সিনথেটিক প্লাস্টিক ভেঙে খাওয়া মিঠাপানির ছত্রাক শনাক্ত করেছেন জার্মানির লিবনিজ ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার ইকোলজির বিজ্ঞানীরা। ছত্রাকটি সাধারণ প্লাস্টিক বিশেষ করে পলিউরেথেন খেয়ে বিকশিত হলেও শক্ত প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা লড়াই করতে হয়। আর তাই বিশেষ ধরনের এই ছত্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিক দূষণের সম্ভাব্য প্রাকৃতিক সমাধান করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, জার্মানির লেক স্টেচলিন নামের একটি হ্রদে পাওয়া এই ছত্রাক শুধু নির্দিষ্ট ধরনের প্লাস্টিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। অতিরিক্ত কোনো পুষ্টি ছাড়াই প্লাস্টিক হজম করার ক্ষমতা রয়েছে এই ছত্রাকের। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোফাঙ্গির বেশ কয়েকটি প্রজাতি সম্পূর্ণরূপে সিনথেটিক পলিমারের ওপর জন্মাতে পারে। এই ছত্রাক কেবল টিকেই থাকে না, অন্য কোনো কার্বন উৎস ছাড়াই জৈব বস্তু তৈরি করতে পারে। জলজ পরিবেশে প্লাস্টিকের প্রাচুর্যের কারণে ছত্রাকেরা অভিযোজিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী হ্যান্স-পিটার গ্রোসার্ট বলেন, এসব ছত্রাক কেবল কিছু সিনথেটিক পলিমারের ওপর বৃদ্ধি পায়। জৈব বস্তুও তৈরি করতে পারে।

গবেষণায় ১৮টি ছত্রাকের মধ্যে ৪টিতে পলিউরেথেন ভাঙার তীব্র প্রবণতা দেখা গেছে। পলিউরেথেন সাধারণ প্লাস্টিক, যা নির্মাণসামগ্রী ও ফোমে ব্যবহৃত হয়। পলিথিন ও টায়ারের মতো শক্ত প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ছত্রাকটি কম কার্যকর। তবে মিঠাপানির এই ছত্রাক সরাসরি সমুদ্রে ব্যবহার করে প্লাস্টিক ধ্বংস করতে চান বিজ্ঞানীরা। যদিও প্লাস্টিক ক্ষয়কারী এনজাইম তাপমাত্রা ও পুষ্টির প্রাপ্যতার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। খোলা সমুদ্রের তুলনায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই ছত্রাক বেশ দক্ষ বলা যায়।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহৃত হয়। আর তাই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরেই প্লাস্টিক-ক্ষয়কারী জীবের সন্ধান পেতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে প্লাস্টিক খায় বা ধ্বংস করতে সক্ষম প্রায় ৪০০টির বেশি প্রজাতির ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করা হয়েছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এ ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ একাধিক আরব দেশ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই  গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ২১ জুলাই ২০২৫

ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহআয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ১৮ ঘণ্টা আগে

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।’

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।জ্যাঁ-নোয়েল বারো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আরও পড়ুনগাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান২২ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের স্নাইপাররা এমনভাবে গুলি ছুড়ছিলেন, যেন পশু শিকার করছেন: গাজার বাসিন্দা২১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ