নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাটা ও তাড়ানী গ্রামে একদল বন্যহাতি আক্রমণ করে তিনটি বসতবাড়ি ভেঙে তছনছ করেছে। এ সময় ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বাসিন্দারা।
গত শুক্রবার রাতে হানা দিয়ে এসব পরিবারের ঘরে রাখা ধান, চাল, গাছের কাঁঠাল ও কলাগাছ খেয়ে সাবাড় করেছে হাতির দল।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হলো– কালাকুমা গ্রামের হাবি মিয়া ও তাঁর মেয়ে পুতুল। তাদের একটি করে বসতঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তাড়ানী গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলীর একটি বসত ও একটি রান্নাঘর লন্ডভন্ড করেছে। সেই সঙ্গে বসতঘরে মজুত করে রাখা ধান, চাল, গাছের কাঁঠাল ও বাড়ির আঙিনায় রোপিত কলাগাছ খেয়ে সাবাড় করেছে বন্যহাতির দল।
গ্রামবাসী জানান, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে গারো পাহাড়ি এলাকায় শতাধিক বন্যহাতি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠে হানা দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে হাতির পাল। এলাকার মানুষ জানমাল রক্ষা করতে বন্যহাতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। তারা হাতির অত্যাচার বন্ধ করতে সরকারিভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে হত্যার পর নিহত নারীর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন খুনি

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বসতঘরের ভেতর বৃদ্ধ নারী সেতারা বেগমকে (৭০) গলা কেটে হত্যার পর তাঁর জানাজায়ও অংশ নিয়েছিলেন খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. মাহফুজুন নবী (৩৩)। সেতারা বেগম হত্যা মামলার দুই আসামি মাহফুজ ও মোরশেদ আলমকে (৩২) গ্রেপ্তারের পর ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে সেতারা বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ওই নারী বাড়িতে একা ছিলেন। লাশ উদ্ধারের সময় নারীর বসতঘরের এক পাশে সিঁধ কাটা দেখা যায়। যার ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা ছিল, চুরি করতে আসা ব্যক্তিদের চিনে ফেলায় ওই নারীকে হত্যা করা হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত নারীর ছেলে মো. রুমন বাদী হয়ে মাহফুজ ও মোরশেদকে আসামি করে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

সেতারা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহফুজের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার বিনয়নগর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুর নবী খোকন। মাহফুজ নিহত সেতারা বেগমের আত্মীয় ছিলেন। অপর আসামি মোরশেদ আলম মাহফুজের বন্ধু। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আজ শনিবার ভোর সোয়া চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর এলাকা থেকে প্রথমে মোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজার থেকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মাহফুজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম সেতারা বেগম হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিকেলে তাঁরা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ওসি মোরশেদ আলম জানান, আসামি মাহফুজুন নবীর বোনকে বিয়ে করেছিলেন সেতারা বেগমের ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মাহফুজ কিছুটা অর্থের কষ্টের মধ্যে পড়েন। যার কারণে তিনি সেতারার বাড়িতে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাহফুজ তাঁর বন্ধু মোরশেদ আলমসহ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সোনাইমুড়ীর সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে সেতারা বেগমের বাড়িতে যান। দুই আসামি ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে ঢোকেন। এরপর ঘরের মালামাল চুরির সময় সেতারা বেগমের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি চিৎকার দিতে চাইলে মাহফুজ তাঁকে ঘটনাটি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সেতারা তাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে মাহফুজ ও মোরশেদ ঘর থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁরা আবার ঘরে ঢুকে সেতারাকে হত্যা করেন।

ওসি মোরশেদ আলম জানান, আসামি মাহফুজ হত্যাকাণ্ডের পর সোনাইমুড়ী এলাকাতেই ঘোরাফেরা করেছিলেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে বাড়িতে অনুষ্ঠিত জানাজায়ও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার সময় খোয়া যাওয়া সেতারা বেগমের মুঠোফোনের সূত্র ধরে প্রথমে মোরশেদ আলমকে, পরে মাহফুজকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মোরশেদ আলমের বাড়ি থেকে চুরি করে নেওয়া মুঠোফোন, কয়েকটি শাড়ি, জামাকাপড় ও একটি সাউন্ড বক্স উদ্ধার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরাইলে তৃতীয় লিঙ্গের যুবকের বসতঘর পুড়িয়ে দিলেন লোকজন
  • নোয়াখালীতে হত্যার পর নিহত নারীর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন খুনি
  • খাটের ওপর পড়ে ছিল বৃদ্ধার গলাকাটা লাশ