বাংলাদেশ ব্যাংক তার নারী ও পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী পোশাক পরবেন, কী পোশাক পরবেন না, তা ঠিক করে দিয়েছে—বুধবার এ–সংক্রান্ত সংবাদ দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আরও বেশি মতামতের ঝড় ওঠার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। সে কারণে কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই।

তবে পোশাক নিয়ে অগ্রহণযোগ্য নজির স্থাপনের যে চেষ্টা করা হলো, তা মনে অনেক আশঙ্কা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে, কেন, কার অঙ্গুলিহেলনে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন? বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কি না। কোনো অপশক্তির মদদ ছিল কি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অজান্তে যে কেউ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না। এসব প্রশ্ন থেকে যায়। যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তাঁরা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর আজ্ঞাবহ কি না, দেখা দরকার।

আরও পড়ুননারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক২৩ জুলাই ২০২৫

২৪ জুলাই প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর থেকে দেখা যায়, পোশাক নিয়ে ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ একটি সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তে নারী-পুরুষ—উভয়ের ক্ষেত্রে কি পোশাক পরতে হবে, কী পোশাক পরিহার করতে হবে বলা হলেও নারীর বিষয়টিই জোরালোভাবে উঠে এসেছে। নারীকে উদ্দেশ করেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল এটা স্পষ্ট। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সামাজিক সংগঠন নয়। একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ঢাকা ক্লাবের মতো উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের সামাজিক সংগঠনে ড্রেস কোড আছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আগে থেকেই পুরুষের ড্রেস কোড রয়েছে। বিভিন্ন দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ড্রেস কোড রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ‘শালীন’, ‘অশালীন’ এই প্রশ্নে যাওয়াই ঠিক হয়নি। এটা তো আপেক্ষিক বিষয়। একজনের কাছে যা ‘অশালীন’, অন্যের কাছে তা ‘শালীন’ হতে পারে। এ ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামাজিক–সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা উচিত।

সমালোচনার মুখে পরদিন (বৃহস্পতিবার) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিবৃতিটি পড়লে বোঝা যায়, যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁরা দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এটাকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সাফাই গাওয়ার সুযোগ নেই। সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে আশঙ্কা থেকে যায়, ভবিষ্যতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত আবারও চাপিয়ে দেওয়া হয় কি না।

আরও পড়ুনপোশাক নিয়ে সার্কুলারটি পরামর্শমূলক, কারও স্বাধীনতা খর্ব হবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক২৪ জুলাই ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সময়ে নারী-পুরুষের বিভাজন ও বৈষম্য আরও প্রকট করে তোলা কাম্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন বড় কাজ হচ্ছে বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকে যে আর্থিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা ঠিক করা। যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা। এ বিষয়গুলোতে এখন অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের।

দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী তাঁর মেধা ও শ্রম দিচ্ছেন, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। সেই নারীকে টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) করা হয়েছে এখানে। নারীর দৃশ্যমান অগ্রযাত্রাকে লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। যে নারী ফুটবলাররা দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন, তাঁদেরও কি আমরা ‘অশালীন’ পোশাকের অজুহাত দিয়ে ঘরবন্দী করে ফেলব! আজ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দুই দিন পর হয়তো ব্যাংকের গ্রাহকদের ড্রেস কোড নিয়েও কথা উঠতে পারে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের টাকা তুলতে ব্যাংকে তাঁদের স্বজনেরা অনেক সময় লুঙ্গি, স্যান্ডেল পরে যান। তাঁদের কী করবেন? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কি ব্যাংক থেকে বের করে দেবে?

আরও পড়ুনসমালোচনার মুখে পোশাক নিয়ে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ ব্যাংক২২ ঘণ্টা আগে

সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এ বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের গোচরীভূত হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক বিষয়টি এ মুহূর্তে প্রত্যাহার করা হলো।’ এটা আমাদের আশা জাগায় যে ব্যাংকে একজন প্রগতিশীল গভর্নর রয়েছেন। তিনি ব্যাংকিং খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর মতো আরও অনেক ব্যক্তি বা কর্মকর্তা হয়তো ব্যাংকে রয়েছেন। তাঁরা আছেন বলে আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে ব্যাংকে নারীর প্রতি বৈষম্য-বিভাজনের এ ধরনের নেতিবাচক নজির স্থাপনের চেষ্টা আর কখনো হবে না।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ কেন এমন নির্দেশনা দিয়েছিল, তা দেখার বিষয়১৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প শ ক পর এ ধরন র হ র কর আরও প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ