চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ বেশি প্রাণ হারিয়েছে ও স্বজন হারিয়েছে। কিন্তু সেই শ্রেণির মানুষকে এখনো নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়ানো সরকারের গরিবদের নিয়ে চিন্তা নেই। গরিবদের জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন করতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভূমিহীন-কৃষক-জেলে-সাঁওতাল সমাবেশে এ কথাগুলো বলা হয়। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন ও সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হওয়ার পরও সাধারণ মানুষকে এখনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এটা আশ্চর্যের ব্যাপার। তিনি বলেন, এ অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন শ্রমজীবী মানুষ। এরপরে আছেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষার্থীরাও সাধারণ পরিবারের সন্তান। অর্থাৎ এই শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ মানুষের সন্তানের রক্তের ওপর দাঁড়ানো এ সরকার। তাদের প্রথম কাজ ছিল যাঁদের রক্তের বিনিয়ে এ সরকার, তাঁদের দাবিগুলো পূরণ করা।

২০১৬ সালে সাঁওতালদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা এখনো রয়ে গেছে উল্লেখ করে বলেন, সেখানে পুলিশের গুলিতে সাঁওতালরাই মারা যায়।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে কোনো আন্দোলনে বিজয়ের পর সবার আগে বিজয়ীরা দখল করে লাশ, ইতিহাস ও ইতিহাসের মালিকানা। এ দেশে যতবার মানুষ আন্দোলন করেছে, বিজয়ী হয়েছে, ততবার কোনো না কোনো গোষ্ঠী , কোনো দল আন্দোলনের ফলকে দখল করেছে। এবারও তারা শহীদদের মালিকানা নিয়েছে, জুলাইয়ের মালিকানা নিয়েছে। রাষ্ট্রের পাচার ও লুট হওয়া ফেরত আসা অর্থ গরিবদের পুঁজি হিসেবে বিনা সুদে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে বেশ কিছু দাবির কথা জানানো হয়। এগুলো হলো, ভূমি ও কৃষি সংস্কার কমিশন গঠন, উন্নয়নের নামে তিন ফসলের জমিতে ইপিজেড না করা, বাগদা ফার্মের প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া, খাসজমি ভূমিহীনদের এবং হাওর এবং চলনদী জেলেদের জন্য বরাদ্দ, রাষ্ট্রের সংস্কার ছাড়া কোনো প্রকার নির্বাচন না করা।

সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, সাবেক ডিআইটি এবং বর্তমান রাজউক রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের কথা বলে গরিবদের জমি দখল করে নামকাওয়াস্তে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়। সেই জমি সচিবদের কাছে বিলি করে। উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জে এভাবে জমি নেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের রাষ্ট্রীয় নীতি সে প্রশ্ন তোলেন।

এই আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী বলেন, এ দেশে কেউ ভূমিহীন হলে নাগরিক হয় কী করে। গাইবান্ধায় যেসব জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের মাথার ওপর প্লাস্টিক। এত বছর পার হলো, এই সরকারের ১০ মাস গেল কিন্তু সরকারের একবারও মনে হয়নি, প্লাস্টিক সরিয়ে টিন দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার কথা। সরকার বড়োলোকি চিন্তা নিয়ে সরকার চালাচ্ছে, গরিবদের নিয়ে চিন্তা নেই।

গাইবান্ধায় ইপিজেড তৈরির পরিকল্পনার সমালোচনার করে এই আইনজীবী বলেন, নতুন নাটক শুরু হয়েছে গাইবান্ধায়। ইপিজেড তৈরির নাম করে এমন একটি শ্রেণি, এমন একটি পরিচয়ের রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিরা এখন দালালি, ধান্দাবাজি শুরু করেছে, তা কল্পনাতে ছিল না। গত সরকারের আমলেও সুযোগসন্ধানীরা এমনটা করেছে। সেটা থামানো গিয়েছিল। কিন্তু আবারও এক শক্তি সেই ইপিজেডের গল্প শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল আলমের সঞ্চালনা ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সমন্বয়ক সোহেল শিকদার, লেখক-কলামিস্ট নাহিদ হাসান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার

যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর। 

অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।

অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।

এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে। 

এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর। 

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”

ঢাকা/রিটন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সভাপতি পদে বিএনপি, সাধারণ সম্পাদক পদে জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত
  • স্ত্রী জন্মগতভাবে পুরুষ ছিলেন না প্রমাণে আদালতে প্রমাণ হাজির করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: নাহিদের জবানবন্দি পেশ
  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট