Samakal:
2025-10-15@16:18:32 GMT

ইলিশ দুর্লভ হওয়ার ইতিকথা

Published: 8th, July 2025 GMT

ইলিশ দুর্লভ হওয়ার ইতিকথা

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর বলা হলেও খোদ চাঁদপুরের মানুষই ইলিশ পায় না। বাস্তবেও চাঁদপুরের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল ও বরগুনায়। তবে এবার কোথাও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভরা মৌসুমেও মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশ। চাঁদপুর, বরগুনা, বরিশাল কিংবা পটুয়াখালীর মোকাম– কোথাও ভোক্তার নাগালের মধ্যে নেই ইলিশ। এ বছর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ইলিশের দাম বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বটে, সে অর্থে তা কার্যকর হয়নি। গত মাসের শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ইলিশের দাম যেন কোনো অবস্থাতেই অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশের দাম ধরে রাখার কথা বললেও বাস্তবে ইলিশ আকাশচুম্বী।

ইলিশের দাম অনেক দিন ধরেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও উপদেষ্টা সাধারণ মানুষকে ইলিশ খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন মাত্র ৬০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ‘স্বল্প মূল্যে’ ইলিশ বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন বটে, সে দিন অনেকেই ইলিশের জন্য এসে খালি হাতে ফিরেছেন। অল্প সময় পরই বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কথা ছিল প্রথম লটে বিক্রি হবে ৮৫০ কেজি। সেখানে বিক্রি করা হয়েছিল মাত্র ১০০ কেজি। আয়োজকরা এর বেশি ইলিশ নাকি সংগ্রহই করতে পারেননি! 

এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ আড়াই হাজার টাকায়ও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। জেলেরাও ঠিকমতো ইলিশ পাচ্ছেন না। প্রত্যাশা নিয়ে সাগর বা নদীতে জাল ফেলেও অনেকটা খালি হাতে ফিরছেন। সাগরে গিয়ে অনেকের খরচও উঠছে না। আগে যেখানে জাল ফেললেই ইলিশ পেতেন, এখন সেই জালে ইলিশ ধরা দিচ্ছে না। অবশ্য বড় ইলিশ ধরতে পারলে তা  সোনায় সোহাগা।
সোমবার প্রকাশিত সমকালের খবর, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জামাল মাতুব্বর নামে এক জেলের জালে ধরা পড়ে দুই কেজির এক ইলিশ, যা বিক্রি হয় ৭ হাজার ৭০০ টাকায়। ইলিশ দুর্লভ হয়ে ওঠার কারণেই এর দাম আকাশচুম্বী। আগেই ইলিশের দাম বেশি ছিল, এবার আরও বাড়ল। অথচ বাংলাদেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইলিশ হয়। কয়েক বছর আগের হিসাব বলছে, বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশের উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, ইলিশ উৎপাদনের সরকারি হিসাব বাস্তবসম্মত কিনা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তাহলে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন কেন? দিন দিন ইলিশের উৎপাদন বাড়লে এবারও তো তেমনটা হওয়ার কথা। অথচ বাজারে তার প্রতিফলন নেই। অনেক মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পরিবারও এখন ইলিশ কিনতে পারছে না।

সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে অনেকের ক্ষোভ ও অনাস্থা উঠে এসেছে। ইলিশ জাতীয় মাছ হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্যও এর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দরকার। কিন্তু প্রতিবেশ-পরিবেশের কারণে ইলিশ মাছ হয়ে উঠছে বিরল। তার পরও জাতীয় ইলিশ সবার জন্য হোক– এ প্রত্যাশা রাখতেই হবে। কীভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশিত। জাটকা সংরক্ষণসহ ইলিশের সব ঝুঁকির বিষয় চিহ্নিত করে এর বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। জেলেরা ইলিশ পেলে যেমন তাদের মুখে হাসি ফুটবে, তেমনি ভোক্তাও লাভবান হবেন।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

সনদে সই করব কি না অনুষ্ঠানে গেলে দেখতে পারবেন: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন এবং আশা করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সনদে সই করবেন কি না, সেটা অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেখতে পারবেন।

আজ বুধবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অতি জরুরি বৈঠক শেষে বের হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘১৭ তারিখে (শুক্রবার) আমরা আশা করি, যাব। মাত্র এক দিন বাকি আছে, ওই দিন গেলেই ইনশা আল্লাহ দেখে ফেলবেন।’ কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।’

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোট আগে হতে হবে। তারা নভেম্বর মাসে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। নভেম্বরে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, এটা তারা চায়।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে তাতে ভোট পড়ার হার কম হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের কর্মী–সমর্থকরা তাঁদের পছন্দের মার্কায় ভোট দিতে বেশি আগ্রহী থাকবেন। তখন গণভোটের গুরুত্বই থাকবে না। সে জন্য তাঁরা গণভোট নভেম্বরে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনকে তাঁরা বলেছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেগুলো একটি প্যাকেজ করে একটি প্যাকেজেই গণভোট হতে হবে।

গণভোটের জন্য রাজি হওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা। তবে গণভোটের সময় নিয়ে ভিন্নতা থেকে গেছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, গণভোট হবে সংস্কার কমিশনের জন্য। জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। গণভোটের এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো নির্বাচনী আচরণে কিছু পরিবর্তন আনবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ এবং ‘পিআর সিস্টেম বাই ভোটার নট বাই দি এমপিস’ এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী উচ্চকক্ষের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনই হয়, তাহলে উচ্চকক্ষ তো পাস হলো না। তাহলে কি আবার একটা নির্বাচন হবে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ