Prothomalo:
2025-11-16@09:04:06 GMT

দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে 

Published: 16th, November 2025 GMT

নিভু নিভু আলোয় মঞ্চে উঠলেন একদল তরুণ-তরুণী। ধীরে ধীরে সুরের তালে শুরু হলো নাচ। হাতের ভঙ্গি, কোমরের বাঁক, পায়ের তাল, কী নেই এতে। মৃদঙ্গের লয়, মঞ্জিরার টিটি ধ্বনি ও তরুণীর দৃষ্টিভঙ্গি—সব মিলিয়ে স্পর্শ করল দর্শকের হৃদয়। তাই তো শেষ হতেই মিনিটখানেক হলো তাঁদের হাততালি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে দেখা যায় এ দৃশ্য। তরুণ-তরুণীদের নাচের দলের নেতৃত্বে ছিলেন নৃত্যশিল্পী প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া। অবশ্য শুধু থিয়েটার ইনস্টিটিউট নয়, দেশ–বিদেশে নানা জায়গায় মনোমুগ্ধকর এ নৃত্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা। শিশুকাল থেকে প্রায় তিন দশক ধরেই তিনি এ চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ার করতালা গ্রামে। তাঁর বাবা নিশীত কান্তি বড়ুয়া ও মা বীণা বড়ুয়া। তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০০৮ সাল থেকে তিনি নৃত্য শেখার প্রতিষ্ঠান নৃত্যরূপ একাডেমি পরিচালনা করছেন। তাঁর এ প্রতিষ্ঠান থেকে নাচ শিখছেন শত শত শিক্ষার্থী।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া মূলত ওডিশি নৃত্যের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ নৃত্য ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে শরীরের ত্রিভঙ্গ ভঙ্গি, কোমল হাতের ছন্দ ও চোখের ভাষা—একসঙ্গে একটি গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়। খ্যাতিমান ওডিশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী ছিলেন প্রিয়াঙ্কার গুরু। এ ছাড়া তিনি কলকাতার নৃত্যশিল্পী দেবমিত্রা সেনগুপ্তা ও বেনজীর সালাম থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এসবের বাইরে প্রিয়াঙ্কার ঝুলিতে রয়েছে বিভিন্ন একাডেমিক সনদ। চলতি বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। এ ছাড়া শাশ্বত ললিতকলা একাডেমি থেকে পাঁচ বছর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদি দুটি কোর্সের সনদও রয়েছে তাঁর। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ বছর ধরে তিনি ওডিশি নৃত্যের সঙ্গে রয়েছেন।

প্রিয়াঙ্কা বড়ুয়া.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের দুরবস্থার সময় দায়িত্বে ছিলেন যারা

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংককে যাঁরা সমস্যায় ফেলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংককে সমস্যায় ফেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ব্যাংকের সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেসব ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার করার কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে।

 এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। 

এক্সিম ব্যাংক

পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের। বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা দুজনেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

যাঁরা এ জন্য দায়ী তাঁদের অবশ্যই বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। যথাযথ বিচার হলে তা উদাহরণ হয়ে থাকবে। এতে পরবর্তী সময়ে আর কেউ ব্যাংক লুটপাটের সাহস করবে না।  মোস্তফা কে মুজেরী সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও পরিচালক ছিলেন তাঁর স্ত্রী নাসরিন ইসলাম। এ ছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন, মো আসাদুল্লাহ, নুরুল আমিন, অঞ্জন কুমার সাহা, নাজমুস সালেহীন, কাওসার আলম ছিলেন পরিচালক। এ ছাড়া দেড় দশক ব্যাংকটির এমডি ছিলেন ফরীদ উদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন আটক হয়ে কারাগারে আছেন।

ইউনিয়ন ব্যাংক

বাকি চারটি ব্যাংকের প্রতিটিতে এস আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পরিচালক ছিলেন। ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম। পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান করা হয় অধ্যাপক মো. সেলিম উদ্দিনকে। ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মো. আবদুস সালাম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর, মারজিনা শারমিন, রাশেদুল আলম, মোহাম্মদ ফজলে মোরশেদ, হালিমা বেগম, ওসমান গণি, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল, আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ। ব্যাংকটির এমডি ছিলেন এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী; সরকার পরিবর্তনের পর তিনি পালিয়ে যান।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবাসী নিজাম চৌধুরী। অন্য পরিচালকেরা সবাই এস আলম পরিবারের সদস্য ও তাঁদের কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাইমুনা খানম, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল, আরিফ আহমেদ, ফারজানা বেগম, ওয়াহিদুল আলম শেঠ, সুব্রত কুমার ভৌমিক, শহীদুল আলম, শাহানা ফেরদৌস, বোরহানুল হাসান চৌধুরী, রোকিয়া ইয়াসমিন ও মোহাম্মদ ওহিদুল আলম। এ ছাড়া পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ ফারুক, মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, হাসান মনসুর, মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, আহমেদ মুক্তাদির আরিফ, হাসান ইকবাল, মাহবুব আলম। শুরুতে ব্যাংকটির এমডি ছিলেন আর্থিক খাতে আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেন হাবিব হাসনাত।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক 

২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দখল নেয় এস আলম গ্রুপ। শুরুতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান হন এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। ২০১৭ সালে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পান কাজী ওসমান আলী। এরপর এমডি হন জাফর আলম। ২০১৭ সালের পর পরিচালক ছিলেন মো. সায়েদুর রহমান, মো. কামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, জেবুননেসা আকবর, আলী হাসান মো. মাহমুদ রিবন, আরশাদুল আলম, মাহমুদুল আলম, মোহাম্মদ আবুল কালাম, বদরুন নেসা আলম ও মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। পরিচালক ছিলেন তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন। এ ছাড়া তাঁদের পরিবারের সদস্য আবদুল্লাহ হাসান, রহিমা বেগম ও আতিকুর নেসা পরিচালক ছিলেন। পাশাপাশি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল মালেক, খন্দকার ইফতেখার আহমদ, মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও আশরাফুল মোস্তফা চৌধুরী পরিচালক ছিলেন। দেড় দশক ব্যাংকটির এমডি ছিলেন এ এ এম জাকারিয়া ও সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, কিছু পরিচালক ও কর্মকর্তা মিলে ব্যাংক পাঁচটিকে শেষ করেছে।  যাঁরা এ জন্য দায়ী তাঁদের অবশ্যই বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। যথাযথ বিচার হলে তা উদাহরণ হয়ে থাকবে। এতে পরবর্তী সময়ে আর কেউ ব্যাংক লুটপাটের সাহস করবে না। যদিও এখন পর্যন্ত আর্থিক খাতে দোষীদের কারও বিচার হতে দেখা গেল না, এটা দুঃখজনক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ