হেরে গেলেন মা মাহরীন, জিতে গেলেন শিক্ষিকা মাহরীন : আসিফ আকবর
Published: 23rd, July 2025 GMT
মারা গেছেন ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর নিজেই দগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল না সরা এই শিক্ষিকা এখন দেশের মানুষের চোখে সাহসিকতার প্রতীক। মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীকে নিয়ে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর।
আসিফ আকবর তাঁর ফেসবকু পোস্টে লিখেছেন, ‘দৌড়াও, ভয় পেয়ো না, আমি আছি। প্রয়াত শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী নিজের দুই সন্তানের মায়া—নিজের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও অমোঘ মায়া। হেরে গেলেন মা মাহরীন, জিতে গেলেন শিক্ষিকা মাহরীন ম্যাডাম। জিতিয়ে গেলেন শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে।’
আসিফ লিখেছেন, ‘অনিয়মের দেশে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির চেয়ে আরও ভয়াবহ অনেক কিছুই চলে আসবে সামনে, আমাদের নিয়তি এমনই। ভবিষ্যতের আলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় নিজেই পরপারে চলে গেলেন ম্যাডাম মাহরীন চৌধুরী।’ এই সংগীতশিল্পীর কথায়, ‘নিয়তির নিষ্ঠুরতাকে ব্যতিক্রম প্রমাণ করে মা, বাবা, শিক্ষক—এই তিনে কোনো পার্থক্য রাখতে দেননি দ্য সিক্রেট সুপারস্টার ম্যাম মাহরীন। বিনম্র শ্রদ্ধা, শোক পরিণত হোক শক্তিতে। আকস্মিক ঝড়ে ঝরে যাওয়া সব ফুল প্রস্ফুটিত হোক জান্নাতের বাগানে, আমিন।’
আরও পড়ুনশিক্ষিকা ছিলাম, এই মৃত্যু সহ্য হচ্ছে না১৮ ঘণ্টা আগেপ্রসঙ্গত, ২১ জুলাই বেলা ১টার পর ঢাকার উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানে বহু স্কুলশিক্ষার্থী ছিল, যাদের বেশির ভাগই হতাহত হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহরীনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তার স্বামী মনসুর হেলাল। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি মাহরীনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না! সে বলেছিল, ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ইলস ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।