‘আমি রাগ করি না’—এটা কি ভালো কিছু
Published: 10th, July 2025 GMT
স্যাম পার্কারের মতে, যাঁরা বলেন ‘আমি কখনো রাগ করি না’, একটা সময় গিয়ে এর জন্য তাঁদের বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়। স্যাম তাঁর বইটি লিখেছেন তাঁদের জন্য, যাঁরা সব সময় অন্যকে খুশি রাখতে চান, যতটা সম্ভব ঝামেলা এড়িয়ে চলেন এবং নিজেদের প্রতিনিয়ত উন্নত করতে চান। নিজের অভিজ্ঞতা, থেরাপিস্ট ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বইটি লিখেছেন স্যাম।
একটা সময় পর্যন্ত স্যাম পার্কারের ধারণা ছিল, যাঁরা ঝগড়াটে মনোভাবের কিংবা কথায় কথায় মেজাজ হারান, তাঁদেরই বুঝি রাগের সমস্যা থাকে। যেদিক দিয়ে তিনি বেশ ব্যতিক্রম। জাগতিক রাগ-ক্রোধ তিনি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিতে পারতেন। পার্কার বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার কাছে মনে হতো, আমি বোধ হয় রাগ–ক্রোধের ঊর্ধ্বে। জাগতিক কোনো কিছুই আমাকে স্পর্শ করতে পারে না।’
রাগ প্রকাশ না করলে যা হয়কিন্তু ধীরে ধীরে স্যাম বুঝতে পারেন, বছরের পর বছর নিজের রাগ দমন করার ফলে তাঁর মধ্যে বাসা বেঁধেছে অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ।
ত্রিশে পা দেওয়ার পর থেকে কম কিছু চেষ্টা করেননি স্যাম; যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, জার্নালিং, এমনকি নিয়ম করে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসলও করতেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই মনে শান্তি মিলছিল না। একদিন হঠাৎ বুঝতে পারেন, তাঁর মনে শোক-দুঃখ কিংবা উদ্বেগ নয়, আদতে বাসা বেঁধেছে ক্রোধ। বছরের পর বছর মনের মধ্যে যে রাগ–ক্ষোভ দমন করে এসেছিলেন, সেসবই বেরিয়ে আসছে আগ্নেয়গিরির লাভার মতো।
রাগ মানেই খারাপ কিছু নয়পার্কারের মতো অনেকের মধ্যেই ক্রোধ প্রকাশ করার ব্যাপারটা নেই। অনেকেই ধরে নেন, রাগ-ক্রোধ প্রকাশ করা শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর। অথচ ব্যাপারটা উল্টো, রাগ প্রকাশ না করে তা নিজের মধ্যে চেপে রাখাই ক্ষতিকর। কারণ, বাকি সব অনুভূতির মতো রাগও আমাদের চিরন্তন অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
সেই অনুভূতি যখন দীর্ঘদিন ধরে নিজের ভেতরে চাপা থাকে, তখন তা অজান্তেই মনের ক্ষতি করে। রাগ চেপে রাখতে রাখতে অনেকে ভুলেই যান, সময়ে সময়ে এটিকেও প্রকাশ করতে হয়।
পার্কারের মতে, রাগের সঙ্গে অনেকেই আগ্রাসন কিংবা সহিংসতাকে গুলিয়ে ফেলেন। ফলে না চাইতেও রাগের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব আছে। থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রাগের বশবর্তী হয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যাওয়া, বড় ধরনের ভুল করে ফেলার ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখি। কিন্তু যে রাগের কথা বলা হচ্ছে, সেই রাগ এতটা ভয়াবহও নয়। বরং স্বাভাবিক বিরক্তি বা ক্রোধের প্রকাশ। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মানুষ সাধারণ রাগের বহিঃপ্রকাশ থেকেও দূরে থাকে। এখানেই সমস্যা।
এর পেছনে কাজ করেছে বহু বছর ধরে রাগের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব। রাগের বিষয়টিকে ঢালাওভাবে ‘অবহেলা’ করা হয়েছে বছরের পর বছর। ফলে রাগ চেপে রাখা কিংবা পুষে রাখার ঘটনা ঘটছে অহরহ। রাগ যতক্ষণ না পর্যন্ত আগ্রাসনে পরিণত হয়, ততক্ষণ আমরা কথা বলতে চাই না। কিন্তু এই নীরবতা রাগের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনবর্ষাকালে দেয়ালে ড্যাম্প এড়ানোর ঘরোয়া সমাধান জেনে রাখুন১৬ ঘণ্টা আগেরাগের ধরনধারণআবেগ–অনুভূতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। কিন্তু রাগকে যেন আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে রাখি। রাগ সঠিকভাবে প্রকাশ করা হলে বা নিজের বিরক্তি চেপে রাখা না হলে তা আমাদের ক্ষতি নয়, উল্টো ভালোই করে।
যে কারণে পার্কার রাগকে ভাগ করেছেন দুটি ভাগে। ‘ক্যারেক্টারিস্টিক’ বা স্বভাবজাত ও ‘সিচুয়েশনাল’ বা পরিস্থিতিগত। স্বভাবজাত রাগ নির্ভর করে বংশগত বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশের ওপর। যাঁদের এ ধরনের রাগ বেশি, তাঁরা দ্রুত মেজাজ হারান। অন্যদিকে পরিস্থিতিগত রাগ অস্থায়ী। হতাশা থেকে এ ধরনের রাগ তৈরি হয়।
পরিস্থিতিগত রাগ ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো, এই রাগ আপনি কীভাবে প্রকাশ করছেন? সময়ে সময়ে কি এটি প্রকাশ হচ্ছে? নাকি চেপে রাখছেন লম্বা সময় ধরে?
আরও পড়ুন২৬ বছর বয়সে আমার ‘জন্ম’ হয়েছে০৬ জুলাই ২০২৫রাগ চেপে না রাখলে কী লাভলম্বা সময় ধরে এই রাগ চেপে রাখার অর্থ একটিই, ভেতরে–ভেতরে কষ্ট পাওয়া। আগেই বলেছি, দীর্ঘদিন রাগ চেপে রাখলে তা পরিণত হয় উদ্বেগে। অনেক সময় খুব ছোট একটি বিষয়েও এই জমে থাকা রাগ ফুলেফেঁপে ওঠে। এমনও হয়, রাগ দমন করতে করতে তা বৃদ্ধি পায় বহুগুণে।
তবে সবাই সমানভাবে রাগ প্রকাশ করতে পারেন না। নারীদের জীবনের শুরু থেকেই রাগ দমন করতে শেখানো হয়। ফলে বেশির ভাগ সময় তাঁদের রাগ প্রকাশের সহজাত প্রতিক্রিয়া হলো কান্না। অন্যদিকে ছেলেরা রাগ প্রকাশে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও, তা কীভাবে সামাল দিতে হয়, তা শেখানো হয় না। ফলে রাগের প্রতি সবার নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় ছোটবেলা থেকেই।
রাগের বহিঃপ্রকাশ কোনো ব্যক্তির ওপর না ঝেড়ে জড় বস্তুর ওপর ঝাড়াই ভালো। বিশেষ করে বালিশে ঘুষি মারা বা চিৎকার করে রাগ প্রকাশ করা বেশ উপকারী, সীমিত সময়ের জন্য হলেও। এ ছাড়া বক্সিং, জগিং এমনকি নাচও এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। চাইলে জার্নালিং, ছবি আঁকার মাধ্যমে রাগকে সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করা যায়।
তবে রাগের পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, রাগের সময় বা পর হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বরং সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে সেটি ফলপ্রসূ হয়। রাগ করলে সম্পর্কের ক্ষতি হয়, এই ভেবে যখন রাগ চেপে রাখছেন, তখন রাগের সঠিক বহিঃপ্রকাশ করলে হয়তো সম্পর্কটা আরও ভালো অবস্থানে যেতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
আরও পড়ুনএক রাগে ৪০ বছর!২৯ আগস্ট ২০১৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র গ প রক শ প রক শ ক র জন য অন ভ ত মন ভ ব র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।
আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’
তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’
মুশফিকুর রহিম