চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো দুই রোগীর শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বেসরকারি একটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় বলে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

দুই রোগীর নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা.

জাহাঙ্গীর আলম জানান, নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় অবস্থিত এপিক হেলথ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি ল্যাবে সোমবার (৭ জুলাই) রাতে নমুন পরীক্ষায় এক নারী ও এক পুরুষ রোগীর শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংগত কারণে দুই রোগীর নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি জানান, জিকা ভাইরাস যেহেতু অপ্রচলিত বিরল রোগ, তাই চূড়ান্ত ঘোষণা আইইডিসিআর প্রদান করবে।

জিকা কী:
জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় উগান্ডায় ১৯৪৭ সালে। ভাইরাসটি পাওয়া গিয়েছিল রেসাস ম্যাকাও বানরের শরীরে। পরবর্তী সময়ে পঞ্চাশের দশকে আফ্রিকান দেশগুলোয় মানুষের শরীরেও এই জীবাণু পাওয়া যায়। ভয়াবহ ব্যাপার হলো, ১৯৬০-১৯৮০ সালের মধ্যে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে ২০১৪ সালে।

জিকা ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। এই মশা দিনে বেশি কামড়ায়। আর এই মশা দিয়েই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও পীতজ্বরও ছড়ায়। রক্ত পরিসঞ্চালন এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তা গর্ভের শিশুতেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিষয়টি মারাত্মক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। জিকার দুটি ধরন—এশিয়ান ও আফ্রিকান।

জিকার লক্ষণ:
প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়। বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে। গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি। 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার:
জিকা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি হয়নি, তাই নিজেদের সচেতনতাই জরুরি। রাতে তো অবশ্যই, দিনেও মশারি ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে, প্রয়োজনে জানালায় মশানিরোধী জাল ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রয়োজন। জিকায় আক্রান্ত হলে বিশ্রাম এবং বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। গিঁটে বা শরীরে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। নিজে থেকেই ব্যথার ওষুধ খেয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না। জিকায় মৃত্যুর খবর খুব একটা পাওয়া না গেলেও ওপরে বর্ণিত মারাত্মক সমস্যাগুলো থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সাবধান থাকা জরুরি।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ