Prothomalo:
2025-07-07@11:55:50 GMT

মার্টিন লুথারের ‘হাতুড়ি’

Published: 7th, July 2025 GMT

ধর্মীয় ইতিহাসের অলিন্দজুড়ে আমরা একটা জোরালো ধাতব শব্দ শুনতে পাই: মার্টিন লুথার (১০ নভেম্বর ১৪৮৩—১৮ ফেব্রুয়ারি ১৫৪৬) নামের ৩৩ বছর বয়েসী এক টগবগে অগাস্টিনীয় ফ্রায়ার উইটেনবার্গের ক্যাসল চার্চের দরজায় তাঁর ৯৫টি বক্তব্য হাতুড়ি ঠুকে গেঁথে দিচ্ছেন। এর আওয়াজটা এমন, যে আওয়াজের ফলে শেষ অব্দি হাজার বছরের রোমান ক্যাথলিক চার্চ—দুটি চার্চে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে—একটি অনুগত থাকছে রোমের পোপের প্রতি, আর অন্যটি পোপের শাসনের প্রতিবাদ করে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে প্রটেস্ট্যান্ট হিসেবে অভিহিত করছে।

১৯১৭ সালে লুথারের এই সর্বজনবিদিত কর্মের ৫০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়—অ্যালেক রাইরির ‘প্রটেস্ট্যান্ট’, এরিক মেটাক্স্যাসের ‘মার্টিন লুথার: দ্য ম্যান হু রিডিসকভারড গড অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’, লিন্ডাল রোপার রচিত ‘মার্টিন লুথার: রেনেগেড অ্যান্ড প্রফেট’ ইত্যাদি। এসব গ্রন্থে ছিল, স্বাভাবিকভাবেই, স্বনামধন্য মানুষটির আর তাঁর প্রভাবের পুনর্মূল্যায়ন। সেই পুনর্মূল্যায়নে নানা প্রসঙ্গেই লেখকেরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তবে তাঁদের অধিকাংশই একটি বিষয়ে সুর মিলিয়েছেন, আর তা এই যে সেই হাতুড়ি ঠোকার ঘটনাটি—রূপক অর্থে যথেষ্ট তৃপ্তিদায়ক হলেও—কখনোই ঘটেনি।

ঘটনাটির যে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, কেবল তা–ই নয়, লুথার নিজেও কখনোই সোজাসাপ্টাভাবে কোথাও বলেননি যে আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, যদিও অন্য অনেক বিষয়েই নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বেশ নাটকীয় বর্ণনা দিতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি যে ৯৫টি বক্তব্যের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন, সে কথা মনে করতে পারলেও তারপর তা দিয়ে কী করেছিলেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কেবল এটুকুই জানা গেছে, তালিকাটা তিনি স্থানীয় এক আর্চবিশপকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর এ ছাড়া সেই ৯৫টি বক্তব্য এমন কোনো আপসহীন দাবি-দাওয়ার তালিকা ছিল না যে তারই আলোকে ব্রাদার মার্টিনের ঠিক করে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী চার্চকে নিজের সংস্কার সাধন করতে হবে, যেমনটা কিনা এত দিন সাধারণ মানুষ ভেবে এসেছেন। বরং সে সময়ের অন্য সব ‘বক্তব্যে’র মতোই সেগুলো ছিল জনসমক্ষে পেশ করা কিছু প্রসঙ্গ, যেগুলো নিয়ে লোকে তর্কবিতর্ক বাদানুবাদ করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।

যা–ই হোক, সেই ৯৫টি বক্তব্য যে ‘রিফর্মেশন’ নামের যুগান্তকারী কাণ্ড ঘটাল, যার ফলে বিভক্ত হলো চার্চ আর তার ধর্মতত্ত্বে এল এক মৌলিক পরিবর্তন, সে বিষয়ে কমবেশি সবাই অবগত। লুথারের সংস্কার কালক্রমে আরও নানা সংস্কারের জন্ম দিয়েছিল, যেসব সংস্কারের অনেকগুলোই লুথারের পছন্দ হয়নি। এর পর থেকে চার্চ বিভক্ত হয়েই চলেছে। অ্যালেক রাইরি তাঁর ‘প্রটেস্ট্যান্ট’ গ্রন্থে প্রটেস্টান্টদের যতগুলো দল–উপদল বা ডিনোমিনেশন নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা হয়ে উঠেছে রীতিমতো কৌতুকপ্রদ। মানবজাতির এক–অষ্টমাংশ আজ প্রটেস্ট্যান্ট।

অ্যালেক রাইরি লিখিত বই ‘প্রটেস্ট্যান্ট’-এর প্রচ্ছদ.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সংকটে রিয়েল এস্টেট খাত, টিকে থাকার লড়াইয়ে জেসিএক্স

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মুখে। তবে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সংকটের মাত্রা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূল্যস্ফীতি, ডলারের ঘাটতি, বৈদেশিক লেনদেন জটিলতা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল এ খাত প্রায় অচল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রিমিয়াম হাউজিং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এই সংকটের ভেতরেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড, যারা জাপানের রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ক্রিড গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এম মুহিত হাসান বলেছেন, এ বছরটি আমাদের জন্য বেঁচে থাকার বছর, ব্যবসার মূল লক্ষ্য এখন শুধুই টিকে থাকা।

জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস মূলত ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে অভিজাত শ্রেণির জন্য। এই সেগমেন্টে আগে চাহিদা থাকলেও গত এক বছরে বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায়। অনেক পুরনো ক্লায়েন্ট পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করছেন না সময়মতো। নতুন বুকিং নেই বললেই চলে।

মুহিত হাসান বলেন, “আমাদের যেসব প্রকল্প চলমান, সেগুলোর কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে শুধু ব্র্যান্ড ইমেজ ধরে রাখার জন্য। কিন্তু, এই সময় নতুন বিক্রি না হওয়ায় রেভিনিউ আসছে না। ফলে, আর্থিক চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।”

“বর্তমানে দেশের আবাসন বাজারে অপেক্ষাকৃত ছোট ইউনিটের চাহিদা বেশি—বিশেষ করে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট। কিন্তু, জেসিএক্সের মতো বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে এই রুটে যেতে পারছে না।

আমাদের ব্যবসায়িক কাঠামো এবং প্রোডাক্ট লাইফসাইকেল একদিনে বদলানো সম্ভব নয়। ছোট ইউনিটে যেতে হলে নতুন প্ল্যানিং, নতুন ডিজাইন, নতুন অনুমোদন লাগে। এতে ১ থেকে ২ বছর সময় লেগে যাবে”, বলেন মুহিত।

তবে, বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি জলসিঁড়ি ও বসুন্ধরা এলাকায় ৫ থেকে ৬ কাঠার ছোট ছোট প্লটে কাজ শুরু করেছে। যদিও এসব প্রকল্পের অনুমোদন পেতে ৬ থেকে ১২ মাস সময় লাগে এবং অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ।

২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস এখন পর্যন্ত ১২টি প্রকল্প সফলভাবে হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ইনভেন্টরিতে রয়েছে প্রায় ৬০টি প্রকল্প—এর মধ্যে ২৮টি নির্মাণাধীন, ২২টি আসন্ন এবং ১০টি ভবিষ্যতের পরিকল্পনায়।

জেসিএক্স নিজেকে একটি এলইইডি সার্টিফাইড ডেভেলপার হিসেবে পরিচয় দেয়, যারা পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই নির্মাণে বিশ্বাসী। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি প্রকল্পে থাকে আলাদা স্থপতি। তাই, কোনো দুটি প্রোজেক্ট দেখতে একইরকম হয় না।

ক্রিড গ্রুপ জাপানের অন্যতম রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, যারা ১০টি দেশে কাজ করছে—তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জেসিএক্সের সঙ্গে তাদের অংশীদারত্ব এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। জাপানি কোম্পানির প্রকৌশলীরা প্রতি মাসেই প্রকল্প পরিদর্শনে এসে নির্মাণ মান যাচাই করে থাকেন।

কিন্তু, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় ক্রিড গ্রুপ এখন চাচ্ছে সাশ্রয়ী আবাসনের দিকে যেতে। জেসিএক্স-ও ধীরে ধীরে সে রুটে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা ৭০০ থেকে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ডিজাইন করছে, যা দেশের মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকবে।

মুহিত হাসান বলেন, ঢাকায় যেসব মানুষ মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছেন, তাদের যদি সমপরিমাণ কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে সেটিই হবে সত্যিকার অর্থে সাশ্রয়ী আবাসন।

তবে, বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জমির দামে অসামঞ্জস্যতা। অপেক্ষাকৃত দূরের এলাকাতেও প্লটের দাম অনেক বেশি। মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকায় ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও পর্যাপ্ত বড় প্লট খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

রিয়েল এস্টেট খাতে একের পর এক চ্যালেঞ্জ এসে পড়ছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১১ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। ক্রেতারা ঋণ পাচ্ছেন না, আবার অনেক পুরনো ক্রেতা কিস্তি দিতে পারছেন না। ফলে, কোম্পানিগুলোও ব্যাংকের কাছে নিজেদের দায় সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না, নতুন করে ঋণ নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এর মধ্যে কর ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু আরো বড় সমস্যা তৈরি করেছে। নতুন বাজেটে জমির রেজিস্ট্রেশন মূল্য বাড়ানো হলেও কর কমানো হয়েছে। এতে কিছু ক্রেতা আগেই রেজিস্ট্রেশন সেরে নিতে চাইছেন, আবার অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ট্যাক্স ফাইলে ‘হোয়াইট মানি’ না থাকলে কেউ ফ্ল্যাটের আসল দামে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশন না হলে আমরাও ইউনিট হস্তান্তর করতে পারি না। ফলে, ব্যবসার পুরো চেইনটাই ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিলাসবহুল আবাসন খাত থেকে সাশ্রয়ী ইউনিট নির্মাণে মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। কিন্তু, এই রূপান্তর বাস্তবায়নে সময়, নীতি সহায়তা ও ব্যাংকিং লেনদেনে সহজীকরণ প্রয়োজন।

দেশের রিয়েল এস্টেট খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু ট্যাক্স ছাড় বা জমির দামে ছাড় নয়, বরং প্রয়োজন নীতিগত সমর্থন ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ