সংসদের উচ্চকক্ষ কতটা ভারসাম্য আনতে পারবে
Published: 6th, July 2025 GMT
আইন সভার উচ্চকক্ষ হবে ‘অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়নমূলক’ একটি স্তর, এটি সংসদের নিম্নকক্ষের বা সংসদে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য ও একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাবে—এমন চিন্তা থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন সভা গঠনের প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব দল দুই কক্ষের সংসদ গঠনের প্রস্তাবে একমত। কিন্তু উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি ও ক্ষমতাকাঠামো প্রশ্নে মতবিরোধ কাটেনি। এটি নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হলেই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তা নয়। বরং এটি নির্ভর করবে কোন পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের নির্বাচন হবে, উচ্চকক্ষের কেমন ক্ষমতা থাকবে, সেটার ওপর। প্রস্তাবে উচ্চকক্ষকে আসলে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শুধু সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে। এর বাইরে তার যে ক্ষমতা, তা অনেকটা আলংকারিক। তারপরও উচ্চকক্ষে বিল (আইনের খসড়া) পর্যালোচনা, সাময়িকভাবে বিল আটকে রাখা ও সুপারিশ দেওয়ার সুযোগ ভালো আইন তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এটা কতটা কাজের হবে, তা নির্ভর করবে উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতির ওপর। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষের যে নির্বাচনপদ্ধতি প্রস্তাব করেছে, তা নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তি আছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্নকক্ষে (সংসদ) নির্বাচন হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে, আসনভিত্তিক। আর উচ্চকক্ষে (সিনেট) নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে। অর্থাৎ নিম্নকক্ষে সাধারণ নির্বাচনে একটি দল সারা দেশে যত ভোট পাবে, তার অনুপাতে দলটি উচ্চকক্ষে আসন পাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই পদ্ধতি চালু হলে উচ্চকক্ষে কোনো দলের একক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এতে উচ্চকক্ষ ভারসাম্যমূলক এবং তুলনামূলক বেশিসংখ্যক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে উচ্চক্ষে। কারণ, এই পদ্ধতিতে কোনো দলের পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ারই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনো দলকে নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেতে হবে। দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর কোনোটিতেই কোনো দল এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পায়নি।
অন্যদিকে নিম্নকক্ষে আসন না পেলেও ভোটের অনুপাতে কোনো কোনো দলের উচ্চকক্ষে আসন পাওয়ার সুযোগ থাকবে।
বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিত্বনির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব করেছিল। তারাও উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছে। তবে তারা উচ্চকক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষে একটি দল যত আসন পাবে, তার ৫০ শতাংশ দলের সদস্যদের মধ্য থেকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে দিতে হবে। দলীয় ও নির্দলীয় সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উচ্চকক্ষের ক্ষমতাসংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করার ক্ষমতা থাকবে না। তবে নিম্নকক্ষে পাসকৃত অর্থবিল ছাড়া সব বিল উভয় কক্ষে উপস্থাপিত হতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকাতে পারবে না। উচ্চকক্ষ কোনো বিল দুই মাসের বেশি আটকে রাখলে, তা উচ্চকক্ষ দ্বারা অনুমোদিত বলে বিবেচিত হবে।
উচ্চকক্ষ কোনো বিল পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করলে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে।
উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে সংশোধনের সুপারিশসহ বিল পুনর্বিবেচনার জন্য নিম্নকক্ষে পাঠাতে পারবে। নিম্নকক্ষ উচ্চকক্ষের প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো, সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। নিম্নকক্ষে পরপর দুটি অধিবেশনে পাসকৃত বিল যদি উচ্চকক্ষ প্রত্যাখ্যান করে এবং নিম্নকক্ষ যদি এটি আবারও পরবর্তী অধিবেশনে পাস করে, তবে উচ্চকক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো যাবে।
সাধারণ বিলে উচ্চকক্ষের সম্মতির বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সংবিধান সংশোধন বিলে উচ্চকক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানএখন পর্যন্ত আলোচনায় মোটামুটি ঐকমত্য হয়েছে যে উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব সমর্থন করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কোনো কোনো দল উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষেও পিআর পদ্ধতি চায়।
তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিপক্ষে। তারা নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা মনে করে, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হলে কোনো দলের পক্ষেই সেখানে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব হবে না। এর ফলে সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব হবে না। সাধারণ বিলও উচ্চকক্ষে পাস করা কঠিন হবে।
পিআর পদ্ধতির সমর্থকেরা বলছেন, বিএনপি যেভাবে উচ্চকক্ষের গঠন চায়, তা হবে নিম্নকক্ষের ‘রেপ্লিকা’ বা হুবহু অনুলিপি। অর্থাৎ নিম্নকক্ষে কারও সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে উচ্চকক্ষেও তা থাকবে। এতে উভয় কক্ষেই ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থেকে যাবে, যা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেবে।
২৯ জুন ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এই মতপার্থক্য উঠে আসে। সেদিন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হয়, তাহলে এটি নিম্নকক্ষের ‘রেপ্লিকা’ হবে। আর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হলে সেটার কোনো মানে হয় না। আর উচ্চকক্ষের ক্ষমতা না থাকলে সেটার প্রয়োজনীয়তা থাকে না।
দ্বিকক্ষের প্রস্তাব কেনসংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছিল, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে একটি এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। নির্বাহী কার্যাবলির দুর্বল তদারকি, প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে দুর্বলতা এবং বিভিন্ন কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে সংসদ যথাযথ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নির্বাহী বিভাগের আধিপত্যের কারণে অর্থপূর্ণ সংসদীয় আলোচনা এবং সংসদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম লক্ষণীয়ভাবে সীমিত হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির কারণে জবাবদিহির জায়গাটা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
তাতে আরও বলা হয়, পর্যাপ্ত পর্যালোচনা এবং কার্যকর বিতর্ক ছাড়াই দ্রুত ও দুর্বল আইন প্রণয়নের কারণেও এক কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা সমালোচিত হয়েছে। সংসদীয় তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবে শাসক দলকে নিপীড়নমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যা স্বেচ্ছাচারী আইন প্রণয়ন ও ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণে সহায়তা করেছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনীর উদাহরণ টানা হয়। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় শাসনপদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনপদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। আর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া বিদ্যমান ব্যবস্থায় সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বার্থ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ যথাযথভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসব বিবেচনা করে কমিশন এককক্ষীয় আইনসভার কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো মোকাবিলার জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিকে কঠিন করার লক্ষ্যেই সংবিধান সংশোধন বিল উভয় কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাসের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ, অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। যদি একক দলের হাতে এই ক্ষমতা না থাকে, তাহলে সরকারি দল সংবিধান সংশোধন করতে চাইলে, কেন সংশোধন প্রয়োজন, তা অন্যদের বোঝাতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। একধরনের জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্র ছাড়া উচ্চকক্ষকে যে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অনেকটা আলংকারিক বলে মনে করেন সংসদ বিষয়ে গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চকক্ষের হাতে স্থায়ীভাবে আইন আটকানোর ক্ষমতা নেই। তাদের একমাত্র ক্ষমতা থাকবে সংবিধান সংশোধন বিলে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের যে ক্ষমতা প্রস্তাব করা হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হলে তা তেমন কোনো কাজের হবে না; নিম্নকক্ষ যা চাইবে উচ্চকক্ষ তাই করবে। পিআর পদ্ধতিতেই উচ্চকক্ষের নির্বাচন হওয়া উচিত।
অধ্যাপক নিজামের মতে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে যে আপত্তি তোলা হচ্ছে, সেখানে শক্ত কোনো যুক্তি দেখা যাচ্ছে না। উচ্চকক্ষে কাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ক ন ম নকক ষ র র অন প ত ভ রস ম য ষ র আসন র ক ষমত ব যবস থ দলগ ল র ঐকমত য র জন য অন ম দ দ র বল র জন ত সদস য ন করত আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা