‘আমাদের মা-বাবা নেই। শিশুকালে তাঁরা মারা গেছেন। নিজেদের বসতবাড়ি থাকলেও সেখানে যাইতে পারি না। সব অন্যের দখলে চলে গেছে। ৫ বোন নিয়ে আমি ২০ বছর ধরে সরকারি জায়গায় থাকি। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়া জ্বালাই দিছে। আমার স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ সব লুট করে নিয়া গেছে। আমার সব শেষ।’

আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে কথাগুলো বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কালীকচ্ছ উত্তরবাজার এলাকার বাসিন্দা সোহেল আশা (২৬) নামের তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি।

সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কালীকচ্ছ শ্মশানের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় ঘর বানিয়ে ২০ বছর ধরে সোহেল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে আসছিলেন। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় লোকজন পেট্রোল ঢেলে সেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মৃত ফজল হকের ছয় সন্তানের মধ্যে সোহেল আশা পঞ্চম।

আজ দুপুরে সরেজমিনে আগুনে পুড়ে যাওয়া চারটি ঘরের শেষ চিহ্ন দেখা যায়। এ ছাড়া বসতবাড়িটিতে আর কিছুই নেই।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, সোহেল এখানে মাদক ব্যবসা করতেন। মাদকের বিনিময়ে চোরাই পণ্য কিনে নিতেন। তাঁর বাড়িটি ছিল চোর-ডাকাত আর মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থল। এখানে হতো অসামাজিক কর্মকাণ্ড। বছরের পর বছর ধরে সোহেল এগুলো করে আসছেন। এসব কাজ না করতে বারবার বলা হলেও তিনি শোনেননি। এ জন্য কালীকচ্ছ ইউনিয়নের চার-পাঁচটি গ্রামের কয়েক শ লোক গতকাল লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হন সোহেলের বাড়িতে। এ সময় তিন বোনসহ বেশ কয়েকজন বাড়িতে থাকলেও সোহেল ছিলেন না। লোকজন পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেলের বসতঘরে। আগুনে সব শেষ হয়ে যায়। পরে বিনষ্ট হওয়া কিছু মালামাল লুট করে নেন লোকজন।

কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, কাজটি করা ঠিক হয়নি। অভিযোগ থাকলে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা যেত।

এ বিষয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল পেয়ে সেখানে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোক পাঠানো হয়। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সব পুড়ে যেতে দেখেছেন। সেখানে হাজার হাজার লোক ছিলেন। সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও আছে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি আধা পাকাসহ চারটি ঘর ছিল আমাদের। সব মিলে আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার কাছ থেকে অনেক লোক টাকা ঋণ নিছে। স্টাম্প করা আছে, তারাই এসব করছে। এ ছাড়া আমার ঘরের পেছনে মৃত ছায়েদ মিয়ার চার ছেলের মার্কেট রয়েছে। তারা চার বছর ধরে আমাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে আসছিল। তাদের নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে। আমাকে তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে এগুলো করছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সারা দেশে একটিও মাদকের মামলা নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে মৃত ছায়েদ মিয়ার ছেলে আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজের লোকজন ওই বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা এসবের সঙ্গে জড়িত নেই। পাঁচ-সাত বছর ধরে সোহেল এখানে মাদকের আস্তানা ঘড়ে তুলেছে। এ জন্য লোকজন এমনটি করেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ল কজন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জাজিরায় আবার ভাঙন: দ্বিতল মসজিদ, বসতবাড়ি, দোকান ও সড়ক পদ্মায় বিলীন

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ এলাকার আশপাশে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাজিরা প্রান্তের আলম খারকান্দি এলাকায় অন্তত ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে গ্রামের একটি দ্বিতল মসজিদ, দুটি দোকান, সাতটি বসতবাড়িসহ মাঝিরঘাট-পালের চর সড়কের ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এ নিয়ে সপ্তম দফায় বাঁধের ৮০০ মিটারসহ এক কিলোমিটার এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল। গত দুই মাসে বাঁধের পাশে থাকা ৩৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের পাশের তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে আছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। নাওডোবার ওপর দিয়েই পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় থেকে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্বে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণে) আলাম খাঁর কান্দি, ওছিম উদ্দিন মাতবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

আজ সকালে বাঁধের পাশে থাকা আলম খারকান্দি গ্রামের দ্বিতল একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময় ভাঙনে মসজিদের পাশে থাকা সাতটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পাশ দিয়ে ছিল মাঝিরঘাট-পালের চর সড়ক। ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন পাউবোর কর্মীরা।

নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার দুপুরে জাজিজার আলমখার কান্দি এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাজিরায় আবার ভাঙন: দ্বিতল মসজিদ, বসতবাড়ি, দোকান ও সড়ক পদ্মায় বিলীন