পুরোনো ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে দেশ। প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে এমন ভয়াবহ নির্মমতায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শোবিজ তারকারাও।

এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। এই তালিকায় যুক্ত হলেন ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মোহাম্মদ মুক্তাদির। তবে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সালমান দিয়েছেন ভিন্ন এক বার্তা। তিনি সতর্ক করেছেন, এমন ঘটনা নিয়ে যেন কেউ রাজনৈতিক ফাঁদে পা না দেন।

শনিবার দুপুরে ফেসবুকে সালমান লিখেছেন, “যে ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ড আপনাকে কষ্ট দেয়, সেগুলো পাশের রাজনৈতিক লোকগুলোর কাছে আনন্দের খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। শুধু কোনও জাতীয় সংকটে কেউ আপনার পক্ষে কথা বলছে বলে মনে করবেন না যে তারা ন্যায়বিচারের পক্ষে আছে। তারা শুধু সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের স্বার্থের জন্য। মানবতার জন্য নয়, সহমর্মিতার জন্য নয়।’’
তিনি আরও লিখেছেন, “যারা নিঃস্বার্থভাবে সবসময় আপনার পাশে থেকেছে, তাদের অনেকেই তাদের জীবন বা হাত-পা হারিয়ে ফেলেছে। যারা সত্যি দেশের ভালোর জন্য কাজ করতে চায়, তারা কখনও রাজনৈতিক ফলাফলের জন্য কাজ করে না।”

সালমান মুক্তাদির সতর্ক করে বলেন, “চারপাশ চিনুন। যারা আপনার আবেগ ব্যবহার করে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে চায়, তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। তারা চায় আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ুন, আপনি অসহায় বোধ করুন। যাতে আপনি তাদেরই আপনার ত্রাণকর্তা হিসেবে ভাবেন। শুধু রাজনৈতিক সংগঠনের পেছনে দৌড়াবেন না। আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধ এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তারা কোন দলে সেটা মুখ্য নয়।”

সালমানের কথায়, সব অপরাধীই রাজনৈতিক নয়। কিন্তু আমরা হয়তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাচ্ছি— যদি আমাদের লক্ষ্য হয় শুধু একটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে যাওয়া, তাহলে আমরা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যাই। আমরা তখন প্রকৃত অর্থে অপরাধের বিরুদ্ধে নয়, বরং সেই দলের করা অপরাধের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থেকে যাই। অথচ বাংলাদেশে প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি হওয়া উচিত। প্রতিটি অপরাধ দিনের আলোয় আসা উচিত। অন্যের রাজনৈতিক এজেন্ডার ফাঁদে পা দেবেন না। আপনার মানবতা এবং সহমর্মিতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে দেবেন না।’’

এরপর সোহাগের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সোহাগের ঘটনাটি ইন্টারনেটে আসতে দুই দিন লেগে গেছে। আপনি বলছেন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিএনপি, এনসিপি কেউই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কিছুই জানল না, কেউ কিছু বলল না, অবস্থান নিল না। বিএনপিকে তাদের লোকজনের কার্যকলাপের জন্য কেউ দায়ী করল না। অর্থাৎ এতো বড় বড় সংগঠন থাকার পরও ফেসবুকের কিশোর-তরুণরাই সবচেয়ে আগে তথ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা/রাহাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক অপর ধ র র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ