গরিবদের নিয়ে চিন্তা নেই সরকারের, ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশনের দাবি
Published: 26th, July 2025 GMT
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ বেশি প্রাণ হারিয়েছে ও স্বজন হারিয়েছে। কিন্তু সেই শ্রেণির মানুষকে এখনো নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়ানো সরকারের গরিবদের নিয়ে চিন্তা নেই। গরিবদের জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভূমিহীন-কৃষক-জেলে-সাঁওতাল সমাবেশে এ কথাগুলো বলা হয়। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন ও সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হওয়ার পরও সাধারণ মানুষকে এখনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এটা আশ্চর্যের ব্যাপার। তিনি বলেন, এ অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন শ্রমজীবী মানুষ। এরপরে আছেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষার্থীরাও সাধারণ পরিবারের সন্তান। অর্থাৎ এই শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ মানুষের সন্তানের রক্তের ওপর দাঁড়ানো এ সরকার। তাদের প্রথম কাজ ছিল যাঁদের রক্তের বিনিয়ে এ সরকার, তাঁদের দাবিগুলো পূরণ করা।
২০১৬ সালে সাঁওতালদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা এখনো রয়ে গেছে উল্লেখ করে বলেন, সেখানে পুলিশের গুলিতে সাঁওতালরাই মারা যায়।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে কোনো আন্দোলনে বিজয়ের পর সবার আগে বিজয়ীরা দখল করে লাশ, ইতিহাস ও ইতিহাসের মালিকানা। এ দেশে যতবার মানুষ আন্দোলন করেছে, বিজয়ী হয়েছে, ততবার কোনো না কোনো গোষ্ঠী , কোনো দল আন্দোলনের ফলকে দখল করেছে। এবারও তারা শহীদদের মালিকানা নিয়েছে, জুলাইয়ের মালিকানা নিয়েছে। রাষ্ট্রের পাচার ও লুট হওয়া ফেরত আসা অর্থ গরিবদের পুঁজি হিসেবে বিনা সুদে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে বেশ কিছু দাবির কথা জানানো হয়। এগুলো হলো, ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন গঠন, উন্নয়নের নামে তিন ফসলের জমিতে ইপিজেড না করা, বাগদা ফার্মের প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া, খাসজমি ভূমিহীনদের এবং হাওর এবং চলনদী জেলেদের জন্য বরাদ্দ, রাষ্ট্রের সংস্কার ছাড়া কোনো প্রকার নির্বাচন না করা।
সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, সাবেক ডিআইটি এবং বর্তমান রাজউক রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের কথা বলে গরিবদের জমি দখল করে নামকাওয়াস্তে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়। সেই জমি সচিবদের কাছে বিলি করে। উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জে এভাবে জমি নেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের রাষ্ট্রীয় নীতি সে প্রশ্ন তোলেন।
এই আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী বলেন, এ দেশে কেউ ভূমিহীন হলে নাগরিক হয় কী করে। গাইবান্ধায় যেসব জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের মাথার ওপর প্লাস্টিক। এত বছর পার হলো, এই সরকারের ১০ মাস গেল কিন্তু সরকারের একবারও মনে হয়নি, প্লাস্টিক সরিয়ে টিন দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার কথা। সরকার বড়োলোকি চিন্তা নিয়ে সরকার চালাচ্ছে, গরিবদের নিয়ে চিন্তা নেই।
গাইবান্ধায় ইপিজেড তৈরির পরিকল্পনার সমালোচনার করে এই আইনজীবী বলেন, নতুন নাটক শুরু হয়েছে গাইবান্ধায়। ইপিজেড তৈরির নাম করে এমন একটি শ্রেণি, এমন একটি পরিচয়ের রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিরা এখন দালালি, ধান্দাবাজি শুরু করেছে, তা কল্পনাতে ছিল না। গত সরকারের আমলেও সুযোগসন্ধানীরা এমনটা করেছে। সেটা থামানো গিয়েছিল। কিন্তু আবারও এক শক্তি সেই ইপিজেডের গল্প শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল আলমের সঞ্চালনা ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সমন্বয়ক সোহেল শিকদার, লেখক-কলামিস্ট নাহিদ হাসান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে ৪ আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে রিট
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করার নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা ছাত্রলীগ নেতার রিট বাতিল
বাগেরহাট প্রেস ক্লাব ও অন্যান্যদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন রিট পিটিশন দাখিল করেন। এছাড়া চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট ১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল একই বিষয়ে পৃথক রিট পিটিশন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “আমরা রিট পিটিশন করেছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন এবং ১০ দিনের রুল জারি করেছেন। আশা করি, আদালতে ন্যায়বিচার পাব এবং বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল থাকবে।”
গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেয় তারা।
তবে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) নির্ধারণ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল