ধর্মীয় ইতিহাসের অলিন্দজুড়ে আমরা একটা জোরালো ধাতব শব্দ শুনতে পাই: মার্টিন লুথার (১০ নভেম্বর ১৪৮৩—১৮ ফেব্রুয়ারি ১৫৪৬) নামের ৩৩ বছর বয়েসী এক টগবগে অগাস্টিনীয় ফ্রায়ার উইটেনবার্গের ক্যাসল চার্চের দরজায় তাঁর ৯৫টি বক্তব্য হাতুড়ি ঠুকে গেঁথে দিচ্ছেন। এর আওয়াজটা এমন, যে আওয়াজের ফলে শেষ অব্দি হাজার বছরের রোমান ক্যাথলিক চার্চ—দুটি চার্চে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে—একটি অনুগত থাকছে রোমের পোপের প্রতি, আর অন্যটি পোপের শাসনের প্রতিবাদ করে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে প্রটেস্ট্যান্ট হিসেবে অভিহিত করছে।
১৯১৭ সালে লুথারের এই সর্বজনবিদিত কর্মের ৫০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়—অ্যালেক রাইরির ‘প্রটেস্ট্যান্ট’, এরিক মেটাক্স্যাসের ‘মার্টিন লুথার: দ্য ম্যান হু রিডিসকভারড গড অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’, লিন্ডাল রোপার রচিত ‘মার্টিন লুথার: রেনেগেড অ্যান্ড প্রফেট’ ইত্যাদি। এসব গ্রন্থে ছিল, স্বাভাবিকভাবেই, স্বনামধন্য মানুষটির আর তাঁর প্রভাবের পুনর্মূল্যায়ন। সেই পুনর্মূল্যায়নে নানা প্রসঙ্গেই লেখকেরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তবে তাঁদের অধিকাংশই একটি বিষয়ে সুর মিলিয়েছেন, আর তা এই যে সেই হাতুড়ি ঠোকার ঘটনাটি—রূপক অর্থে যথেষ্ট তৃপ্তিদায়ক হলেও—কখনোই ঘটেনি।
ঘটনাটির যে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, কেবল তা–ই নয়, লুথার নিজেও কখনোই সোজাসাপ্টাভাবে কোথাও বলেননি যে আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, যদিও অন্য অনেক বিষয়েই নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বেশ নাটকীয় বর্ণনা দিতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি যে ৯৫টি বক্তব্যের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন, সে কথা মনে করতে পারলেও তারপর তা দিয়ে কী করেছিলেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কেবল এটুকুই জানা গেছে, তালিকাটা তিনি স্থানীয় এক আর্চবিশপকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর এ ছাড়া সেই ৯৫টি বক্তব্য এমন কোনো আপসহীন দাবি-দাওয়ার তালিকা ছিল না যে তারই আলোকে ব্রাদার মার্টিনের ঠিক করে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী চার্চকে নিজের সংস্কার সাধন করতে হবে, যেমনটা কিনা এত দিন সাধারণ মানুষ ভেবে এসেছেন। বরং সে সময়ের অন্য সব ‘বক্তব্যে’র মতোই সেগুলো ছিল জনসমক্ষে পেশ করা কিছু প্রসঙ্গ, যেগুলো নিয়ে লোকে তর্কবিতর্ক বাদানুবাদ করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
যা–ই হোক, সেই ৯৫টি বক্তব্য যে ‘রিফর্মেশন’ নামের যুগান্তকারী কাণ্ড ঘটাল, যার ফলে বিভক্ত হলো চার্চ আর তার ধর্মতত্ত্বে এল এক মৌলিক পরিবর্তন, সে বিষয়ে কমবেশি সবাই অবগত। লুথারের সংস্কার কালক্রমে আরও নানা সংস্কারের জন্ম দিয়েছিল, যেসব সংস্কারের অনেকগুলোই লুথারের পছন্দ হয়নি। এর পর থেকে চার্চ বিভক্ত হয়েই চলেছে। অ্যালেক রাইরি তাঁর ‘প্রটেস্ট্যান্ট’ গ্রন্থে প্রটেস্টান্টদের যতগুলো দল–উপদল বা ডিনোমিনেশন নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা হয়ে উঠেছে রীতিমতো কৌতুকপ্রদ। মানবজাতির এক–অষ্টমাংশ আজ প্রটেস্ট্যান্ট।
অ্যালেক রাইরি লিখিত বই ‘প্রটেস্ট্যান্ট’-এর প্রচ্ছদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে গুলিতে অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন পুলিশ সদস্য।
অঙ্গরাজ্যটির পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যারিস বুধবার সংবাদমাধ্যমকে হতাহতের এ তথ্য জানান।
ক্রিস্টোফার প্যারিসের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপিরো ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১১৫ মাইল পশ্চিমে নর্থ কোডোরাস টাউনশিপে ঘটনাস্থলে গেছেন।
কে বা কারা এ গুলিবর্ষণের পেছনে জড়িত, সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘আমাদের সমাজের জন্য একটি অভিশাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
পামেলা বন্ডি আরও বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য ফেডারেল এজেন্টরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।