ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রেস ব্রিফিং করার সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ তথা ঐকমত্য কমিশনের বরাবর একটি ন্যায্য প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব বিষয়েই যদি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শতভাগ একমত হতে হয়, তবে আলোচনার কি প্রয়োজন ছিল?’

প্রশ্নটি যথেষ্ট ন্যায্য মনে করি। মূলত আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে দ্বিমত নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেছেন। বাস্তবিকই বিএনপি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে আসছে।

বিএনপির নিজস্ব রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা-৩১ দফা, যা তারা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই জাতির সামনে হাজির করেছিল, তা থাকা সত্ত্বেও ঐকমত্যের স্বার্থে এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জনআকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ দফার অনেক দফা থেকেই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের ব্যাপারে একমত হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেনে নেওয়া। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই প্রথম ৩১ দফার প্রস্তাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাবনা করেছিল। দফা-১ এবং দফা ১০-১৫ পর্যন্ত, এখন যে সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে, তার প্রতিটির কথাই উল্লেখিত ছিল।

২.

বিএনপি তিনবার সরকার গঠন করেছে এবং দুবার বিরোধী দলে ছিল। বিএনপি তাদের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা, বিচ্যুতি এবং বিশেষত বিগত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের অপশাসনকে মাথায় রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে ক্রমাগত ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনকল্যাণের আলোকে এই ৩১ দফা জনপরিসরে হাজির করেছে।

শেখ হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে কোনো শর্তারোপ করেনি। বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের দিক থেকে একটাই চাওয়া ছিল: ন্যূনতম সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকার যেন একটি সঠিক, গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন দেয় এবং এর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন হয়; দীর্ঘদিন থেকে ভোটাধিকারবঞ্চিত মানুষ যেন ভোট দিতে পারে এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পায়—এটাই ছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চাওয়া।

এ রকম প্রেক্ষাপটে বিএনপি বরাবরই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বতোভাবে সহায়তা করে আসছে যেন গণতান্ত্রিক রূপান্তর মসৃণ হয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে নানান ইস্যুতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। দেশে বিভিন্ন দাবি নিয়ে অস্থিরতা চলতেই থাকে এবং এখনো চলমান।

ঐকমত্য কমিশন শুধু নয়, এর আগেও প্রতিটি কমিশন যখন আলাদা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, বিএনপি প্রতিটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বসেছে, তাদের প্রস্তাব দিয়েছে এবং রাজনৈতিক আলোচনা করেছে। আবার সব কটি কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠিত হলে, সেই ঐকমত্য কমিশনেরও প্রতিটি আলোচনা পর্বে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তারা যুক্তি তুলে ধরছে তাদের অবস্থানের পেছনে।

নিজেদের মতের সঙ্গে মিল না হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের একটি সভাও এখন পর্যন্ত বর্জন করেনি। জামায়াতে ইসলামী অবশ্য খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে একটি সভা বর্জন করেছে। বিএনপি একমাত্র দল, যারা একটি সুনির্দিষ্ট টিম গঠন করে দিয়েছে সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা করার জন্য। বিএনপি কতটুকু আন্তরিক ও গুরুত্বের সঙ্গে এই আলোচনাকে নিয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।

৩.

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন সময় বক্তৃতায় বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেই বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ তৈরি করবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার প্রথম বৈঠকের দিন কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ জুলাই মাসে জুলাই সনদ হওয়ার ব্যাপারে নিরাশা প্রকাশ করেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কথা বলেন। তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদও তাঁর বক্তৃতায় এবং প্রেস কনফারেন্সে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন (শুধু যে বিষয়গুলোতে একমত হওয়া যাবে তা নিয়ে) জুলাই সনদের ব্যাপারে। এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপি আবার পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতি কতটা পিআর পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত, এ বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই। পিআর পদ্ধতিতে একটি এলাকার জনগণ জানবে না, তারা কাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাচ্ছে। এ ছাড়া আরও আশঙ্কা রয়েছে, যোগ্যতাহীন অনেকে এমপি হবেন, কোনো দলে না থাকলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের সুযোগও তৈরি হতে পারে। যেসব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোতে তেমন কোনো আসন পায়নি বা কোনো আসনেই জিততে পারেনি, তারাই একটি পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে সংসদে জনপ্রতিনিধি পাঠাতে চাইছে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মান–অভিমান ও সহমত–দ্বিমত২১ জুন ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাওয়া, দেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে আরেকটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবার যখন এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের আগে), তখন কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট অনুকূলে না এনে নির্বাচন করা যাবে না।

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এখানে শুধু রাজনৈতিক সংঘাত নয়, পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যেও সংঘাত হয়। দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া বা কোনোরকম উদ্যোগ নেওয়া হবে সবচেয়ে অবিবেচনাপ্রসূত কাজ।

পক্ষান্তরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, আনসার, র‍্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর একটি সক্রিয় তৎপরতা থাকে (নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়)। নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চলমান থাকে। এসব বিষয় বিবেচনায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তৎপরতা চালানো উচিত, নির্বাচন কমিশনকে সেভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সহযোগিতা করা উচিত।

৪.

ঐকমত্য কমিশন শুধু নয়, এর আগেও প্রতিটি কমিশন যখন আলাদা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, বিএনপি প্রতিটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বসেছে, তাদের প্রস্তাব দিয়েছে এবং রাজনৈতিক আলোচনা করেছে। আবার সব কটি কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠিত হলে, সেই ঐকমত্য কমিশনেরও প্রতিটি আলোচনা পর্বে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তারা যুক্তি তুলে ধরছে তাদের অবস্থানের পেছনে।

বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত রাজনৈতিক আলোচক ডা. জাহেদুর রহমান একটা টিভি টকশোতে এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে যে রাজনৈতিক আলোচনা করছে এবং যুক্তিতর্ক তুলে ধরছে, তা ইতিবাচক; বিএনপি ইচ্ছা করলে বলতে পারত, সব প্রস্তাব মেনে নিলাম; তারপর নির্বাচিত হওয়ার পর সেখান থেকে সরে আসতে পারত। কিন্তু বিএনপি তা করেনি, তারা সংস্কারটাকে ধারণ করে বলেই বাস্তবিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু তাদের দিক থেকে সম্ভব, তারা সেটুকুতেই সম্মত হচ্ছে।’

এখানে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য, বিএনপি এবং সমমনা দল ব্যতীত অন্য কোনো দলেরই কিন্তু নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক প্রস্তাব ছিল না। তারা শুধু ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবকেই প্রতিধ্বনি করছে। কিন্তু বিএনপি বহু আগেই ৩১ দফার প্রস্তাব দিয়েছে এবং তার বাস্তবায়নে নিজেদের কর্মকৌশল করেছে।

৫.

আমরা আশা করি, ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের মানুষ ভোটকে একটা উৎসব হিসেবে নেয়। ৫৪ বছরের বাংলাদেশে যে কটি (মোটাদাগে ৪টা) ভালো নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর সব কটিতেই মানুষ উৎফুল্লভাবে অংশগ্রহণ করেছে; দলের জন্য, প্রার্থীর জন্য ক্যাম্পেইন করেছে।

আমাদের দেশের মানুষের মনোজগৎকে রাতারাতি উন্নত বিশ্বের মতো পরিবর্তন করে ফেলা যাবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিআর পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পিআর পদ্ধতি নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে এবং একটি বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপির প্রস্তাবগুলোকেও আমলে নিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হওয়া দরকার।

আর সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সাদাসিধে প্রশ্নের কী উত্তর দেন, তা শোনার প্রত্যাশায় রইলাম।

সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান প্রকৌশলী ও লেখক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন র প রস ত ব জ ল ই সনদ র অবস থ ন পর স থ ত দলগ ল র ব এনপ র র জন য বল ছ ন প রথম ত হওয় হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে: আলী রীয়াজ

হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বর্তমান বিধান সংশোধনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। নতুন বিধানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপরাধীকে ক্ষমা করার সুযোগ থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৬ বছর বা তার আগে থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল অনুধাবন করেছে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যে বিষয়টি আছে, তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সে বিষয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে কিছু সুপারিশ ছিল। তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও সব নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে ক্ষমার বিষয় সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি এই বিধি (সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ) অনুসরণ করে ক্ষমা প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য পাঠানোর আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামত নিতে হবে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে নতুন আইন যুক্ত হলে বিগত সময়ে রাজনৈতিকভাবে এই আইনের যে অপব্যবহার হয়েছে তা বন্ধ হবে।

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য ঐকমত্য হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। তবে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে থাকবে—এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।

আগামী সপ্তাহে নতুন নতুন আরও অনেক বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এ ছাড়া জরুরি অবস্থা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু এই বিষয়টি এনসিসির (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন যেহেতু এনসিসি আলোচনার টেবিলে নেই, তাই জরুরি অবস্থার বিষয়টি নতুন করে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তোলা হবে।

আজকের আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তিনটি বিষয়ের মধ্য দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে আমরা অগ্রগতিতে পৌঁছাতে পারব।’

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার ও মো. আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে স্বৈরাচারের পুনঃপ্রবর্তন ঠেকানো যাবে’
  • সাংবিধানিক সংস্কার এবং গণতন্ত্রের ভবিষ‍্যৎ
  • ফৌজদারি অপরাধীকে ক্ষমা করার একক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকা উচিত নয়: এবি পার্টি
  • উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের আগে ভেবে দেখার আহ্বান ইসলামী আন্দোলনের
  • বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একমত, রূপরেখা নিয়ে মতভিন্নতা
  • সংস্কারে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে বিএনপি: সালাহউদ্দিন
  • নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ ও তত্ত্ববধায়কের বিষয়ে একমত জামায়াত
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: অধ্যাপক আলী রীয়াজ