আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের অঙ্গীকার’ করলেও বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে: বদিউল আলম
Published: 5th, July 2025 GMT
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বর্তমান সরকারের কাঠামো এখনো বিদ্যমান, এটি সময়োপযোগী নয় এবং এতে মৌলিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংস্কার কমিশন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দিয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় একটি কনভেনশন সেন্টারে সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে 'সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ' শীর্ষক জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাব অনুযায়ী, সংসদের ৪০০ আসনের মধ্যে লটারির মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের জন্য ১০০ আসন নির্ধারণ করা হবে। এই আসনে নির্বাচিত নারীরা সাধারণ আসনের সংসদ সদস্যদের মতোই দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করবেন।
এসময় ভারতের লোকসভা নির্বাচন ব্যবস্থার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানেও ধাপে ধাপে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। প্রথম দফায় ১০০ আসনে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আরও ১০০ করে আসনে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, যেখানে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রস্তাবগুলোর অনেকগুলো বিষয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো ঐক্যমত্য তৈরি হয়নি। ফলে, জাতীয় সনদের বাস্তবায়নে সংস্কার কমিশন মনে করে যে, কিছু মৌলিক সংস্কার এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংস্কারের মূল বিষয়গুলো হলো:
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করা: বর্তমানে একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের সভাপতি হয়ে থাকেন, যা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক। এতে দল ও সরকার একীভূত হয়ে যায়। কমিশন প্রস্তাব করেছে, একই ব্যক্তির একাধিক পদে থাকা যাবে না এবং কেউ পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার: যাতে ক্ষমতাসীন সরকার এককভাবে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে না পারে। নিয়োগ পদ্ধতি হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল: এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, সংবিধান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার লাগাম টানা—এই তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার আনা এখন অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের অঙ্গীকার’ করলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই বার্তাগুলো স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতন, সোচ্চার এবং আত্মপ্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। আমাদের ১৪০০ থেকে ২০০০ হাজার ছেলে-মেয়েরা প্রাণ দিয়েছে। শুধু ছেলে-মেয়েরা নয় সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিরা প্রাণ দিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছে। এই সম্ভাবনার দ্বার যেন বাস্তবে রূপান্তরিত হয় সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন সুজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জমির উদ্দিন সরকার, রফিউর রাব্বি, সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলসহ আরো অনেকে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র জন ত ন র য়ণগঞ জ প রস ত ব ব যবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।