Samakal:
2025-07-08@23:30:24 GMT

ইলিশ দুর্লভ হওয়ার ইতিকথা

Published: 8th, July 2025 GMT

ইলিশ দুর্লভ হওয়ার ইতিকথা

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর বলা হলেও খোদ চাঁদপুরের মানুষই ইলিশ পায় না। বাস্তবেও চাঁদপুরের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল ও বরগুনায়। তবে এবার কোথাও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভরা মৌসুমেও মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশ। চাঁদপুর, বরগুনা, বরিশাল কিংবা পটুয়াখালীর মোকাম– কোথাও ভোক্তার নাগালের মধ্যে নেই ইলিশ। এ বছর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ইলিশের দাম বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বটে, সে অর্থে তা কার্যকর হয়নি। গত মাসের শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ইলিশের দাম যেন কোনো অবস্থাতেই অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশের দাম ধরে রাখার কথা বললেও বাস্তবে ইলিশ আকাশচুম্বী।

ইলিশের দাম অনেক দিন ধরেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও উপদেষ্টা সাধারণ মানুষকে ইলিশ খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন মাত্র ৬০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ‘স্বল্প মূল্যে’ ইলিশ বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন বটে, সে দিন অনেকেই ইলিশের জন্য এসে খালি হাতে ফিরেছেন। অল্প সময় পরই বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কথা ছিল প্রথম লটে বিক্রি হবে ৮৫০ কেজি। সেখানে বিক্রি করা হয়েছিল মাত্র ১০০ কেজি। আয়োজকরা এর বেশি ইলিশ নাকি সংগ্রহই করতে পারেননি! 

এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ আড়াই হাজার টাকায়ও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। জেলেরাও ঠিকমতো ইলিশ পাচ্ছেন না। প্রত্যাশা নিয়ে সাগর বা নদীতে জাল ফেলেও অনেকটা খালি হাতে ফিরছেন। সাগরে গিয়ে অনেকের খরচও উঠছে না। আগে যেখানে জাল ফেললেই ইলিশ পেতেন, এখন সেই জালে ইলিশ ধরা দিচ্ছে না। অবশ্য বড় ইলিশ ধরতে পারলে তা  সোনায় সোহাগা।
সোমবার প্রকাশিত সমকালের খবর, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জামাল মাতুব্বর নামে এক জেলের জালে ধরা পড়ে দুই কেজির এক ইলিশ, যা বিক্রি হয় ৭ হাজার ৭০০ টাকায়। ইলিশ দুর্লভ হয়ে ওঠার কারণেই এর দাম আকাশচুম্বী। আগেই ইলিশের দাম বেশি ছিল, এবার আরও বাড়ল। অথচ বাংলাদেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইলিশ হয়। কয়েক বছর আগের হিসাব বলছে, বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশের উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, ইলিশ উৎপাদনের সরকারি হিসাব বাস্তবসম্মত কিনা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তাহলে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন কেন? দিন দিন ইলিশের উৎপাদন বাড়লে এবারও তো তেমনটা হওয়ার কথা। অথচ বাজারে তার প্রতিফলন নেই। অনেক মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পরিবারও এখন ইলিশ কিনতে পারছে না।

সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে অনেকের ক্ষোভ ও অনাস্থা উঠে এসেছে। ইলিশ জাতীয় মাছ হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্যও এর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দরকার। কিন্তু প্রতিবেশ-পরিবেশের কারণে ইলিশ মাছ হয়ে উঠছে বিরল। তার পরও জাতীয় ইলিশ সবার জন্য হোক– এ প্রত্যাশা রাখতেই হবে। কীভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশিত। জাটকা সংরক্ষণসহ ইলিশের সব ঝুঁকির বিষয় চিহ্নিত করে এর বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। জেলেরা ইলিশ পেলে যেমন তাদের মুখে হাসি ফুটবে, তেমনি ভোক্তাও লাভবান হবেন।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু, রেলপথ অবরোধ

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুর রেলগেটে ট্রেনে কাটা পড়ে আইনুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রেলগেট না থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে দাবি করে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে খুলনা-চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা ও খুলনার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। 

নিহত আইনুল ইসলাম (২৫) আমিরপুর গ্রামের আরমান হোসেনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আমিরপুর রেলগেট অতিক্রম করছিল। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী আইনুল ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন। এ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা রেললাইনে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা রেলগেটে গেটম্যান নিয়োগের দাবিতে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে রাখেন। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চুয়াডাঙ্গা সদর ইউএনও এম সাইফুল্লাহ ও ওসি খালেদুর রহমান। তারা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গেটম্যান বসানোর আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে আটকে থাকা ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করে।
ইউএনও এম সাইফুল্লাহ জানান, ঘটনার পর তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিরপুর রেলক্রসিংয়ে দ্রুতই রেলগেট স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে রেলওয়ে। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ