স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: সুইডেনের মুরগি বনাম বাংলাদেশের মানুষ
Published: 22nd, July 2025 GMT
ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এ ঘটনায় আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে সুইডেনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথা মনে পড়ছে। সালটা ২০০৬ কিংবা ২০০৭ হবে।
বাংলাদেশ থেকে সুইডেনের বিখ্যাত লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে এশিয়ান স্টাডিজে মাস্টার্স করতে গিয়েছি। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখি, গাড়িগুলো সব থেমে গেছে। আমিও দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি গাড়িগুলো চলে যাওয়ার পর পার হব। কিন্তু হায়! গাড়িগুলো সব দাঁড়িয়েই আছে।
হঠাৎ একজন গাড়ি থেকে নেমে বলেন: ‘তুমি বোধ করি এখানে নতুন এসেছ। এখানে জেব্রা ক্রসিংয়ে মানুষ আগে। তুমি পার হওয়ার পরই আমরা যাব।’
সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম মানুষ হওয়ার মূল্য কত। তবে আমার বোঝার তখনো অনেক বাকি। একদিন পত্রিকা হাতে নিয়ে একটা খবরের শিরোনাম দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! শিরোনাম বলছে, ‘সুইডেনের বিমানবাহিনী একজন মুরগির খামারির কাছে ক্ষমা চেয়েছে’। শিরোনাম দেখে পড়ার ইচ্ছা হলো।
আরও পড়ুনআবারও মৃত্যুর মিছিল: আমরা ভুলে যাই, মায়াকান্নায় প্রতিকারও হারিয়ে যায়২ ঘণ্টা আগেবিস্তারিত পড়ে যা বুঝলাম, সেটা হচ্ছে, বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমানগুলো মুরগির খামারের খুব নিচ দিয়ে উড়ে গেছে। এতে যে বিকট শব্দ হয়েছে, তাতে কিছু মুরগি অন্য রকম আচরণ করতে শুরু করেছে। খামারি ভদ্রলোক মুরগিগুলোকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছেন। চিকিৎসক নাকি বলেছেন, বিকট শব্দের কারণেই ওরা এমন করছে!
খামারি বেচারা বিমানবাহিনীর নামে মামলা করে দিয়েছেন! কারণ, ওই এলাকায় এত নিচ দিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার কোনো বিধান ছিল না। শেষমেশ সুইডেনের বিমানবাহিনী তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। তো, এই হচ্ছে সুইডেনের মানবাধিকার। সামান্য কিছু মুরগি অন্য রকম আচরণ শুরু করেছে। এ জন্য পুরো বিমানবাহিনী একজন খামারির কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
আমরা কি এটা চিন্তাও করতে পারি? কোনো খামারির কি সাহস হবে একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়া? খামারির কথা বলছি কেন; দেশের কোনো নাগরিকেরই কি এই সাহস হবে?
উৎসুক মানুষের ভিড় আমরা দেখতে পেয়েছি। রাজনীতিবিদেরা এমন একটা পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কি ভিড় যাতে কম হয়; সেই চেষ্টা করতে পারতেন না? আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি কি আমাদের নেই?ঢাকাকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এই শহরের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমান কেন উড়বে? দেশে কি আর কোনো জায়গা ছিল না? প্রশিক্ষণ যদি নিতেই হয়, অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, নদী-নালা, খাল-বিল আছে; কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা আছে। ঢাকায় কেন?
তা ছাড়া এর মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে যে এই বিমানগুলো অনেক পুরোনো। এমন বিমান আকাশে থাকারই কথা না। অথচ সেই বিমান দিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ! এই যে একটা ঘটনা ঘটে গেছে; এই লেখা যখন লিখছি, শতাধিক বাচ্চা আগুনে পুড়ে মেডিকেলে কাতরাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত?
উৎসুক মানুষের ভিড় আমরা দেখতে পেয়েছি। রাজনীতিবিদেরা এমন একটা পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কি ভিড় যাতে কম হয়; সেই চেষ্টা করতে পারতেন না? আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি কি আমাদের নেই?
আরও পড়ুনএই মুহূর্তে রাজনৈতিক নেতাদের হাসপাতালে কাজ কী২১ ঘণ্টা আগেসবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, অনেকগুলো মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে, যাদের আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না। যারা এর জন্য দায়ী তারা কখনো ক্ষমা চাইবে? এই সংস্কৃতি কি আমাদের আদৌ তৈরি হয়েছে?
সুইডেনে ও বাংলাদেশের মাঝে কোনো তুলনাই চলে না। পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোর একটি হচ্ছে সুইডেন। দেশটির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দরিদ্র দেশের কোনো তুলনাই হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ নামক এই জনপদের নাগরিকেরা তো মানুষ। মুরগি কিংবা পশুপাখি নয়। সামান্য মানবাধিকার পাওয়ার যোগ্যতাও কি এই জনপদের মানুষের নেই? নাকি বেঘোরে মৃত্যুকেই মেনে নিতে হবে দিনের পর দিন?
ড.
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ম নব হ ন র পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স