সরাইলে তৃতীয় লিঙ্গের যুবকের বসতঘর পুড়িয়ে দিলেন লোকজন
Published: 21st, June 2025 GMT
‘আমাদের মা-বাবা নেই। শিশুকালে তাঁরা মারা গেছেন। নিজেদের বসতবাড়ি থাকলেও সেখানে যাইতে পারি না। সব অন্যের দখলে চলে গেছে। ৫ বোন নিয়ে আমি ২০ বছর ধরে সরকারি জায়গায় থাকি। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়া জ্বালাই দিছে। আমার স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ সব লুট করে নিয়া গেছে। আমার সব শেষ।’
আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে কথাগুলো বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কালীকচ্ছ উত্তরবাজার এলাকার বাসিন্দা সোহেল আশা (২৬) নামের তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি।
সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কালীকচ্ছ শ্মশানের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় ঘর বানিয়ে ২০ বছর ধরে সোহেল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে আসছিলেন। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় লোকজন পেট্রোল ঢেলে সেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মৃত ফজল হকের ছয় সন্তানের মধ্যে সোহেল আশা পঞ্চম।
আজ দুপুরে সরেজমিনে আগুনে পুড়ে যাওয়া চারটি ঘরের শেষ চিহ্ন দেখা যায়। এ ছাড়া বসতবাড়িটিতে আর কিছুই নেই।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, সোহেল এখানে মাদক ব্যবসা করতেন। মাদকের বিনিময়ে চোরাই পণ্য কিনে নিতেন। তাঁর বাড়িটি ছিল চোর-ডাকাত আর মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থল। এখানে হতো অসামাজিক কর্মকাণ্ড। বছরের পর বছর ধরে সোহেল এগুলো করে আসছেন। এসব কাজ না করতে বারবার বলা হলেও তিনি শোনেননি। এ জন্য কালীকচ্ছ ইউনিয়নের চার-পাঁচটি গ্রামের কয়েক শ লোক গতকাল লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হন সোহেলের বাড়িতে। এ সময় তিন বোনসহ বেশ কয়েকজন বাড়িতে থাকলেও সোহেল ছিলেন না। লোকজন পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেলের বসতঘরে। আগুনে সব শেষ হয়ে যায়। পরে বিনষ্ট হওয়া কিছু মালামাল লুট করে নেন লোকজন।
কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, কাজটি করা ঠিক হয়নি। অভিযোগ থাকলে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা যেত।
এ বিষয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল পেয়ে সেখানে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোক পাঠানো হয়। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সব পুড়ে যেতে দেখেছেন। সেখানে হাজার হাজার লোক ছিলেন। সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও আছে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি আধা পাকাসহ চারটি ঘর ছিল আমাদের। সব মিলে আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার কাছ থেকে অনেক লোক টাকা ঋণ নিছে। স্টাম্প করা আছে, তারাই এসব করছে। এ ছাড়া আমার ঘরের পেছনে মৃত ছায়েদ মিয়ার চার ছেলের মার্কেট রয়েছে। তারা চার বছর ধরে আমাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে আসছিল। তাদের নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে। আমাকে তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে এগুলো করছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সারা দেশে একটিও মাদকের মামলা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে মৃত ছায়েদ মিয়ার ছেলে আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজের লোকজন ওই বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা এসবের সঙ্গে জড়িত নেই। পাঁচ-সাত বছর ধরে সোহেল এখানে মাদকের আস্তানা ঘড়ে তুলেছে। এ জন্য লোকজন এমনটি করেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ল কজন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন।
এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেয়।
সূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।