রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ফরিদা পারভীনের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালেন স্বামী
Published: 7th, July 2025 GMT
লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন লিভারের রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। চার মাস আগে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে ভর্তিও হয়েছিলেন হাসপাতালে। তাঁকে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। এখন তাঁর অবস্থা আরও গুরুতর। এরই মধ্যে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চলছে তাঁর চিকিৎসা। নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পীর জটিল রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসায় রাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে তাঁর পরিবার।
এ বরেণ্যশিল্পীর চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে; তবে তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো ব্যক্তি পর্যায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা নয়, তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা চান তাঁর পরিবার। এমন তথ্য জানিয়েছেন যন্ত্রশিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ মিউজিশিয়ানস ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ফরিদা পারভীনের স্বামী গাজী আবদুল হাকিম।
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে তাঁর (ফরিদা পারভীন) লিভারের রোগ। ফুসফুসে পানি জমেছে, আবার ডায়াবেটিসের সমস্যাও আছে। ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেটা অনেক ব্যয়বহুল। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে আমার যা আছে, সব বিক্রি করে দেব। কয়েকজন উপদেষ্টা ইতোমধ্যে তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। রাষ্ট্র বলেছে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করবে। ওই টাকা দিয়ে আমি কী করব। তাঁকে তো উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। আমি তো অন্য কিছু চাই না। ফরিদা পারভীনের চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা আসছে। এটা হতেই পারে। যে যার দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলছেন। আগে তাঁকে বাঁচাতে হবে। সবাই তো ফরিদা পারভীনের সুস্থতা চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দু’জনই একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী। ফরিদা পারভীন মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সারা পৃথিবীজুড়ে তাঁর নাম। গান গেয়ে তিনি যা উপার্জন করেছেন তা দিয়ে করোনাভাইরাসের সময় কাজ হারানো হাজার হাজার মানুষকে খাইয়েছেন। তাঁর মতো শিল্পী অন্তত চিকিৎসা সেবাটাতো পাবে। সারাজীবন দেশের জন্য কাজ করে গেল, শিল্পের জন্য কাজ করে গেল। আমিও সারাজীবন সংগীতের সাধনা করে গেলাম। আমাদের প্রতি রাষ্ট্রেরও তো দায়িত্ব আছে। রাষ্ট্রের সহায়তায় বড় বড় চিকিৎসকের সমন্বয়ে বোর্ড বসিয়ে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। তাতে কাজ না হলে দেশের বাইরে নেওয়া হোক। তাঁর মতো শিল্পী সুচিকিৎসা না পেলে দেশেরই দুর্নাম হবে।’
প্রসঙ্গত, চার মাস আগেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ফরিদা পারভীনকে। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। কিছুদিন একটু ভালো ছিলেন শিল্পী, পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন