ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এ ঘটনায় আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে সুইডেনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথা মনে পড়ছে। সালটা ২০০৬ কিংবা ২০০৭ হবে।

বাংলাদেশ থেকে সুইডেনের বিখ্যাত লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে এশিয়ান স্টাডিজে মাস্টার্স করতে গিয়েছি। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখি, গাড়িগুলো সব থেমে গেছে। আমিও দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি গাড়িগুলো চলে যাওয়ার পর পার হব। কিন্তু হায়! গাড়িগুলো সব দাঁড়িয়েই আছে।

হঠাৎ একজন গাড়ি থেকে নেমে বলেন: ‘তুমি বোধ করি এখানে নতুন এসেছ। এখানে জেব্রা ক্রসিংয়ে মানুষ আগে। তুমি পার হওয়ার পরই আমরা যাব।’

সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম মানুষ হওয়ার মূল্য কত। তবে আমার বোঝার তখনো অনেক বাকি। একদিন পত্রিকা হাতে নিয়ে একটা খবরের শিরোনাম দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! শিরোনাম বলছে, ‘সুইডেনের বিমানবাহিনী একজন মুরগির খামারির কাছে ক্ষমা চেয়েছে’। শিরোনাম দেখে পড়ার ইচ্ছা হলো।

আরও পড়ুনআবারও মৃত্যুর মিছিল: আমরা ভুলে যাই, মায়াকান্নায় প্রতিকারও হারিয়ে যায়২ ঘণ্টা আগে

বিস্তারিত পড়ে যা বুঝলাম, সেটা হচ্ছে, বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমানগুলো মুরগির খামারের খুব নিচ দিয়ে উড়ে গেছে। এতে যে বিকট শব্দ হয়েছে, তাতে কিছু মুরগি অন্য রকম আচরণ করতে শুরু করেছে। খামারি ভদ্রলোক মুরগিগুলোকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছেন। চিকিৎসক নাকি বলেছেন, বিকট শব্দের কারণেই ওরা এমন করছে!

খামারি বেচারা বিমানবাহিনীর নামে মামলা করে দিয়েছেন! কারণ, ওই এলাকায় এত নিচ দিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার কোনো বিধান ছিল না। শেষমেশ সুইডেনের বিমানবাহিনী তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। তো, এই হচ্ছে সুইডেনের মানবাধিকার। সামান্য কিছু মুরগি অন্য রকম আচরণ শুরু করেছে। এ জন্য পুরো বিমানবাহিনী একজন খামারির কাছে ক্ষমা চেয়েছে।

আমরা কি এটা চিন্তাও করতে পারি? কোনো খামারির কি সাহস হবে একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়া? খামারির কথা বলছি কেন; দেশের কোনো নাগরিকেরই কি এই সাহস হবে?

উৎসুক মানুষের ভিড় আমরা দেখতে পেয়েছি। রাজনীতিবিদেরা এমন একটা পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কি ভিড় যাতে কম হয়; সেই চেষ্টা করতে পারতেন না? আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি কি আমাদের নেই?

ঢাকাকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এই শহরের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমান কেন উড়বে? দেশে কি আর কোনো জায়গা ছিল না? প্রশিক্ষণ যদি নিতেই হয়, অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, নদী-নালা, খাল-বিল আছে; কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা আছে। ঢাকায় কেন?

তা ছাড়া এর মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে যে এই বিমানগুলো অনেক পুরোনো। এমন বিমান আকাশে থাকারই কথা না। অথচ সেই বিমান দিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ! এই যে একটা ঘটনা ঘটে গেছে; এই লেখা যখন লিখছি, শতাধিক বাচ্চা আগুনে পুড়ে মেডিকেলে কাতরাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত?

উৎসুক মানুষের ভিড় আমরা দেখতে পেয়েছি। রাজনীতিবিদেরা এমন একটা পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কি ভিড় যাতে কম হয়; সেই চেষ্টা করতে পারতেন না? আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি কি আমাদের নেই?

আরও পড়ুনএই মুহূর্তে রাজনৈতিক নেতাদের হাসপাতালে কাজ কী২১ ঘণ্টা আগে

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, অনেকগুলো মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে, যাদের আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না। যারা এর জন্য দায়ী তারা কখনো ক্ষমা চাইবে? এই সংস্কৃতি কি আমাদের আদৌ তৈরি হয়েছে?

সুইডেনে ও বাংলাদেশের মাঝে কোনো তুলনাই চলে না। পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোর একটি হচ্ছে সুইডেন। দেশটির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দরিদ্র দেশের কোনো তুলনাই হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ নামক এই জনপদের নাগরিকেরা তো মানুষ। মুরগি কিংবা পশুপাখি নয়। সামান্য মানবাধিকার পাওয়ার যোগ্যতাও কি এই জনপদের মানুষের নেই? নাকি বেঘোরে মৃত্যুকেই মেনে নিতে হবে দিনের পর দিন?

ড.

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম নব হ ন র পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত

দেশের পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক।

সোমবার (৩ নভেম্বর) ডিবিএ’র সেক্রেটারি মো. দিদারুল গনী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন

ডিএসইতে সূচক কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে মোট ১৫ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ১২ জন পরিচালক।

নির্বাচিতরা আগামী ২ বছর (২০২৬ ও ২০২৭) ডিবিএ‘র নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচিত সদস্যরা ডিবিএ’র আসন্ন বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মো. মনিরুজ্জামান, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মো. নাফিজ-আল-তারিক ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এছাড়া পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন–এবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাফিউজ্জামান বোখারী, এস সি এল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইফতেখার জোনায়েদ, আর এন ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাদিম, আজম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কবির মজুমদার, নিউ এরা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরওয়াই শমসের, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও আমিনুল ইসলাম, জি এম এফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ নাহিদ আহমেদ, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈম মো. কাইয়ুম, ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এক্সপো ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ওসমান গনি চৌধুরী, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার শফিকুর রহিম ও এসএআর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান।

ঢাকা/এনটি/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স