বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে ওরস্যালাইন আবিষ্কার। নামমাত্র খরচের এই ওষুধটি লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, এমনকি এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। কিন্তু ওরস্যালাইন খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম ও কোন সময়ে খেতে হবে, তা নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে দ্বিধা আছে। মনে রাখতে হবে, এটি একটি ওষুধ। এটি কোনো পানীয় নয়। শুধু পানিশূন্যতা দেখা দিলেই এটি খেতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘পানিশূন্যতা পূরণে ওরস্যালাইনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। ২৯ জুলাই বিশ্ব ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) দিবস। এ উপলক্ষে প্রথম আলো এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

ওরস্যালাইন তৈরিতে আইসিডিডিআরবির গবেষণা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। শিশুমৃত্য রোধে ওরস্যালাইনের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, ৪০ বছর আগে বিশ্বে বছরে ৪৫ লাখ শিশু মারা যেত, এখন তা কমে ৬ লাখে নেমেছে। এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে ওরস্যালাইন। শুধু ওরস্যালাইনই নয়, বাংলাদেশে জিংকের ওপর গবেষণা হয়। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে ১০ দিনের জন্য জিংক দেওয়া হলে সেই শিশুর ডায়রিয়ার তীব্রতা কমে যাবে। তিনি ওরস্যালাইনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বকে দেওয়া উপহার বলে উল্লেখ করেন।

৪০ বছর আগে বিশ্বে বছরে ৪৫ লাখ শিশু মারা যেত, এখন তা কমে ৬ লাখে নেমেছে। এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে ওরস্যালাইন। শুধু ওরস্যালাইনই নয়, বাংলাদেশে জিংকের ওপর গবেষণা হয়। তাহমিদ আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআরবি

আইসিডিডিআরবি অর্থাৎ সাবেক কলেরা হাসপাতাল বছরে দুই লাখের বেশি ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেয়। এসব রোগী দেখে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, ওরস্যালাইন যে একটি ওষুধ, তা অনেকে জানে না। সব ওষুধের পরিমাণ আছে। কিন্তু এই স্যালাইনের ক্ষেত্রে অনেকে তা মানে না। ওরস্যালাইন ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে, চিকিৎসা দেয়।

গোলটেবিলে সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিম উদ্দীন খান একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এতে তিনি ওরস্যালাইন কীভাবে জীবন রক্ষাকারী হয়ে উঠল, সে ইতিহাস উল্লেখ করেন। আইসিডিডিআরবি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ব্র্যাকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওরস্যালাইন এখন বাড়ির পাশে ছোট্ট দোকানেও পাওয়া যায়, যার দাম মাত্র ৬ টাকা। এসএমসির এই ওরস্যালাইন এখন দেশের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মহিউল ইসলাম বলেন, এখানে অর্জন আছে। কিন্তু এখনো কিছু জায়গায় কাজ করতে হবে। ওরস্যালাইন ঘরে বানানোর ক্ষেত্রে, খাওয়ার পরিমাণের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অনেক বড় অবকাঠামো রয়েছে। তাদের মাধ্যমে যারা পেছনে পড়ে আছে এবং সচেতনতার জন্য তাদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে হবে।

জনস্বাস্থ্যবিদ সুকুমার সরকার বলেন, আধা লিটার পানিতে এক মুঠো গুড় বা চিনি আর এক চিমটি লবণ মিশিয়ে ওরস্যালাইন বানানোর প্রচারণা থেকে এখন এটা প্যাকেটজাত হয়েছে। ঘরেই যে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা মানুষ জানতে শুরু করল। নানা বার্তা, প্রচারে ওরস্যালাইন সর্বত্র ছড়িয়ে যায়।

ডায়রিয়ার চিকিৎসার পাশাপাশি তা প্রতিরোধের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। তিনি বলেন, এর জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশনের মাধ্যমে ডায়রিয়া কমাতে হবে যেন ডায়রিয়া বারবার না হয়। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় এখন ত্রাণের মধ্যে ওরস্যালাইন একটি আবশ্যক আইটেম হিসেবে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার চেয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ে সাক্ষরতার ওপর জোর দেন আরেক জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, উন্নত দেশে স্কুল থেকেই এ ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয়।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তাহমিনা বেগম বলেন, ডায়রিয়া হলে শিশুরা অপুষ্টিতেও ভোগে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ সময় অনেকে শিশুর অন্যান্য খাবার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেটা করা যাবে না। বিশেষ করে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

ওরস্যালাইন একটু একটু করে মিশিয়ে খাওয়ান অনেকে। এ প্রসঙ্গে তাহমিনা বেগম বলেন, এতে লবণ ও পানির পরিমাণের অনুপাত নষ্ট হয়ে যায়। তাই এখন বাজারে যে প্যাকেট পাওয়া যায়, তা আধা লিটার পানিতে পুরোটা মিশিয়ে বয়স অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.

আবদুল মান্নান বলেন, শুধু ডায়রিয়া হলেই নয়, বমি হলেও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তখন ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। গর্ভধারণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নবজাতকের ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন খাওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে পরামর্শ মেনে পরিমিত খেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ওরস্যালাইন আবিষ্কারের অর্থনৈতিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, এখন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমেছে। প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। ওরস্যালাইনে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে তাতে ২০ ডলারের প্রভাব রয়েছে। যারা এখনো ওরস্যালাইনের সেবা পাচ্ছে না, সে জন্য স্কুল পর্যায়ে আরও ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের প্রধান আফসানা হাবিব শিউলী, আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী জোবায়ের চিশতি, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ইউনিসেফের স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ফিদা মেহরান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম খান, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার নূর–ই–নাজনীন ফেরদৌস প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব র স য ল ইন র প ন শ ন যত প রথম আল র অন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ