে সমগ্র সৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত।
বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?সুরা রাদ, আয়াত: ১৬পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে। সুরা আর–রাদে বলা হয়েছে, ‘বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?’ (আয়াত: ১৬)
আবার সুরা ইবরাহিমে বলা হয়েছে, ‘এবং তারা সবাই একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।’ (আয়াত: ৪৮)
এই আয়াতগুলো আমাদের হৃদয়ে গেঁথে দেয় যে তিনি একক এবং তাঁর ক্ষমতার সামনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি সেই সত্তা, যাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।’ (আল–সালাবি, কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬)
তিনি সেই সত্তা, যাঁর ক্ষমতা কোনো সীমার মধ্যে বাঁধা নয়। পবিত্র কোরআন বলে, ‘কোনো প্রাণী নেই, যার কপাল তাঁর হাতে নেই। তাঁর হুকুম তাতে চলে এবং তাঁর ফয়সালা তাতে ন্যায়পরায়ণ।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৫৬)
এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই—না আমাদের জীবন, না আমাদের মৃত্যু।
আল–কাহহার ও আল–ওয়াহিদ নামের সংযোগ একটি অপূর্ব সত্য উন্মোচন করে। আল্লাহর একত্ব তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যিনি সবকিছুর ওপর অপ্রতিরোধ্য, তিনিই একক। ক্ষমতা ও একত্ব একে অপরের পরিপূরক। দুটি সমান ক্ষমতাশালী সত্তা কখনোই থাকতে পারে না।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।ইমাম খাত্তাবি (রহ.), কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬পৃথিবীর রাজারা তাদের সেনাবাহিনী ও সমর্থকদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর একক সত্তায়, কারও সাহায্য ছাড়াই সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সেই সত্তা, যাঁর কাছে সবাই নতজানু, যিনি কোনো সাহায্যকারীর মুখাপেক্ষী নন।
আল্লাহর এই ক্ষমতা শুধু শাস্তি বা ধ্বংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি অপূর্ব ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তিনি বাতাস সৃষ্টি করেছেন, যা একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি পানি সৃষ্টি করেছেন, যাকে বাতাস প্রভাবিত করে। তিনি আগুন সৃষ্টি করেছেন, যাকে পানি নিভিয়ে দেয়। তিনি লোহা সৃষ্টি করেছেন, যাকে আগুন গলিয়ে দেয়। তিনি পাথর সৃষ্টি করেছেন, যাকে লোহা ভেঙে দেয়।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
এই ভারসাম্য তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার প্রমাণ। তিনি সৃষ্টির প্রতিটি উপাদানকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন, যেন প্রতিটি তাঁর ইচ্ছার অধীনে থাকে।
আরও পড়ুনআল্লাহর ‘আল মুমিন’ নামের মহিমা১৮ জুন ২০২৫তবে আল্লাহর এই অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে অস্বীকার করে না। তিনি আমাদের পছন্দের স্বাধীনতা দিয়েছেন, যার জন্য আমরা জবাবদিহি করব। আমরা যখন কোনো কাজ করি, যেমন ভ্রমণের পরিকল্পনা, খাওয়া বা বিশ্রাম, তখন আমরা তা নিজেদের ইচ্ছায় করি। এই স্বাধীনতা আমাদের দায়িত্বশীল করে। ‘তিনি অপ্রতিরোধ্য, কিন্তু তিনি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। আমাদের কাজ আমাদের পছন্দের ফল।’ (মা’আল্লাহ, সালমান আওদাহ, পৃ. ১০৭)
এই সত্য আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির প্রতি সচেতন করে।
পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে।আল–কাহহার নামটি আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভীতি জাগায়। যখন আমরা জীবনের ঝড়ে হতাশ হই, তখন এ নামটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা আমাদের শেখায় যে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর ইচ্ছার অধীনে। আমরা যখন তাঁর এই নামের প্রতি চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও বিনয় আরও গভীর হয়। তিনি আমাদের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক এবং আমাদের একমাত্র উপাস্য।
এ নামটি আমাদের জীবনে একটি আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের শেখান যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করা আমাদের কর্তব্য। তাঁর ক্ষমতার সামনে আমরা নতজানু হই, তাঁর প্রভুত্বের সাক্ষ্য দিই। তিনি আল–কাহহার, যিনি অপ্রতিরোধ্য, একক ও অতুলনীয়। তাঁর মহিমার কাছে আমাদের হৃদয় নুয়ে পড়ে এবং আমরা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাই।
সূত্র: আল–জাজিরা ডট নেট। অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনইসমে আজমের শক্তি ও রহস্য৩০ জুন ২০২৫